- আমিনুল ইসলাম কাসেমী
মওদুদী সাহেব কোন সনদপ্রাপ্ত আলেম ছিলেন না। এমনকি বিজ্ঞ কোন আলেমের তত্বাবধানে তিনি লেখাপড়া করেননি। তবে তিনি প্রতিভাধর লেখক ছিলেন। কলমে ধার ছিল বেশ। নিজে নিজে প্রচুর গবেষণা করে লেখালেখি করেছেন। এক সময়ে বস্তুবাদের বিরুদ্ধে তার কলম গর্জে ওঠেছিলো। যেহেতু নিজে নিজে গবেষণা করে লেখালেখি করেছেন। কোন উস্তাদের শরণাপন্ন হননি। এমনকি সলফে- সালেহীনদের তিনি অনুসরণ করেননি। সম্পূর্ণ নিজের জ্ঞান- বুদ্ধি অনুযায়ী গবেষণা আর সে অনুযায়ী লেখালেখি। যার ফলে তার বিভিন্ন গবেষণা ও লেখালেখিতে ভুলত্রুটি হয়েছে। আর সেসব ভুলগুলো ছিল খতরনাক। আসলে ওইসব বিষয়গুলো থেকে ফিরে না আসলে ঈমানী খাতরা। যে কারণে সে চরম গোমরাহীতে শামিল ছিল।
অবশ্য সেসময়ে ওলামায়েকেরাম মওদুদী সাহেবকে তার ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু অহংকারবশতঃ তিনি সেটা মেনে নেননি। বরং নিজের ভুলের উপরে অটল- অবিচল ছিলেন। আলেমগণ মওদুদী সাহেবের ভ্রান্তির উপরে বহু কিতাবাদী রচনা করেছেন। যেগুলো বর্তমান বাজারেও রয়েছে। শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী (রহ), মাওলানা মঞ্জুর নোমানী (রহ), মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ), মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী(রহ), মাওলানা ক্বারী তা্ইয়্যেব সাহেব (রহ) সহ প্রমুখ ওলামায়েকেরাম মওদুদী সাহেবের ভ্রান্ত-আকিদা বিস্বাসের ব্যাপারে সর্তক করেছেন। এবং তাকে গোমরাহ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
কিন্তু সমস্যা হল মওদুদী সাহেবের অনুসারীগণ। তারা মওদুদী সাহেবের সেসব বিষয়গুলো একদম ওহীরমত অন্তরে গেঁথে ফেলেছে
হালজামানায়ও আলেমগণ মওদুদী সাহেবের সেসব অসারতার ব্যাপারে, তার গোমরাহীর ব্যাপারে জাতিকে সতর্ক করে যাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হল মওদুদী সাহেবের অনুসারীগণ। তারা মওদুদী সাহেবের সেসব বিষয়গুলো একদম ওহীরমত অন্তরে গেঁথে ফেলেছে। তারা এখন ওই বাতিল চিন্তাধারা থেকে ফিরতে নারাজ। এমনকি মওদুদী সাহেবের সেই গোমরাহী ভাবনা এদের মাঝে বদ্ধমুল হয়ে আছে।
কিছু কিছু মওদুদীপন্হী আলেম আছেন, যারা মওদুদী সাহেবের সেসব ভ্রান্ত চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠিত করতে চান। তার পক্ষে ভিত্তিহীন তর্ক- বিতর্ক করে যাচ্ছে সবসময়। ওরা মওদুদী সাহেবের ভ্রান্ত বিষয়গুলো সহী মনে করে উল্টো খোঁড়া যুক্তি দিয়ে আলেম- উলামার সাথে বাক-বিতণ্ডা করে যাচ্ছে। মওদুদী সাহেবের ভুলগুলো শোধরানো দুরে থাক বরং মওদুদীকে অনুসরণ ও অনুকরণ করে যাচ্ছে। যেটা খুবই নিন্দনীয়।
মনে রাখতে হবে মওদুদী সাহেবের অনুসৃত নীতি ও চিন্তাধারা হকপন্হীদের চিন্তাধারা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ঈমান আমলের ক্ষেত্রেও তিনি হকপন্হীদের থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। আমল ইবাদত বন্দেগী প্রসঙ্গেও আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত থেকে তিনি বিচ্যুত হয়েছেন। এমনকি ইসলামী জ্ঞানের উৎস কুরআন- হাদীস, তাফসীর, ফিকাহ ও তাসাউফ সম্পর্কিত ধারণা এবং কুরআন – হাদীস থেকে জ্ঞান আহরণের পদ্ধতির ক্ষেত্রেও আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নীতি থেকে বিচ্যুত হয়েছেন।
ঈমান আকিদার ক্ষেত্রে বহু বিষয়ে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। এ পর্যায়ে কয়েকটি প্রসঙ্গ তুলে ধরা হল-
এক. আম্বিয়ায়েকেরামের ইসমত প্রসঙ্গেঃ
নবীগণ (আঃ) সকলেই মাসুম। নিস্পাপ। তাদের থেকে কোনপ্রকার গোনাহ সংঘটিত হয়নি। নবুওয়্যাত প্রাপ্তির আগেও নয়, পরেও নয়। এটাই হল আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা। কিন্তু জনাব মওদুদী সাহেব মুসলমানদের বদ্ধমূল এ আকিদার উপর কুঠারাঘাত করেছেন। তার দৃষ্টিতে নবীগণ মাসুম নয়। নবীদের থেকেও নাকি গোনাহ সংঘটিত হয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ)
মওদুদী সাহেবের মতে নবুওয়্যাত লাভের পূর্বে তো কথাই নেই, নবুও্য়্যাত লাভের পরেও নবীদের থেকে থেকে পাপ সংঘটিত হতে পারে এবং হয়েছেও, তিনি বলেন, ‘একটা বড় মজার কথা যে, আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছাকৃত প্রত্যেক নবী থেকেই কোন না কোন সময় নিজের সংরক্ষণ ব্যবস্হা তুলে নিয়ে দু’ একটা গোনাহ ঘটে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন, যাতে মানুষ নবীদের খোদা মনে না করে বসে এবং তারা যে মানুষ, খোদা নন, এটা বুঝতে পারে। ( তাফহীমাত ২য় খণ্ড) পৃষ্ঠা – ৫৬ ইসলামিক পাবলিকেসন্স, লাহোর ১৯৮৭)
তিনি অন্যত্র সুরা হুদের ৪৬ নং আয়াত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নবী রসুল সম্পর্কে বলেছেন, ‘বস্তুত নবীগণ মানুষই হয়ে থাকেন এবং কোন মানুষই মু’মিনের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ মাপকাঠিতে সর্বদা অটল থাকতে সক্ষম হতে পারেনা। প্রায়শই মানবীয় নাজুক মুহুর্তে নবীর ন্যায় শ্রেষ্ঠ মানুষও কিছুক্ষণের জন্য মানবিক দুর্বলতার সামনে পরাভূত হয়ে যান। (তাফহীমুল কুরআন- ২য় খণ্ড, মাকতাবায়ে তমীরুল ইনসানিয়্যাত, লাহোর, এডিশন-২, ১৯৫৬)
ক্রমশ..
লেখক, শিক্ষক ও কলামিস্ট