প্রাণ ফিরে পাচ্ছে কুমার নদ

প্রাণ ফিরে পাচ্ছে কুমার নদ

ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত মৃতপ্রায় কুমার নদ খনন শুরু হওয়ায় এলাকাবাসী সন্তোষ প্রকাশ করেছে। সদর উপজেলার চুনাঘাটা ও আম্বিকাপুর এলাকায় গিয়ে  সোমবার দুপুরে দেখা গেছে, ১৫টি এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি তোলা হচ্ছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, ২৫১ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের আওতায় ১৩১ কিলোমিটার কুমার নদ খনন শুরু হয়েছে। শনিবার খনন কাজ উদ্বোধন করা হয়। নদী খনন ও রেগুলেটর নির্মাণের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে কমপক্ষে ছয় ফুট পানি প্রবাহ রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কৃষি ও দৈনন্দিন কাজে পানি সমস্যার সমাধান হবে। দৈনন্দিন কাজের জন্য নদীতে ৬১টি পাকা ঘাট নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সারাদেশে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সরকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার ওপর জোর দিয়ে নদ-নদী খননের পরিকল্পনা নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে কুমার নদ খননের কাজ শুরু হয়েছে। খনন কাজ শেষ হলে ফরিদপুরের পাঁচটি উপজেলার মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজ করতে পারবে। পাশাপাশি কৃষি ক্ষেতে উৎপাদন বাড়াতে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করবে। আর পারিবারিক কাজের জন্য নদীতে ৬১টি পাকা ঘাট নির্মাণ করা হবে। ফরিদপুর শহরতলির হারুকান্দিতে থাকবে একটি বড় শ্মশানঘাট। জেলার কয়েকটি উপজেলার ওপর দিয়ে সর্পিল আকারে বয়ে যাওয়া কুমার নদ এই জনপদের জীবন-জীবিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছিল। কিন্তু প্রয়োজনী খননের অভাবে কয়েক দশক ধরে সংকট দেখা দেয়। খননের পর এলাকায় প্রাণ প্রবাহ ফিরে আসবে জানিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। আম্বিকাপুরের গৃহবধূ শিল্পী বেগম বলেন, কয়েক বছর ধরে এই নদে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। বাচ্চারা বিকালে নদে নেমে খেলাধুলা করে।

খনন শেষ হলে সেচ, মাছ, পারিবারিক নানা কাজে সুবিধা হবে। একই কথা বললেন ওই এলাকার মনোয়ার হোসেন, কলিম ব্যাপারীসহ অনেকে। তারা খনন কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর তাগিদ দিয়েছেন।

ফরিদপুরের আইনজীবী গাজী শাহিদুজ্জামান লিটন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পরিচর্যা না হওয়ায় নদটি তার ঐহিত্য ও গৌরব হারিয়েছে। বেশির ভাগই শুকিয়ে গেছে। শুকনো মৌসুমে ফসলের ক্ষেতে পরিণত হয়। নাব্য ফিরিয়ে আনার এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী সুলতান। তিনি বলেন, আগামী বছর ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। খননকাজ শেষ হলে ফরিদপুর সদর, নগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও পাশের জেলা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা মিলিয়ে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর কৃষিজমি সেচের আওতায় আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, ফরিদপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কুমার নদ খনন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর চেষ্টায় অবশেষে এ জেলার মানুষ তাদের কাক্সিক্ষত ফল পেতে যাচ্ছেন। দেশের অন্যান্য জেলার মতই ফরিদপুরে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। সঠিক সময়ে খনন কাজ শুরু হওয়ায় জেলার জীবন-মানের অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *