চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরব অবদান

চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরব অবদান

চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরব অবদান

চৌধুরী আতিকুর রহমান : হার্ভের ৩০০ বছর আগে রক্ত সংবহন নিয়ে বলেছিলেন আন নাফিস। ১৯২৪ সালে মিশরীয় চিকিৎসক মহিউদ্দিন আততাবি জার্মানির অ্যালবার্ট লুডউইগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরব চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর গবেষণা করছিলেন, সেইসময় বার্লিনের প্রুশিয়ান স্টেট লাইব্রেরিতে একটি বই দেখতে পান। বইটির নাম ছিল ‘ইবন সিনার কানুনের অ্যানাটমির উপর মন্তব্য’। বইটিতে একই সঙ্গে শারীর বিদ্যা, শারীরস্থান বিদ্যা এবং রোগনির্ণয় বিদ্যার বিস্তারিত আলোচনা রযেছে। এই বইটিই আন নাফিসের যুগান্তকারী তথ্য ফুসফুসীয় রক্তসংবহন ও হৃদপিন্ডীয় রক্তসংবহন পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এই তথ্যটি প্রকাশ করে।

আন নাফিস গ্যালেনের তথ্যের উপর ভিত্তি করে শারীরস্থানীয় ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন, ‘হৃদপিন্ডের রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি ও ফুসফুসের রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। হৃদপিন্ডের ডান প্রকোষ্ঠের রক্ত বাম প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে কিন্তু তাদের মধ্যে সরাসরি কোন সংযোগ নেই। হৃদপিন্ডের মোটা ব্যবধায়ক প্রাচীরের মধ্যে কোন ছিদ্র নেই। যেমন অনেকে বলেন দৃশ্যমান ছিদ্রযুক্ত, গ্যালেন বলেন অদৃশ্য ছিদ্রযুক্ত, কিন্তু তা নয়। রক্ত হৃদপিন্ডের ডান প্রকোষ্ঠ থেকে ফুসফুসীয় ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে আসে। সেখানে ছড়িয়ে পড়ে বাতাসের সঙ্গে মিশ্রিত হয়। তারপর ফুসফুসীয় শিরার মাধ্যমে হৃদপিন্ডের বাম প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে এবং সেখানে জীবন রক্ষক শক্তি তৈরি করে’।

তিনি এই বইয়ের অন্যত্র লিখেছেন, ‘হৃদপিন্ডের মাত্র দুটি নিলয় এবং এই দুই নিলয়ের মধ্যে কোনরকম ছিদ্র নেই। এছাড়াও ব্যবচ্ছেদ দ্বারা দেখা যায় যে, এই দুটি গহ্বরের মধ্যে যে ব্যবধায়ক প্রাচীর তা হৃদপিন্ডের অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশ মোটা। এই রক্তের (দক্ষিণ অলিন্দের ভিতরের রক্ত) সুবিধা হলো, ফুসফুস পর্যন্ত পৌঁছায়, ফুসফুসের বাতাসের সঙ্গে মেশে, তারপর ফুসফুসীয় শিরার মাধ্যমে বাম নিলয়ে পৌঁছায়’।

ফুসফুসের শরীরস্থান বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ফুসফুস কয়েকটি অংশ নিয়ে তৈরী- ‘প্রথমটি হল ক্লোম শাখা, দ্বিতীয় ফুসফুসীয় শিরা ও ধমনীর শাখা প্রশাখা, যেগুলি আলগা ছিদ্রযুক্ত মাংসল বস্তুর সঙ্গে যুক্ত’।

এই মাংসল থলেগুলোকে বলা হয় অ্যালভিওলাস। এখানেই অক্সিজেন সমৃদ্ধ ও কার্বন ডাই অক্সাইড সমৃদ্ধ রক্তের আদান-প্রদান হয়। এরপর তিনি যুক্ত করেছেন,
‘হার্টের ভিতরের পাতলা ও উষ্ণ রক্ত ফুসফুসীয় ধমনি দ্বারা পরিবাহিত হয়ে ফুসফুসে পৌঁছায, সেখানে গিয়ে শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে রক্ত বায়ুথলির মধ্যে অল্প অল্প করে প্রবেশ করতে থাকে, সেখানকার বাতাসের সঙ্গে মেশে এবং এই মিশ্রণ শক্তিতে পরিণত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুনরায় বাম প্রকোষ্ঠে ফিরে আসে। মিশ্রণটি বাম প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে ফুসফুসীয় শিরার মাধ্যমে’।

আন নাফিসের আরও একটি কাজ যা খুব কম আলোচিত হয়। সেটি হল হৃদপিন্ডের নিজস্ব রক্ত সংবহন। এ সম্পর্কে আন নাফিস বলেছেন, হৃদপিন্ডের পুষ্টির জন্য হৃদপিন্ডের গায়ে লেগে থাকা রক্তবাহগুলির অভ্যন্তরের রক্তই দায়ী।

তাই সিদ্ধান্তে আসা যায় হৃদপিন্ডের নিজস্ব রক্ত সংবহনের কথা প্রথম বলেছিলেন ইবন আন নাফিস।

আন নাফিস ১২৮৮ খ্রিস্টাব্দে কায়রো শহরে প্রাণ ত্যাগ করেন।

লেখক : পশ্চিম বাংলার কলামিস্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *