বাবা, তোমাকে ভুলতে পারছি না | ফয়জুল্লাহ আমান

বাবা, তোমাকে ভুলতে পারছি না | ফয়জুল্লাহ আমান

স্মরণ | ফয়জুল্লাহ আমান

বাবা, তোমাকে ভুলতে পারছি না

কষ্টের হয়ত অনেক প্রকার আছে। একেক ধরনের কষ্টের একেক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু আমার বুকে সব রকমের কষ্ট এক হয়ে গেছে। আমি বিচিত্র সব দুঃখবোধে জর্জরিত। আমার বাবা মারা গেছেন। তার মৃত্যু আমাকে অন্য রকম যন্ত্রণার অনুভূতি দিয়েছে। এমন শূন্যতা কখনও অনুভব করিনি। চারদিক কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে আজ কদিন যাবত। মাথার ওপর তিনি ছিলেন ছায়ার মত।

বাবা মা সন্তানের জন্য ছায়া। এ কথা শুনে এসেছি। আজ তার বাস্তববোধ জন্ম নিল। আজই উপলব্ধি করছি এ মহাসত্য। বাবা, তোমাকে এক মুহূর্ত ভুলতে পারছি না। হৃদয় মথিত হচ্ছে দুঃখে। পবিত্র কুরআনুল কারীম আমাদের সবর করতে বলেছে। প্রিয় নবীজী শিখিয়েছেন চরম দুঃখের সময়েও কীভাবে ধৈর্য ধরতে হয়। কোনো অনুযোগ না করে তাই খোদা তালার ফয়সালায় নিজেকে সমর্পণ করছি। আমাদের মুখ থেকে যেন মাওলা পাকের অসন্তুষ্টির কোনো শব্দ উচ্চারণ না হয়। সতর্ক থাকতে হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।

আসরের নামাজের পর কুরআন তেলাওয়াত করছিলাম। বাড়ি থেকে মা ফোনে জানালেন, আব্বা আবার স্ট্রোক করেছেন। আমার দু’বোন আর এক ভাই তখন আব্বার পাশে। ভাগ্নে ভাগ্নিরাও আছে সেখানে। বাড়ি যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। আধা ঘণ্টা বাদেই ওপাশ থেকে ছোট চাচা ফোনে জানালেন, তোমার বাবা আর দুনিয়ায় নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সাফওয়ানের আম্মু শুনেই কান্না শুরু করল। তার কান্না দেখে বাচ্চারাও কাঁদছে। আমাকে থাকতে হবে শান্ত। আশপাশের সব আত্মীয় স্বজনকে জানিয়ে দিতে হবে। আব্বার অনেক ছাত্র শিষ্য আছে তাদেরও জানাতে হবে।

আজ সোমবার। রবিউল আউয়ালের ২০ তারিখ। ১৪৪১ হিজরি মোতাবিক ২০১৯ এর আঠারোই নভেম্বর। আমার ফুফু বললেন, তোমার বাবার জন্মও হয়েছিল সোমবার। জন্ম মৃত্যু দুটিই একদিনে। সোমবারে। আমাদের প্রিয় নবীজীর জন্ম ও তিরোধানও এই সোমবারে হয়েছিল। আব্বা জন্মেছিলেন ১৯৩৬ সালে। সে হিসেবে পঁচাশি বছর বয়স হয়েছিল তার মৃত্যুর সময়। ১৯৬৫ সালে আব্বা দাদাকে নিয়ে টাঙ্গাইল এসেছিলেন চিকিৎসা করাতে। দীর্ঘ দিন দাদার সাথে হাসপাতালে ছিলেন। দাদা মারা গেছেন পঞ্চাশের কম বয়সে। দাদি বেঁচে ছিলেন ২০০১ সাল পর্যন্ত। দাদার মৃত্যুর পর আব্বা কলেজ ছেড়ে মাদরাসায় ভর্তি হন। ফরিদপুরের কলন্দর হুযুরের কাছে পড়াশোনা করেছেন। তারপর গওহরডাঙ্গায় সদর সাহেবের সোহবতেও থেকেছেন। ফরিদপুরি রহ.-এর ইন্তিকালের পর মাওলানা আবুল হাসান যশোরীর কাছে থেকে পড়াশোনা করেন। তাসাওফের দীক্ষাও নেন তার কাছে।

৬৬ সালে প্রথমে তাবলিগে গিয়েই পরিবর্তন আসে। কলেজ ছেড়ে মাদরাসায় ভর্তি হন। বয়স হয়ে গিয়েছিল তাই আর শেষ করতে পারেননি। কিন্তু অল্প দিনেই অনেক বুযুর্গের ঘনিষ্ট সাহচর্যধন্য হন। প্রথম বিবাহ করেন ১৯৬৯ সালে। মাগুরার আলোকদিয়া সৈয়দ আলি আহসানের বাড়ির পাশে। ৭৪ সালে মারা যান প্রথমা স্ত্রী। সে ঘরে একটি মেয়ে ছিল। তারপর ১৯৮০ সালে বিবাহ করেন আমার মাকে। আগের বোনসহ আমরা এখন তিন ভাই চারবোন আছি আব্বার সন্ততি। আমাদের একটি হাফেজ ভাই ও এক নবজাতক বোন মারা গেছেন শৈশবেই।

আশির দশকের গোড়াতেই আব্বা যশোর আসেন। যশোর পলিটেকনিক কলেজ মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে নিয়োগ পান। দীর্ঘ তিরিশ বছর এখানে নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। মায়ের মুখে শুনেছি, একদিন প্রচ- তুফান। ফজরের ওয়াক্তে আব্বা এই তুফানের ভেতর প্রস্তুত হচ্ছেন মসজিদে যাবার জন্য। মা বললেন, এই তুফানের ভেতর কেউ আসবে নাকি? আজকে আর মসজিদে যাবার দরকার নেই। আব্বা তখন বললেন, দেখ, কেউ না আসুক, আমি মসজিদের ইমাম। যত ঝড় তুফানই হোক, আমাকে তো মসজিদে থাকতেই হবে।

২০১২ সালে বার্ধক্যের কারণে চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়ি মাগুরায় চলে যান। গ্রামের বাড়ির পাশে একটা মসজিদ করেছিলেন। আব্বার ছাত্র আলমারকাযুল ইসলামির মাওলানা আবুল হাসান ভাই মসজিদ নির্মাণে সহায়তা করেছিলেন। সেখানেই আব্বা নামাজ পড়িয়েছেন আরও এক বছর। তারপর শয্যাশায়ী হয়ে যান। প্রায় সাত বছর বিছানায় পড়ে ছিলেন। অনেক রোগভোগ করেছেন। অবশেষে সমস্ত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহর প্রিয় হয়ে গেছেন। সারি যিন্দিগি কি বে কারারি কো আখের কারার মিল হি গয়া। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতবাসী করুন। জান্নাতুল ফেরদাউসের উচ্চ মাকাম নসীব করুন। আমীন।

আমার আব্বা মূলত ছিলেন মাদরাসা শিক্ষক। যশোর দড়াটানা মাদরাসায় দীর্ঘ দিন পড়িয়েছেন। এছাড়া নিজের মসজিদে শিশুদের কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা রেখেছিলেন। যশোর পলিটেকনিক কলেজের অনেক ছেলে আমার আব্বার কাছে কুরআন শিখেছে। পড়ানোর পাশাপাশি তিনি তাবলিগে সময় দিতেন। ১৯৭০ সালে নিজামুদ্দিন গিয়েছেন। আমাকে প্রায় বলতেন, সেসময় তিনি দেওবন্দ গিয়েছিলেন ঘুরতে। সেখানে থাকা অবস্থায় তার মনে স্বপ্ন জেগেছিল নিজের ছেলে হলে দেওবন্দ মাদরাসায় পাঠাবার। আল্লাহ তার সে স্বপ্ন পূরণ করেছেন। আমার বাবা চাচারা পাঁচভাই ছিলেন। আব্বা ছিলেন চতুর্থ। বড় তিন চাচা কোনো পড়াশোনা করেননি।

আমার আব্বাকেই স্কুলে ভর্তি করেন দাদা। আমার আব্বার মাধ্যমে আমাদের বংশে শিক্ষার আলো ছড়ায়। জেনারেল ও ধর্মীয় উভয় শিক্ষায় বংশের বহু মানুষ পড়াশোনা করেছে। তাদের সবার শিক্ষিত হবার পেছনে আমার বাবার অবদান রয়েছে। মাগুরা মোহাম্মাদপুরে আমাদের খান্দান আলেম উলামার খান্দান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। অসংখ্য হাফেজ আলেম আমাদের বংশে তৈরি হয়েছে এখন। তারা সবাই আব্বাকে মুরুব্বি হিসেবে মানত। আব্বা তাদের সবাইকে প্রাথমিক শিক্ষা দিয়েছেন তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে দূর দূরান্তে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

কর্মজীবনের শুরুতে নিজের গ্রামে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সে মাদরাসা আজও আছে। তারপর যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই মাদরাসা বানিয়েছেন। কারও কারও একটা আধ্যাত্মিক ক্ষমতা থাকে। মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন তারা। আমার আব্বা এমনই ছিলেন। যেখানে গিয়েছেন সেখানে মানুষ তার দ্বারা খুব প্রভাবিত হতো। বড় কোনো আলেম না হয়েও তাই অনেকগুলি প্রতিষ্ঠান আব্বা গড়েছেন। ফরিদপুরের খরসতি দাওরায়ে হাদীস মাদরাসাটি আমার আব্বা প্রতিষ্ঠা করেছেন। মাদারিপুর ও আরও কয়েক জায়গায় মাদরাসা মসজিদ করেছেন।

বাবার বড় বৈশিষ্ট্য ছিল নিয়মানুবর্তিতা। নিয়মের বাইরে কিছুই করতেন না। প্রতি দিন ভোর তিনটায় তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন। আমাদের সবাইকেও ডেকে দিতেন। শৈশব থেকেই আমাদের তাহাজ্জুদ পড়াতেন। আমার দু ভাই হাফেজ হলে তাদের পেছনে নামাজ আদায় করতেন। বাদ ফজর মসজিদে বাচ্চাদের কুরআন পড়াতেন। ইশরাকের নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হতেন। নাস্তা শেষ করে প্রয়োজনীয় কাজ সারতেন। দশটার সময় ঘুম। বারটার ভেতর গোসল সেরে মসজিদে যেতেন। যোহরের আযানের আগ পর্যন্ত কুরআন তেলাওয়াত। বাদ যোহর খাওয়া দাওয়া। কিছুটা মুতালা। ইমাম গাযালি ও আকাবিরে দেওবন্দের কিতাবাদি পড়তেন। আসরের পর তাবলিগের কাজে যেতেন। কলেজের ছাত্রদের দীনের কথা শোনাতেন। মাগরিব বাদ কোথাও না কোথাও বয়ান করতেন বা বাসায় ফিরে সবাইকে পড়াশোনায় লাগিয়ে রাখতেন। এশার পর সম্মিলিতভাবে তালিম হতো। দশটা বাজে সবাইকেই ঘুমুতে হতো। জন্মের পর থেকে এই এক নিয়মেই চলতে দেখেছি আব্বাকে।

যশোর পলিটেকনিক কলেজে আমরা সরকারি কোয়াটারে থাকতাম। আমাদের বাড়ির সামনে বিরাট একটা জমি ছিল। প্রায় কয়েক বিঘা জমি। আব্বা সকালে নাস্তার পর প্রায় সেখানে চাষবাস করতেন। আমাদের হাতে পড়ার বই দিয়ে ক্ষেতের এক পাশে বসিয়ে রাখতেন আর নিজে কাজ করতেন। কখনওই আমাকে কাজ করতে বলতেন না। সংসারের সমস্ত কাজ নিজে করতেন। এত বেশি পরিশ্রম করতেন যে তা বলার মত নয়। আমাদের মানুষ করতে অনেক কষ্ট করেছেন। আল্লাহ তাকে তার কষ্টের বদলা দেন। আমীন।

রাতে আমরা ঘুমিয়ে গেলে আব্বার যিকির শুরু হতো। জাহরি যিকির করতেন আব্বা। আমার সেই স্মৃতি মনে পড়ে যখন আমাকে বুকে জড়িয়ে জোরে জোরে আল্লাহ আল্লাহ যিকির করতেন। আল্লাহ আল্লাহ বলার মাঝে মাঝে আল্লাহু হাজিরি.. আল্লাহু নাজিরি.. আল্লাহু শাহিদি.. আল্লাহু মায়ি বলতেন। এ শব্দগুলো বলতে গেলেই চিৎকার করে কাঁদতেন।

ইশরাক চাশত আওয়াবিন তাহাজ্জুদ এই সব নফলগুলির এত গুরুত্ব দিতেন যা আমি আর কোথাও দেখিনি। আমরা ফরজ নামাজের যতটুকু গুরুত্ব দেই না তার চেয়ে বেশি আব্বা নফলের গুরুত্ব দিতেন। বড় হয়ে আগের দিনের বুযুর্গদের ইবাদত বন্দেগির যতসব ঘটনা বই পুস্তকে পড়েছি তা আমার কাছে কখনও অতিরিক্ত মনে হয়নি কারণ আমরা জন্মের পর থেকে এমন ইবাদত বন্দেগী আমাদের বাড়িতে দেখে এসেছি।

প্রত্যেক নামাজের পরে আব্বা দুআ করতেন। আর দুআতে কান্নার মত সহজ বুঝি কিছুই ছিল না। আল্লাহুম্মাগফির লি উম্মাতি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হে আল্লাহ! প্রিয় নবীর উম্মতকে তুমি মাফ করে দাও। এ কথা উচ্চারণ করতেই সবসময় দেখেছি আব্বা অশ্রুসিক্ত হয়ে গেছেন। বয়ানে যে কোনো কথা বড় দরদ দিয়ে বলতেন। এমন দরদি উচ্চারণ খুব একটা দেখা যায় না।

আব্বা খুব মিশতে পারতেন মানুষের সাথে। কিন্তু দিনদারি ছাড়া অন্য কোনো কথা কখনও কাউকে বলতেন না। আমাদের সাথে কঠোরতা করতেন। যাতে আমরা ঠিক মত পড়াশোনা করি। মাদরাসায় শেকল পরিয়েও রেখেছেন। যাতে আমরা পড়ার সময় বাড়ি আসতে না পারি। একবার আব্বা চিল্লায় যাবেন। জানেন, চিল্লায় গেলে আমরা মাদরাসা থেকে বাসায় চলে আসব। বাজার থেকে শেকল কিনে আনলেন। মাকে পাশের রুমে নিয়ে বললেন, ওদের মাদরাসায় শেকল দিয়ে আসব। এই বলে অনেক কাঁদলেন। পড়াশোনার জন্য আব্বা এত বেশি কঠোরতা করতেন যে, আমরা মনে করতাম, আমাদের বাবার ভেতর কোমলতা বলতে কিছু নেই। মাক্সিম গোর্কির আত্মজীবনীতে গোর্কি তার নানা নানির বর্ণনা দিয়েছেন। তার নানাকে দেখে তার মনে হতো ইশ^র অনেক কঠোর, আর নানিকে দেখে মনে হতো ইশ^র বড় কোমল। সত্য হচ্ছে আমাদেরও অবস্থা এমন ছিল। আমার মাকে দেখলেই মনে হতো আল্লাহ বড় দয়াময়। আর আব্বাকে দেখলেই মনে হতো আল্লাহ প্রতাপান্বিত সত্তা।

একবার আব্বা মালিবাগ মাদরাসায় এলেন। মাওলানা আহমাদ মায়মুন সাহেব আমাকে পিতৃ¯েœহ দিয়ে মানুষ করতেন। তিনি আমার কাছে খুটিয়ে খুটিয়ে আমার বাড়ির সব খবর রাখতেন। আমার বাবা সম্পর্কেও জানতে চাইতেন। তার কাছে আমি কিছুই গোপন করতাম না। এমন কি কোথাও থেকে কিছু চুরি করলেও হুজুরকে বলতাম। তো আব্বা আসার আগেই হুজুরকে সতর্ক করলাম। আমার আব্বা কত কঠোর সে কথা বললাম। মাদরাসার কুতুব খানায় সব উস্তাদদের সাথে আব্বা কথা বললেন। চলে যাবার পর আহমাদ মায়মুন সাহেব ডেকে বললেন, কই, তুমি যেমন বললে তেমন তো কিছুই দেখলাম না। খুব হাসি খুশি এবং মিশুকভাবে কথা বলেছেন উস্তাদদের সাথে। মাওলানা আহমাদ মায়মুন সাহেবের কথা শুনে আমি ভারী বিস্মিত হয়েছিলাম।

মূলত আব্বা শাইখুল হাদীস যাকারিয়া রহ.-এর আপবীতিতে প্রভাবিত ছিলেন। আপবীতি পড়ে সেভাবেই আমাদের মানুষ করতে চেয়েছিলেন। আর আমরাও ছিলাম দুষ্ট। এভাবে শাসন না করলে হয়ত আমাদের গড়ে ওঠা কঠিন হতো। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বাবার কঠোরতার কারণে আশা করি তার প্রতি কঠোর আচরণ করবেন না। আমাদের যত শাসন বা আদর করেছেন সব কিছুর প্রতিদান তাকে দান করুন। আমীন। আমাদেরকে সবর করার তাওফিক দান করুন। বিশেষত আমার মায়ের হায়াত দারাজ করুন। আমীন।

মাওলানা আব্দুল হাফিজ মাক্কি সাহেব যে বছর রমজানে ইকরা বাংলাদেশে ইতিকাফ করেন আব্বা এখানে ইতিকাফে শরীক হয়েছিলেন। আমার উস্তাদ মাওলানা কাজি মুতাসিম বিল্লাহ রহ.-এর সাথে ছিল মহব্বতের সম্পর্ক। মালিবাগ মাদরাসায় পাঠানোর সময় হুজুরের বাড়ি নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, হুজুর, আমার ছেলেটাকে আপনার হাতে তুলে দিলাম। এর আগে যশোর মার্কাজ মাদরাসায় পড়ার সময় প্রায় আমার উস্তাদদেরকে বাসায় দাওয়াত করে খাওয়াতেন। অনেক সময় বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে আমার উস্তাদদের মেহমানদারি করতেন। ছেলের প্রতি উস্তাদদের নেক তাওয়াজ্জুহ কীভাবে হবে সেটা খুব ভাল বুঝতেন। আমাকে সব সময় বলতেন, বাড়ি থেকে পিঠা-পুলি নিয়ে উস্তাদদের দিতে। বড়দের সবাইকে আদব করে চলার শিক্ষা দিতেন আব্বা।

আমার বাবাকে নিয়ে অনেক কিছু লেখার আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার ভেতরের কান্না থামাতে পারছি না। বাবার স্মৃতিগুলো বড় কাতর করে রাখছে। পিতৃবিয়োগের কষ্ট এভাবে আমাকে আচ্ছন্ন করবে তা ভাবিনি। বাবা সবসময় আমাদের নিয়ে গর্ব করতেন। বলতেন, আমি বাড়ি গাড়ি করিনি, আমার ছেলেদের আলেম বানিয়েছি। শ্রোতাদের জিজ্ঞেস করতেন, বলো, আমার গর্ব করার আর কিছুর দরকার আছে? পার্থিব কোনো মোহ ছিল না। যশোর শহরে এত বছর ছিলেন। ইচ্ছে করলে অনেক কিছুই করতে পারতেন। কিছুই করেননি। গ্রামের বাড়িতে যে ঘর তুলেছেন সেখানেও মাদরাসা দেওয়ার ইচ্ছা করেছিলেন।

আমরা পরিবারের সদস্যরা সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেখানে একটি মাদরাসা দিব। মাদরাসাতুল আমান নামে একটি প্রতিষ্ঠান দিতে বংশের অন্যরাও আমাদের উৎসাহিত করছেন। আল্লাহ তাওফিক দিন। পাঠকের কাছে দুআ প্রার্থনা, আমরা যেন আমাদের বাবার আত্মায় সাওয়াব রাসানির ধারা অব্যাহত রাখতে পারি। ওয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা সাহবিহি ওয়া বারাকা ওয়া সাল্লাম।

লেখক : মরহুমের মেঝো ছেলে ও জামিআ ইকরা বাংলাদেশের সিনিয়র মুহাদ্দিস

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *