বিবাহবিচ্ছেদ ও সন্তানের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে
এ এম মোতাহের হোসেন : বাবার সরকারি কোয়ার্টার রয়েছে। ফলে ছেলে-মেয়েদের থাকার সুবিধা রয়েছে। দু’সন্তানের লালনপালন এবং ঘর সংসারের যাবতীয় কাজকর্মের জন্য রাতুলের বাবার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম প্রথম কিছুদিন শান্তিতে কাটলোও বছর খানেক যেতেই না যেতেই সংসারেও শুরু হয় অশান্তি।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বিবাহবিচ্ছেদ তথা তালাকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তালাকের বড় কারণগুলো হলো: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়া, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাস, পরনারীর সঙ্গে সম্পর্ক, যৌতুক, দেশের বাইরে গিয়ে ফিরে না আসা, মাদকাসক্তি, ফেসবুক আসক্তি, পুরুষত্বহীনতা, ব্যক্তিত্বের সংঘাত, নৈতিকতাসহ অন্যান্য কারণ। এছাড়াও স্বামীর কথা না শুনা, ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী না চলা, বদমেজাজ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা, সন্তান না হওয়া ইত্যাদি কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে থাকে বেশি।
সারাদেশে বর্তমানে তালাকের প্রবণতা বাড়ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী গত কয়েকবছরে তালাকের প্রবণতা ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। আর শিক্ষিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক বেশি হচ্ছে। ঢাকা শহরে তালাকের আবেদন বাড়ছে। প্রতিঘণ্টায় গড়ে একটি করে তালাকের আবেদন করা হচ্ছে। তালাকের আবেদন সবচেয়ে বেশি বেড়েছে উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যা প্রায় ৭৫ শতাংশ। দক্ষিণ সিটিতে বেড়েছে ১৬ শতাংশ। এরমধ্যে ৫ শতাংশের কম আবেদন আপোশ হচ্ছে। বিগত ছয় বছরে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৫০ হাজারের বেশি তালাকের আবেদন জমা পড়েছে।
বর্তমানে বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি তালাক হচ্ছে। সবচেয়ে কম সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ। এ বিভাগে প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৯টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। রাজশাহী বিভাগের বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম প্রধান কারণ হলো স্বামীর মাদকাসক্তি। স্বামীর মাদকাসক্তির কারণে সে স্ত্রীর ভরণপোষণসহ পারিবারিক ব্যয় মেটাতে সক্ষম হচ্ছে না। তাছাড়া নেশাগ্রস্ত অবস্থায় স্বামী স্ত্রীকে নির্যাতনও করে থাকে।
সিলেটে তুলনামূলকভাবে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা কম হলেও স্বামীর বিদেশে গিয়ে ফিরে না আসা বিবাহ বিচ্ছেদের একটি অন্যতম কারণ। সিলেট অঞ্চলে যৌথ পরিবার বেশি থাকার কারণে বিবাহবিচ্ছেদ কম হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। এই অঞ্চলের বড় সৌন্দর্য হচ্ছে যৌথ পরিবার। বাবা-মা, ভাই-বোন, ভাবীসহ সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে থাকছেন। এসব পরিবারে কোনো কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব বেড়ে গেলে তা সমাধানের জন্য পরিবারের অন্য সদস্যরা এগিয়ে আসেন। এটি সমাজ ও পরিবারের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক দিক।
লেখক : কলামিস্ট ও সমাজ বিশ্লেষক