ত্রিপুরায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে গুলিবিদ্ধ ৬

ত্রিপুরায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে গুলিবিদ্ধ ৬

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বিজেপিশাসিত ত্রিপুরায় ব্যাপক বিক্ষোভ মোকাবিলায় পুলিশের গুলিতে ছয়জন উপজাতীয় তরুণ আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে নর্থ-ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের (নেসো) ডাকা বনধকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ত্রিপুরার জিরানিয়া এলাকা উত্তাল হয়ে ওঠে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের দাবিতে জিরানিয়া মহকুমার দশরামবাড়ি এলাকায় বনধকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়।

এদিন আইএনপিটি, আইএনএফটি ও আইপিএফটি তিপ্রহা গোষ্ঠী বনধে শামিল হয়। মারমুখী বনধ সমর্থকরা গাড়ি ভাঙচুর ও দোকানে আগুন ধরিয়ে দিলে পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপসহ গুলিবর্ষণ করলে কমপক্ষে ১৭ জন আহত হয়। বনধ সমর্থকদের পাথর নিক্ষেপে দীনেশ কুমার নামে এক টিআরএস জওয়ানও আহত হন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আধাসামরিক বাহিনী সিআরপিএফ জওয়ানদের মাঠে নামতে হয়।

পুলিশের গুলিতে আহত হন সোমেন দেববর্মা, প্রহর দেববর্মা, শঙ্কর দেববর্মা, রবি কুমার দেববর্মা, সুমিত দেববর্মা ও ললিত দেববর্মা। আহতদের জি বি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিন বনধ সমর্থকরা গুলটি, তীর, টাক্কাল ইত্যাদি নিয়ে পথে নেমেছিলেন।

বনধ পালন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এভাবে গুলি চালানোর ঘটনা রাজ্যের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন আই এনপিটি’র সাধারণ সম্পাদক জগদীশ দেববর্মা। ত্রিপুরার বিরোধী দলনেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার হাসপাতালে আহতদের খোঁজখবর নেয়ার পরে সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসনকে মাথা ঠাণ্ডা রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা উচিত ছিল।

পুলিশের ডিআইজি অরিন্দম নাথ বলেন, পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় সেজন্য আগে থেকেই বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। কিন্তু আচমকা বনধ সমর্থকরা মারমুখী হয়ে ওঠে।

অন্যদিকে, অসমের ডিব্রুগড়ে বনধ সমর্থকদের পুলিশকে শূন্যে গুলিবর্ষণ করতে হয়। ডিব্ৰুগড়ে বিজেপি দফতরে ভাঙচুর করার অভিযোগ পুলিশ ১৪ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।

এদিকে বিরোধীদের তুমুল বিরোধিতা সত্ত্বেও মঙ্গলবার ‘ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব’ বিলটি লোকসভায় পাস হয়ে গেছে। বিরোধীদের দাবি, বিলটি ভারতীয় সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থি। লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে অত্যাচারিত হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পার্সিদের যাওয়ার জায়গা বলতে ভারত। সেই কারণেই এই সংশোধনী আনা হচ্ছে।

অসমের কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈয়ের মতে, অসমের জনমতকে উপেক্ষা করে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করার ফলে ‘স্বাধীন অসম’-এর দাবি তোলার পথ প্রশস্ত হচ্ছে।

অসমের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হীরেন গোঁহাইয়ের মতে, অসমবাসীকে এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার দাবি না মানলে স্বাধীন অসমের কথা চিন্তা করতে হবে।’

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (২০১৬) আইনে পরিণত হলে ১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন হয়ে যাবে। এরফলে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ এবং পার্সি ধর্মের মানুষজন ধর্মীয় সহিংসতার শিকার হয়ে কেউ ভারতে চলে এলে ভারতে তারা নাগরিকত্ব পাবেন। এই বিল পাস হওয়ার ফলে বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ অসমসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে আশ্রয় নিতে পারেন বলে অসমের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন মনে করছে। বিলটি ১৯৮৫ সালের অসম চুক্তির বিরোধী বলেও তাঁরা বলছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *