পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোতে থাকা অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বৈদেশিক মিশনগুলোকে ব্যয় সংকোচন এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়াতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, চাপে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বাড়াতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোর কাছে থাকা যেসব বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়নি, সেগুলো দ্রুত দেশে ফেরত পাঠাতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোর কাছে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এরইমধ্যে কয়েকটি মিশন তাদের কাছে থাকা অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা ফেরত পাঠিয়েছে। সরকারের পক্ষে সব লেনদেন যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক করে থাকে, তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবেই এসব অর্থ জমা দিচ্ছে বিদেশে অবস্থিত মিশনগুলো।
গত ৫ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ৯৭ হাজার ৪৬১ পাউন্ড জমা করা হয়েছে। ওই অর্থ বুঝে পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সমপরিমাণ স্থানীয় মুদ্রা অর্থাৎ ১ কোটি ১৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা (প্রতি পাউন্ড ১২০ টাকা হিসাবে) সরকারি ট্রেজারিতে জমা করা হয়েছে।
একইভাবে, নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা শাখা থেকে নিউইয়র্কের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ৯ হাজার ৯৮০ ডলার জমা করা হয়েছে। এর সমপরিমাণ স্থানীয় মুদ্রা ৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ৯৬ টাকা হিসাবে) গত ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সরকারি ট্রেজারিতে জমা দেওয়া হয়েছে।
চীনে অবস্থিত দূতাবাস ও ভারতে অবস্থিত একটি ডেপুটি হাইকমিশন থেকেও উদ্বৃত্ত বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এসব অর্থের পরিমাণ জানা যায়নি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, সব ধরনের সরকারি লেনদেন যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে হয়ে থাকে, তাই দেশে ও দেশের বাইরে থেকে সরকারকে দেওয়া অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টেই জমা হয়। তবে ঠিক কয়টি দূতাবাস ও হাইকমিশন বৈদেশিক মুদ্রা ফেরত পাঠিয়েছে তা জানাতে তিনি রাজি হননি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মোট আশিটি দূতাবাস ও হাইকমিশন রয়েছে। নিয়মিত ব্যয়ের বাইরে বিশেষ প্রয়োজন যেমন সরকারপ্রধানের সফর অথবা এমন অনুষ্ঠানের খরচ মেটাতে এসব মিশনকে সরকারের ডিপ্লোম্যাটিক অ্যান্ড কনসুলার সার্ভিসেস অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ পাঠানো হয়। অনেক সময় এভাবে পাঠানো অর্থের পুরোটা ব্যয় হয় না।
সূত্র জানিয়েছে, দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো সাধারণত ব্যয় না হওয়া অর্থ অডিটের পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠিয়ে থাকে। তবে এ বছর দেশে বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিশনগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছে যাতে ব্যয় না হওয়া বৈদেশিক মুদ্রা দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক বলেন, দূতাবাস ও হাইকমিশনের কাছে সাধারণত নিয়মিত বাজেট বরাদ্দের বাইরে কোনো অর্থ থাকে না। সরকারপ্রধানের সফর অথবা অন্য কারণে অতিরিক্ত অর্থ পাঠানো হলে সেই হিসাব ওই ইভেন্ট শেষের পরপর মিটিয়ে ফেলা হয়। কাজেই বিদেশের মিশনগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থাকবে বলে মনে হয় না।
জানা গেছে, অতিরিক্ত অর্থ ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মিশনগুলোকে ব্যয় সংকোচন করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে, যেসব মিশনের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ আছে, তাদেরকে আয় বৃদ্ধির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দূতাবাসগুলো সাধারণত পাসপোর্ট ইস্যুর মাধ্যমে আয় করে থাকে। যেহেতু প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈদেশিক মুদ্রায় পাসপোর্ট ফি দিয়ে থাকেন, তাই বৈদেশিক মিশনগুলো যত পাসপোর্টের চাহিদাপত্র পাঠাচ্ছে, সেগুলো দ্রুত ইস্যু করা হচ্ছে।