নীলফামারী প্রতিনিধি : গ্রাম্য সালিশে প্রভাবশালীরা এক তরুণীর মাথার চুল জোড়পূর্বক ন্যাড়া করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাথার চুল জোড়পূর্বক ন্যাড়া করার সময় শ্লীলতাহানি ঘটানো হয় বলেও অভিযোগ ওই তরুণীর। অপরদিকে যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা বলছে, ওই তরুণীর অপরাধ সে ইসলাম ধর্মের এক ছেলের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেছে। তাকে ফিরে এনে শুদ্ধি করতে মাথার চুল ন্যাড়া করে প্রায়শ্চিত্ত করানো হয়েছে। তরুণীর মাথার চুল ন্যাড়া করে দেয়ার এই ঘটনাটি ঘটে গত ১০ জুলাই নীলফামারী জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের চাঁদেরহাট কলেজপাড়া গ্রামে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, জেলা শহরের একটি পরচুলা কোম্পানিতে চাকুরি করে মৃত ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের মেয়ে ওই তরুণী। চাকরির সুবাদে রবিউল নামের এক অটোচালকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরই সুবাধে গত ২ জুলাই ওই তরুণী নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে রিনা বেগম নাম ধারণ করে। এরপর ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী দুই লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় ওই রবিউল ইসলামের সঙ্গে। ওইদিন তারা দুইজনেই রবিউলের জেলা সদরের কচুকাটা ইউনিয়নের দুহুলী গ্রামের বাড়িতে গিয়ে উঠে। রবিউল ওই গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে।
তরুণী জানায়, গত ৯ জুলাই আমার গ্রামের কিছু মাতব্বররা ঘটনাটি জানতে পেরে, রবিউলের বাড়ি যায়। সেখানে সালিশ বসিয়ে আমাকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর সালিসের মাধ্যমে গত মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে সদানন্দ রায়, দীনবন্ধু রায়, পুস্প কুমার রায় আমার শ্লীলতাহানী ঘটিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোড়পূর্বক মাথার চুল ন্যাড়া করে দিয়ে শরীরের বিকৃতি ঘটায়। এতে আমি প্রতিবাদ করলে আমার পরিবারকে ও আমাকে সমাজচ্যুত করার হুমকি দেয়। লক্ষ্মীর মা বুলো বালা রায় বলেন, আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। এর মধ্যে লক্ষ্মী রানী দ্বিতীয়। সে সংসারের একমাত্র ভরসা। একটু ভুলের কারণে আজ আমার মেয়েকে লাঞ্চিত হতে হলো। প্রতিবেশী বিবেকানন্দ রায় (৩৫), কনক চন্দ্র রায় (৪৫), সুধীর চন্দ্র রায় (৫৫), সুরেশ চন্দ্র রায় (৪৫) ওই সালিশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান। এ সময় তারা বলেন, ওই তরুণী হিন্দু ধর্ম ছেড়ে মুসলিম হয়েছিল। সেখান থেকে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরে আনার জন্য প্রায়শ্চিত্তের অংশ হিসেবে তার মাথার চুল ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছে। এখন অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার প্রস্তুতি চলছে। এটা হিন্দু ধর্মের রীতি-নীতি, এলাকার হিন্দু সমাজের লোকজন উপস্থিত থেকে ওই বিধান দিয়েছেন। আমরা তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে তার মাথার চুল ন্যাড়া করিনি। বরং সে আমাদের ধর্মের অবমাননা করেছে। তরুণীর মাথার চুল ন্যাড়া করে দেয়ার সঙ্গে জড়িত সদানন্দ রায়কে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে অপরজন দিনবন্ধু রায় বলেন, সমাজের সকল লোকজনের সাথে আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ব্লেড দিয়ে জোড়পূর্বক মাথা ন্যাড়া করে দেয়া আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয়।
এ বিষয়ে রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের নয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুহুল আমিন বলেন, আমি মেয়েটিকে উদ্ধার পূর্বের সালিশে দুহুলীর রবিউলের বাড়িতে ছিলাম। সেখান হতে মেয়েকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আমি নিজবাড়ি চলে যাই। এখানে তারা পরবর্তীতে মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে বলে জানতে পারি। আমার মতে এ কাজটা তারা ঠিক করেনি। নীলফামারী কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরের পুরোহিত অশোক কুমার ভট্টাচার্য বলেন, সনাতন হিন্দু ধর্মে মাথা ন্যাড়া করে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। সে স্ব-ইচ্ছায় প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইলে বিধান মতে চুলের অগ্রভাগে এক থেকে দেড় ইঞ্চি কেটে ফেলে তার প্রায়শ্চিত্ত করবে। প্রায়শ্চিত্তের নামে মাথা ন্যাড়া করা ঠিক না। নীলফামারী সদর থানার ওসি বাবুল আকতার বলেন, এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাইনি। তরুণী বা তার পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।