বিমানে ধস

বিমানে ধস

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক ● রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ছাড়া বাকি সবগুলো পরিচালকের পদই শূন্য। ফলে বিমানের প্রশাসনিক কাঠামো একপ্রকার ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় সংস্থাটির বড় কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরে বিমানের ৮টি বিভাগের মধ্যে ৭টিতেই পরিচালকের পদ খালি। আর জেনারেল ম্যানেজারদের ভারপ্রাপ্ত করে কয়েকটি বিভাগ চালানো হচ্ছে। আর আগামী মে ও জুলাইয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সিইও) এবং পরিচালক ফাইন্যান্সের পদ শূন্য হয়ে যাচ্ছে। নানা কারণে দুই পদে চুক্তির মেয়াদ বাড়নো হচ্ছে না। তাছাড়া গতবছর বিমানের মার্কেটিং ও সেলস বিভাগের কর্মকর্তা পর্যায়ে দুই শতাধিক দক্ষ জনবল নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও মানবসম্পদ শাখার অসাধু কর্মকর্তাদের কারসাজিতে এখনো ওই নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। একইসাথে বিমানের কেবিন-ক্রু পর্যায়ে ২৫০ জনবল শূন্য রয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সূত্র মতে, বর্তমানে বিমানের মোট ৮টি বিভাগের মধ্যে একমাত্র পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন (ডিএফও) ছাড়া ৭টি বিভাগেই পরিচালক নেই। আর পরিচালক ফাইন্যান্সের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী জুলাইয়ে। তাছাড়া পরিচালক প্রশাসন, পরিচালক মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস, পরিচালক কাস্টমার সার্ভিস, পরিচালক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট, পরিচালক প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড লজেস্টিক সাপোর্ট, পরিচালক পরিকল্পনা পদগুলো শূন্য আছে। ফলে ঝুলে আছে অধিকাংশ বড় সিদ্ধান্ত। ইতোমধ্যে বিমানের পরিচালক প্রকৌশলের চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ম্যানেজমেন্টের অদূরদর্শিতায় ওই পদে এখনো নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। অথচ একটি আন্তর্জাতিক মানের এয়ারলাইন্সের ৭টি বিভাগ পরিচালক শূন্য থাকা অবাক করার মতো বিষয়। অথচ এয়ারলাইন্স ব্যবসায় মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু পরিচালক না থাকায় সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি।

সূত্র জানায়, বিমানের পরিচালনা পর্যদের একটি পক্ষ চাচ্ছে পরিচালক পদে বাহির থেকে সরাসরি দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ লোক নিয়োগ দেয়ার। আর অপর পক্ষ বিমানের জেনারেল ম্যানেজার থেকে দক্ষ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে পরিচালক করার পক্ষে। এ নিয়ে চলছে রশি টানাটানি। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওর কথা বিমানের কেউ তোয়াক্কা করছে না। বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো ক্ষমতাও তার নেই। ফলে গত এক বছরেতার ছোটখাটো রুটিন কাজ ছাড়া কোনো বড় সিদ্ধান্তই নেয়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়া গত ৬ মাসে বিমানে ঢালাওভাবে নিয়োগ আর পদোন্নতি নিয়েও ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। অথচ বেশ কজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তারা পদোন্নতি পেয়েছেন। তাছাড়া সম্প্রতি বিমানের সব বিভাগকে জরুরি সেবার আওতায় এনে সংস্থাটিকে অ্যাসেনশিয়াল সার্ভিস ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু অনেক সিবিএ নেতাকর্মীই ওই সিদ্ধান্ত মানছে না। মূলত শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছে না কোনো বিভাগ।

সূত্র আরো জানায়, বিমানে শক্তিশালী প্রশাসন না থাকায় মিসর থেকে লিজে আনা একটি উড়োজাহাজ নিয়ে কেলেঙ্কারির সৃষ্টি হয়েছে। বিমানকে প্রতি মাসে উড়োজাহাজ না চালিয়েই ৫ কোটি টাকার বেশি গুনতে হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যে এই লিজ নিয়ে তদন্তে নেমেছে। ওই উড়োজাহাজ ভাড়ার সাথে সংশ্লিষ্ট বিমানের সাবেক পরিচালক পরিকল্পনা, পরিচালক প্রকৌশলের কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি। তাছাড়া মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগে নিয়মিত পরিচালক না থাকায় বাংলাদেশসহ বিমানের ১৬টি আন্তর্জাতিক স্টেশনে টিকিট বিক্রিতে ভয়াবহ ধস নেমেছে। বিমানের ৩১৯ আসনের ফ্লাইটে গড়ে ১৫০ জনের বেশি যাত্রী হচ্ছে না। ১৬০ আসনের ফ্লাইটে যাত্রী হয় ৪০ থেকে ৬০ জন। আর তা নিয়ে কোনো অফিসের স্টেশন ম্যানেজার, কান্ট্রি ম্যানেজারের বিরুদ্ধে সাধারণ কারণ দর্শানোর নোটিশ পর্যন্ত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর সিদ্ধান্তহীনতায় যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানিতে নির্মাণাধীন দুটি উড়োজাহাজের জন্য এখনো ইঞ্জিন সিলেকশন করা হয়নি। ফলে ২০১৮ সালে বিমান বহরে দুটি উড়োজাহাজ যুক্ত হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোসাদ্দিক আহম্মেদ জানান, যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই লিজ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ঝামেলা দেখা দেয় ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ার পর। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি ইঞ্জিন ভাড়া নেয়া হয়েছিল। তবে সে ইঞ্জিনও ঘন ঘন নষ্ট হতে শুরু করলে কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজটিকে গ্রাউন্ডেড করার সিদ্ধান্ত নেয়। চুক্তি অনুযায়ী সেটি ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিমানের কাছে রাখতে হচ্ছে। তবে আগেই ফেরত দেয়া যায় কিনা তা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *