ঢাকায় মিশন নেই, ভিসা ভোগান্তিতে বাংলাদেশিরা

ঢাকায় মিশন নেই, ভিসা ভোগান্তিতে বাংলাদেশিরা

পাথেয় ডেস্ক : ঢাকায় বিভিন্ন দেশের মিশন না থাকায় ভিসা ভোগান্তিতে পড়ছেন বাংলাদেশিরা। বিশেষ করে ঢাকায় বিভিন্ন দেশের মিশন না থাকায় ভিসা নিতে যেতে হচ্ছে দিল্লীতে। আবার কোন কোন দেশের ভিসা নেয়ার ক্ষেত্রে যেতে হচ্ছে সুদূর কলম্বোতেও। তবে কবে নাগাদ এই ভিসা সমস্যার সমাধান হবে, সেটা কেউ বলতে পারছেন না।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এখন বিদেশি দূতাবাস ও হাইকমিশনের সংখ্যা প্রায় ৫০টি। আর অনারারি কনস্যুলেট অফিস রয়েছে আরও ৩৯টি দেশের। তবে সাধারণত কোন অনারারি কনস্যুলেট অফিস ভিসা ইস্যু করে না। এই ৫০টি মিশনের বাইরে কোন দেশের ভিসা নিতে হলে, দেশের বাইরে যেতে হয়। বিশেষ করে দিল্লীতে যেতে হয়। দিল্লীতে বিদেশী মিশনের সংখ্যা ১৫১টি। ফলে বেশিরভাগ দেশের ভিসা দিল্লী থেকেই নেয়ার প্রয়োজন হয়। আবার দিল্লীতে কোন কোন দেশের মিশন থাকলেও ভিসা নিতে হয়, অন্য কোন দেশ থেকে। দিল্লী থেকে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও মিশন বাংলাদেশকে ভিসা দিয়ে থাকে। সেখানের প্রায় ৩২টি দেশের অনাবাসী রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে নিযুক্ত রয়েছেন। এসব অনাবাসী রাষ্ট্রদূত কখনও কখনও বাংলাদেশে আসেন। তখনও ভিসা সমস্যার বিষয়টি তাদের কাছে তুলে ধরা হয়।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে যেসব দেশের দূতাবাস নেই, সেসব দেশে যেতে হলে অনেকেই কঠিন সমস্যায় পড়েন। কেননা ভিসা নিতে গেলে প্রথমে যেতে হবে দিল্লীতে। তারপর সেখান থেকে অপর দেশের ভিসা নিতে হবে। সে কারণে প্রথমে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। তারপর ভিসা পাওয়ার পরে যেতে হবে দিল্লীতে। সেখানে আবেদনের পরে কোন কোন দূতাবাসের ভিসা পেতে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশে সেমিনার ও কনফারেন্সে যেতে হলে, নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে ভারতের ভিসা নেয়ার পর, দিল্লীতে গিয়ে ভিসা নেয়ার মতো আর সময় থাকে না। ফলে অনেকেই ভিসা সংগ্রহ করতে পারেন না। দিল্লীতে গিয়ে ভিসা নেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যাও রয়েছে। কোন কোন দূতাবাস অতিরিক্ত কোন ডকুমেন্ট চাইলে, সেসব ডকুমেন্ট অনেক সময় ভিসা প্রার্থীর কাছে থাকে না। সেই ডকুমেন্ট আবার ঢাকা থেকে নিয়ে আসতে হয়। এ জন্য দিল্লীতে অনেক দিন ধরেই অপেক্ষা করতে হয়। আবার কেউ কেউ একেবার সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে রওনা দেন দিল্লীতে। দিল্লী থেকে ভিসা পাওয়ার পর সেখান থেকেই পাড়ি দেন বিদেশে।

সূত্র জানায়, দিল্লীতে বাংলাদেশে নিযুক্ত অনাবাসী রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার রয়েছেন ৩২ জন। দিল্লীতে বাংলাদেশের জন্য নিযুক্ত রয়েছে যেসব দেশ তার মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, কম্বোডিয়া, চিলি, কলম্বিয়া, কিউবা, সাইপ্রাস, ফিনল্যান্ড, গুয়েতেমালা, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, মরিশাস, ম্যাক্সিকো, প্যারাগুয়ে, পেরু, পর্তুগাল, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, সাউথ আফ্রিকা, সিরিয়া, তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা, ইয়েমেন ইত্যাদি দেশ রয়েছে। সাউথ আফ্রিকা ছাড়া এসব দেশের ভিসা নিতে গেলে দিল্লীতে যেতে হয় বাংলাদেশিদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সশরীরে উপস্থিত থেকে ভিসা নিতে হয়। তবে দুই একটি দেশ সশরীরে উপস্থিত না হলেও যথাযথ কাগজপত্রের ভিত্তিতেও ভিসা দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে কোন ভিসা এজেন্টের মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহ করতে পারেন বাংলাদেশিরা। তবে বাংলাদেশিরা সাউথ আফ্রিকা যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা নেয়ার ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন। সাউথ আফ্রিকার দূতাবাস দিল্লীতে থাকলেও ভিসা নিতে হয় শ্রীলঙ্কার সাউথ আফ্রিকার দূতাবাস থেকে। সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে দিনে দিনে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াত বাড়লেও ভিসা সমস্যা অনেক বেশি। কেননা কোন বাংলাদেশি সহজে দিল্লীতে যেতে পারলেও শ্রীলঙ্কা যেতে পারেন না। ঢাকা-কলম্বো বিমান ভাড়া খুব বেশি। এই বিমান ভাড়া দিয়ে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে সাউথ আফ্রিকার ভিসা নেয়া অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। আবার সেখানে গিয়ে ভিসা মিলবে, এমন কোন নিশ্চয়তাও নেই। তবে সাউথ আফ্রিকার ভিসা নেয়ার জন্য শ্রীলঙ্কায় সশরীরে উপস্থিত হওয়ার জন্য কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ঢাকার কোন ভিসা এজেন্টের মাধ্যমেও সাউথ আফ্রিকার ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। তবে ভিসা এজেন্টরা এ ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ নিয়ে থাকে। যেটা একজন ভিসা প্রার্থীর জন্য অনেক বেশি।

এদিকে দিল্লীতে আরও অনেক দেশের মিশন রয়েছে, এসব মিশনে বাংলাদেশের জন্য অনাবাসী রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার নেই। তবে এসব মিশন থেকে বাংলাদেশিদের ভিসা দেয়া হয়। বিশেষ করে পর্যটনের জন্য উজবেকিস্তানে গিয়ে থাকেন অনেক বাংলাদেশি। তবে উজবেকিস্তানের ভিসা নিতে হয় দিল্লীর উজবেকিস্তান দূতাবাস থেকে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডে গিয়েও বাংলাদেশিরা অন্য দেশের ভিসা নিয়ে থাকেন। বিশেষ করে লাওস ও কম্বোডিয়া ভ্রমণের ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডে নিযুক্ত দেশ দুটির দূতাবাস থেকে ভিসা নিয়ে থাকেন। এছাড়া লিসবনে বাংলাদেশ দূতাবাস থাকলেও ঢাকায় পর্তুগাল দূতাবাস না থাকায় পর্তুগাল প্রবাসী বাংলাদেশীদের পরিবার-পরিজনদের দৌড়ঝাঁপ করতে হয় ভিসার জন্য দিল্লীতে। এতেও অর্থ ও সময় অপচয়ের সঙ্গে পদে পদে পোহাতে হয় ভোগান্তি। এ বিষয়ে পর্তুগালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন,
বাংলাদেশীদের পরিবার-পরিজনরা যাতে কোন প্রকার ভোগান্তি ছাড়া ভিসা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রক্রিয়া ঢাকা থেকেই সম্পন্ন করতে পারেন, সে জন্য পর্তুগিজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চারটি বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। প্রথমত ঢাকায় তাদের দূতাবাস খোলার ব্যাপারেটি। যদি পূর্ণাঙ্গ মিশন চালু করা সম্ভব না হলে অন্তত একটি কনস্যুলেট অফিস খোলা। তবে অচিরেই কনস্যুলেট অফিস খোলা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ।

ঢাকায় মিশন থাকলেও ভিসা সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের ভিসার ক্ষেত্রে এই সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। যুক্তরাজ্যের ঢাকায় মিশন থাকলেও ভিসার বিষয়টি দেখভাল করছে, দেশটির দিল্লীর মিশন। যুক্তরাজ্যের ভিসা আবেদন বাংলাদেশ থেকে করা সম্ভব হলেও ভিসার নিয়ন্ত্রণ করছে যুক্তরাজ্যের দিল্লী অফিস। সে কারণেও ভিসা সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। তবে ঢাকার যুক্তরাজ্য হাইকমিশন থেকে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকার খরচ কমিয়ে নিয়ে আসার জন্যই এই ব্যবস্থা চালু করেছে। এতে ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে কোন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেও ব্যাখ্যা দিয়েছে যুক্তরাজ্য হাইকমিশন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যেসব দেশের মিশন নেই, এমন বেশিরভাগ দেশেরই দিল্লীতে মিশন রয়েছে। এসব দেশ দিল্লী থেকেই দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের ভিসা দিয়ে থাকে। তবে ঢাকায় মিশন খোলার জন্য সেসব দেশের আর্থিক সামর্থ্যরে বিষয়টিও জড়িত। ঢাকায় বিভিন্ন দেশের মিশন খোলার বিষয়ে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও তারা জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *