ঢাকায় বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ১১.০৮ শতাংশ : ক্যাব

ঢাকায় বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ১১.০৮ শতাংশ : ক্যাব

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সদ্য সমাপ্ত বছর ২০২২ সালে বাংলাদেশে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ১১.০৮ শতাংশ হয়েছে বলে জানিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে প্রায় ১৭টি পণ্য সরাসরি অবদান রেখেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

শনিবার (২১ জানুয়ারি) ‘২০২২ সালে ঢাকা মেগাসিটিতে মূল্যস্ফীতির চাপ ক্যাব এর মূল পরিবীক্ষণ উপাত্ত থেকে প্রাপ্ত ফলাফল’ প্রকাশ করা হয়। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জন্য ফলাফলটি তৈরি করেছেন ড. মাহফুজ কবীর। ক্যাব ঢাকা মেগাসিটি (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নিয়ে গঠিত) জুড়ে ১১টি বাজার থেকে মাসিক দামের তথ্য সংগ্রহ করে। দৈনিক দাম পর্যবেক্ষণে ১৪১টি খাদ্য সামগ্রী, ৪৯টি খাদ্য-বহির্ভূত পণ্য এবং ২৫টি পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

ড. মাহফুজ কবীর জানান, ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালের পর গত বছরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। শহরের এবং গ্রামীণ উভয় মূল্যস্ফীতিই বেড়েছে, যা বাংলাদেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের দুর্দশা বাড়িয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও মন্দাভাব সৃষ্টি হয়েছে এবং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ মানুষের প্রকৃত আয় এবং পারিবারিক কল্যাণ হ্রাস করে। এটি বেতনভোগী নিম্ন-মধ্যম এবং মধ্যম আয়ের পরিবারের দুর্দশা বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি জানান, পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে। যেমন— চাল, আটা, ডাল, বেকারি পণ্য, চিনি, মাছ, ডিম, দেশি মুরগি, ভোজ্যতেল, আমদানি করা ফল, চা/কফি, স্থানীয় এবং আমদানি করা দুধ, পরিষ্কার/পরিচ্ছন্নতা, ধোয়া এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সামগ্রী এবং পরিবহন খরচ।

তিনি বলেন, ঢাকা মেগাসিটিতে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ২০২২ এর প্রথম মাসের তুলনায় বেশি ছিল (১১.০৮ শতাংশ)। যদিও গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি খাদ্য-বহির্ভূত অংশের তুলনায় কম ছিল (যথাক্রমে ১০.০৩ এবং ১২.৩২ শতাংশ), উভয়ই দুই অংক স্পর্শ করেছে। তবে, সাধারণ পরিবারের তুলনায় নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর গড় মূল্যস্ফীতির চাপ (৯.১৩ শতাংশ) কম ছিল। বার্ষিক খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির তুলনায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি (যথাক্রমে ১০.৪১ এবং ৭.৭৬ শতাংশ) কম ছিল। যদিও উভয় শ্রেণির পণ্য ও সেবা মৌলিক প্রকৃতির ছিল। এছাড়াও মৌসুমি প্রভাব এবং বাজারে সরবরাহের পর্যাপ্ততার কারণে কিছু খাদ্যদ্রব্যের দাম ওঠানামা করে। ভোগের ঝুড়িতে খাদ্য-বহির্ভূত পণ্য ও সেবার অংশ খাদ্যপণ্যের তুলনায় কম ছিল। খাদ্য-বহির্ভূত জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি বেশিরভাগই স্থায়ী প্রকৃতির ছিল। তাই খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি খাদ্য মূল্যস্ফীতির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল।

মূল্যস্ফীতির প্রবণতা বিশ্লেষণের আলোকে নীতিগত সুপারিশের প্রস্তাব করেছে ক্যাব। সুপারিশে ক্যাব জানায়, সরকার দরিদ্র ও দুস্থ জনগোষ্ঠীর ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর জন্য ভর্তুকি যুক্ত খাদ্য সহায়তা এবং সামাজিক সুরক্ষার অধীনে সহায়তা বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে রক্ষা করতে সরকারের শহরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা স্কিম বাড়ানো উচিত। সরকার কোভিড-১৯ এর সময় ওএমএস কার্যক্রমকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। যা এই ভোক্তা গোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক শ্লথগতি এবং মূল্যবৃদ্ধির দুর্দশা থেকে রক্ষা করার জন্য ২০২২ সালে আরও প্রসারিত করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত উচ্চ চাহিদার বিপরীতে ওএমএস এর মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহের অপর্যাপ্ততা এবং নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ওএমএস এর খাদ্যপণ্যের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিবীক্ষণের অভাব রয়েছে।

সুপারিশে আরও জানানো হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে নিম্নআয়ের পরিবারগুলোকে পর্যাপ্তভাবে কভার করার জন্য যথাযথ পরিবীক্ষণের সঙ্গে ওএমএস স্কিমকে শক্তিশালী করা উচিত। ন্যূনতম টার্গেটিং ত্রুটির অত্যধিক লক্ষ্যসহ সারা বাংলাদেশে এক কোটি পরিবারের খাদ্য সহায়তা বৃদ্ধি করা উচিত। দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতাও বাড়াতে হবে। এছাড়াও, অস্থায়ীভাবে আওতা বাড়ানোর মাধ্যমে খাদ্য, খাদ্য-বহির্ভূত মৌলিক পণ্য এবং দুস্থ জনগোষ্ঠীর কাছে নগদ হস্তান্তর কর্মসূচি বৃদ্ধি করা উচিত। যেহেতু গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর তুলনায় শহুরে জনগোষ্ঠী মূল্যস্ফীতির কারণে বেশি চাপ এবং অসহায়ত্বের সম্মুখীন হয়, তাই সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করার মাধ্যমে শহুরে নিম্নআয়ের মানুষের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।

এছাড়া, শহুরে নিম্ন-মধ্যম এবং মধ্যম আয়ের পরিবারের জন্য বিশেষ সামাজিক সুরক্ষা স্কিম তৈরি করা উচিত, যাতে তারা সফলভাবে মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। মৌলিক জ্বালানি পণ্য, বিশেষ করে ডিজেলের ওপর আবার ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে। কারণ এটি সেচ এবং জনসাধারণ এবং পণ্য পরিবহন খরচের একটি বড় অংশ নির্ধারণ করে। অন্যান্য আমদানি করা জ্বালানি পণ্যের জন্য স্বয়ংক্রিয় মূল্যপ্রবাহ এবং সমন্বয় ব্যবস্থাপনা করা উচিত। তবে অদূর ভবিষ্যতে খুচরা বা গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো উচিত হবে না, কেননা শিল্প পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব এখনই পড়তে শুরু করেছে। এছাড়া খাদ্য উৎপাদন খরচ কমাতে সৌর সেচ দ্রুত সম্প্রসারিত করতে হবে বলে জানায় ক্যাব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *