ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না জামায়াতে ইসলামীর

ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না জামায়াতে ইসলামীর

ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না 

জামায়াতে ইসলামীর 

পাথেয় রিপোর্ট : বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ইসলামের নামে চলা জামায়াতে ইসলামীর ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। সংস্কারপন্থীদের একটি বড় অংশ জামায়াত থেকে বেরিয়ে নতুন দল ঘোষণা করার পর্যায়ে তারা পৌঁছে গেছে। সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর এই ভাঙন ঠেকানোর জন্য কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান মালয়েশিয়া হয়ে এখন লন্ডনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

সংস্কারপন্থীদের অনেকেই দেশের বাইরে থাকায় জামায়াত সেক্রেটারী বিদেশ সফররত আছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু ভাঙন তিনি ঠেকাতে পারছেন না। শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ দলের ঘোষণাও প্রকাশ্যে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলন করে গত শনিবার তাদের ভাঙন উপস্থিতির জানান দিয়েছেন। সুশীল জামায়াতীদের নিয়ে পৃথক একটি রাজনৈতিক দল তারা করতে চান। অবশ্য আওয়ামীলীগ এটি নেতিবাচক হিসেবেই নিয়েছে। সময়ই বলে দেবে কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায়।

সব প্রবাদ একই রকম কি হয়? পুরনো চালে ভাতে বাড়ে। আসলে নতুন জামায়াতে ইসলামী আর পুরনো জামায়াতে কি পার্থক্য? নাকি নতুন বোতলে পুরনো মদ। এমন কথাই বলছেন বিশেষজ্ঞ রাজনীতিকগণ। আদা যতই মরে যাক, পচে যাক এর ঝাঁঝ যায় না। সমহিমায় বহাল থাকে। ২৭ এপ্রিল জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারপন্থী নেতারা তাদের ঘোষণায় কী রেখেছেন। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন। নাকি সেই মওদুদির চিন্তার নতুন সংস্করণ। এতে কি ধর্মীয় বেত্তাদের কাছে তাদের বিরুদ্ধের সাহাবি বিদ্বেষি তকমা ঘোচাতে পারবেন? বিশ্লেষকরা বলছেন, কখনোই নয়। দেশ নিয়ে তাদের যে ভিমরতি তা কখনোই কাটাতে পারবে না নতুন জামায়াতে ইসলামীও।

জানা গেছে, সংস্কারপন্থীদের এই উদ্যোগে মূল দলের বা ছাত্রশিবিরের কেউ যাতে শামিল না হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা নজরদারি বাড়িয়েছেন।
জামায়াত ভাঙনের গুরু দায়িত্বে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামী থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর রহমান (মঞ্জু)। তিনি একসময় ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং পরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন করে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ শুরুর ঘোষণা দেবেন তিনি। এ লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকার একটি মিলনায়তন ঠিক করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অতিথি বা পর্যবেক্ষক হিসেবে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

মজিবুর রহমান গণমাধ্যম জানিয়েছেন, গণ-আকাঙ্ক্ষা, সুশাসন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নতুন রাজনীতির স্বপ্ন দেখছি আমরা। আশা করি, এতে নতুন প্রজন্মের চিন্তা ও মনোভাবের প্রতিফলন ঘটবে।

জামায়াতের এই নতুন সংস্করণে ইসলাম বা জাতীয়তাবাদ প্রাধান্য পাবে না বলেও জানা গেছে। সাম্য ও মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে জামায়াতে ইসলামী সংস্কারপন্থীদের দল এগিয়ে যাবে।

আকস্মিক লন্ডন সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি লন্ডনে বেড়াতে এসেছেন। সংস্কারপন্থীদের তৎপরতা ঠেকানোর লক্ষ্যে লন্ডন সফর কি না, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন কথা আপনার মুখেই প্রথম শুনলাম।

প্রসঙ্গত, দলের সংস্কার ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া নিয়ে সম্প্রতি জামায়াতে বিরোধ দেখা দেয়। যার রেশ ধরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন প্রভাবশালী নেতা আবদুর রাজ্জাক। তিনি দলের জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি ছিলেন। একই বিষয়ে প্রকাশ্য অবস্থান নেওয়ায় দল থেকে বহিষ্কৃত হন মজিবুর রহমান। তিনি নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গঠনের কাজ শুরু করলেও আবদুর রাজ্জাক এ ধরনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত না থাকার কথা বলেছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, আবদুর রাজ্জাক ও মজিবুর রহমানকে নিয়ে চাপে পড়েছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজ্জাকের আইন পেশার ৪০ বছর পূর্তিতে ১২ এপ্রিল লন্ডনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে যাতে দলের কেউ না যান, সেই নির্দেশনা ছিল। এর আগে ২৫ মার্চ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে মানবিক সংহতি জানাতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন মজিবুর রহমান। ওই অনুষ্ঠানেও দলের কেউ যাতে অংশ না নেন, সে জন্য জামায়াতের শীর্ষ পর্যায় থেকে মৌখিকভাবে সাংগঠনিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *