মথুরার যে মন্দিরের জন্য আওরঙ্গজেব ৫ গ্রামের রাজস্ব দান করেন

মথুরার যে মন্দিরের জন্য আওরঙ্গজেব ৫ গ্রামের রাজস্ব দান করেন

ফিরে দেখা । চৌধুরী আতিকুর রহমান

মথুরার যে মন্দিরের জন্য আওরঙ্গজেব ৫ গ্রামের রাজস্ব দান করেন

মুঘল বাদশাহদের প্রায়ই অভিযুক্ত করা হয় তাঁরা বহু মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরি করেছেন। বিশেষ করে আওরঙ্গজেবকে মন্দির ধ্বংসকারী বলে বেশি অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে।

আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের প্রধান নাদিম রাজাভি বলেন, ‘আওরঙ্গজেব ছিলেন আদ্যোপান্ত একজন শাসক। তাঁর লক্ষ্য ছিল শাসন করা। এই কাজটি করতে গিয়ে যেখানে যেটা করা প্রয়োজন তাই করেছেন। তিনি যেমন মন্দির ভাঙ্গেন তেমনই মন্দির তৈরীর অনুদানও দেন।’

আওরঙজেব মথুরা থেকে কুড়ি কিলোমিটার উত্তরে মহাবন তহসিলের বলদেব শহরের ‘দাও জি’ মন্দির মেরামত ও পরিচালনার জন্যে ৫ টি গ্রামের রাজস্ব দান করে গেছেন।
ব্রজেশ কুমার পান্ডে মন্দির পরিচালন কমিটির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি বলেছেন, ব্রজবাসী (পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মথুরা বৃন্দাবন সংলগ্ন এলাকার মানুষদের বলা হয়) প্রায় প্রত্যেকেই কাহিনীটি জানেন। তিনি আরও বলেন একবার আওরঙ্গজেব মন্দির ভাঙতে ভাঙতে মথুরার দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। বলদেব মন্দির এর কথা জিজ্ঞাসা করলে, বলা হয় ৪ ঘন্টার রাস্তা। ৪ ঘন্টা শেষ হওয়ার পর জিজ্ঞাসা করলে বলা হয় এখনও ৪ ঘন্টার রাস্তা। বাদশাহ বিরক্ত হয়ে গিয়ে ভেবে নেন ‘দাও জি’ মন্দির ভাঙ্গা সম্ভব নয়। তখনই তিনি ‘দাও জি’ মন্দিরের জন্য ৫ টি গ্রামের রাজস্ব দান করে যান।

মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক অনিল কুমার পান্ডে প্রায় ৫০০ বছর আগের অনুদানের কথা বলেন। পাঁচটি গ্রাম মানে ৫৮০ একর জমির খাজনা সরকারি ট্রেজারিতে জামা পড়ে এবং জমা পড়া টাকা মন্দির পরিচালনার কাজে এখনও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

মথুরা হল কৃষ্ণের জন্মস্থান। তিনি তার মামা কংসর কারাগারে জন্মালে তাঁর পিতা বাসুদেব শিশু হন্তারক কংসর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য পুত্রকে ঝুড়ীতে বসিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেন। কংসের বিরুদ্ধে সত্য মিথ্যার লড়াইয়ে কৃষ্ণ সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন এবং সব রকম সহায়তা পান জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বলরাম বা বলদেবের কাছ থেকে। এই বলদেব নাম থেকেই গ্রামের নাম বলদেব। যেহেতু কৃষ্ণ তাঁর বড় ভাইকে ‘দাও জি’ বলতেন তাই মন্দিরটির নাম হয় ‘দাও জি’।
‘দাও জি’ মন্দির প্রাঙ্গণে বিখ্যাত দেওর-ভাবির হুরাঙ্গা হোলি খেলা হয়ে থাকে। মন্দিরের যে বড় হলঘরটি তা বাদশাহ আওরঙ্গজেব স্বয়ং তৈরি করে দেন। এরপরও ৫ টি গ্রামের রাজস্ব মন্দিরের ব্যয়ভার বহনের জন্য দান করেন।

হলঘরটির গায়ে এখনও একটি শিলালিপি রয়েছে, তাতে লিখিত রয়েছে;
“মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেব ১৬৭২ খ্রিস্টাব্দে মূল হলঘর (নক্কর খানা) টি নির্মাণ করে দিয়েছেন এবং এর পরিচালনার জন্য ৫ টি গ্রামের রাজস্ব দান করেছেন।”
মথুরার বিখ্যাত ঐতিহাসিক ঘনশ্যাম পান্ডেও আওরঙ্গজেব দ্বারা জমি দানের কথা স্বীকার করেছেন।

ইতিহাসবিদ রাজাভি বলেছেন, শুধু ‘দাও জি’ নয় আওরঙ্গজেব কাশি ও মথুরার বেশ কয়েকটি মন্দিরের জন্য জমি ও অর্থের ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন। এ ছাড়াও পূর্বতন সুলতান ও মুঘল বাদশাহদের শুরু করা নির্মীয়মান মন্দিরগুলিতেও দান করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, আওরঙ্গজেব একজন বাদশাহ ও শাসক ছিলেন। তাঁর কাজে কখনও হিন্দুরা সন্তুষ্ট হয়েছেন কখনও মুসলিমরা সন্তুষ্ট হয়েছেন।
লেখক : পশ্চিববঙ্গের কলামিস্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *