‘মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে পথযাত্রা একটি মাইলফলক’

‘মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে পথযাত্রা একটি মাইলফলক’

মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে পথযাত্রা একটি মাইলফলক : আবদুর রহীম কাসিমী

মাওলানা আবদুর রহীম কাসেমী দারুল উলূম দেওবন্দের একজন ফারেগীন। আকাবির ও আসলাফের অনুসরণে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার কেন্দ্রীয় মহাসচিব তিনি। বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার উদ্যোগে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ৬, ৭, ৮ ও ৯ অক্টোবর, ২০১৮, শনি, রবি, সোম ও মঙ্গলবার বেনাপোল থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত এই পথযাত্রার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যেই পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখি হয়েছেন সময়ের এই হাদিসের উস্তাদ মাওলানা আবদুর রহীম কাসেমী। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহযোগী সম্পাদক মাসউদুল কাদির। গ্রন্থনা করেছেন সহসম্পাদক আদিল মাহমুদ। পাঠকের উদ্দেশ সাক্ষাৎকারের চুম্বুকাংশ উপস্থাপন করা হলো-

 

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আসসালামু আলাইকুম

মাওলানা আব্দুর রহীম কাসিমী : ওয়ালাইকুমুস সালাম

পাথেয় : হযরত, কেমন আছেন আপনি?

মাওলানা আব্দুর রহীম কাসিমী : আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি।

পাথেয় : হযরত, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার উদ্যোগে আলেম-জনতা ঐক্য গড়ার আহ্বানে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক পথযাত্রা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার মহাসচিব হিসেবে আপনার বক্তব্য, আপনার অনুভূতি কী?

মাওলানা আব্দুর রহীম কাসিমী : আলহামদুলিল্লাহ, এই ঐতিহাসিক পথযাত্রা নিয়ে আমার অনুভূতি বলতে গেলে আমি রোমাঞ্চিত। কারণ এই কাজটা যদিও বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা হাতে নিয়েছে, কিন্তু কাজটা সামগ্রিকভাবে এই উম্মতের। এই জাতির। সর্বশ্রেণীর মানুষের। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমাদের সকলেরই দায়িত্ব। কিন্তু আফসোস হল এখানে, এই কাজটা বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা কেবল হাতে নিল, অথচ প্রয়োজন ছিল দল-মত নির্বিশেষে সবাই একাত্মতা ঘোষণা করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা।

পাথেয় : বাংলাদেশে অন্যান্য যত রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক সংগঠন আছে, ওইসব সংগঠনকে এই ঐতিহাসিক পথযাত্রায় শরীর হওয়ার আহ্বান জানাবেন কী?

মাওলানা আব্দুর রহীম কাসিমী : অবশ্যই জানাচ্ছি। আমাদের এই পথযাত্রা কোন রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটা একটি জাতীয় বিষয়। সামগ্রিক বিষয়। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির কুফল যেহেতু সবাই ভোগ করছে, তাই এই পথযাত্রায় সামগ্রিকভাবে শরীক হওয়া সবারই দায়িত্ব।

পাথেয় : সামনে জাতীয় একাদশ নির্বাচন। আপনি হয়তো মিডিয়াতে দেখতে পাচ্ছেন সবকিছুর সরগরম হয়ে আছে নির্বাচন নিয়ে। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে এখন নির্বাচনী আবহ ছড়িয়ে পড়েছে। ঠিক এই মূহুর্তে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার কোন রাজনৈতিক বা নির্বাচনী পদক্ষপ আমরা দেখছি না, একটি সামাজিক পদক্ষেপ নিয়ে আপনারা পথে নামছেন। এই বিষয়ে যদি একটু বলেন?

মাওলানা আব্দুর রহীম কাসিমী : নির্বাচন দেশ পরিচালনার একটি মৌলিক বিষয়। কিন্তু এই মৌলিক বিষয়টার কারণে কি এখন অন্যান্য সব কাজগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের এই ঐতিহাসিক পথযাত্রার সাথে নির্বাচনের কোন সম্পর্ক নেই। নির্বাচনের সময় ছাড়াও যেমন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি আমাদের জন্যে ক্ষতিকর। ঠিক এমনি ভাবে নির্বাচনের সময়ও সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি আরো বেশি ক্ষতিকর। অতএব আমি মনে করি, নির্বাচনের সুন্দর, শক্তিশালী করার জন্যে আমাদের এই পদক্ষপ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ পালন করবে।

পাথেয় : বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা যেহেতু জমিয়তে উলামা হিন্দের আদলে চলে। আর আমরা দেখি জমিয়তে উলামা হিন্দের অনেকেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে নেতৃত্বলাভ করেন এবং স্থানীয় প্রতিনিধি হয়ে থাকেন। এখন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার কেউ কি নির্বাচন করার কোন আগ্রহ প্রকাশ করছেন?

মাওলানা আব্দুর রহীম কাসিমী : বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা যেহেতু সম্পুর্ণরূপে একটি অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন। তাই বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার কেউ যদি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে চায় তাহলে সে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবে আমাদের কোন বাধা নেই। তবে জমিয়তুল উলামার ব্যানারে কেউ নির্বাচন করতে পারবে না। কারণ বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়, একটি অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন।

পাথেয় : আপনাদের এই ঐতিহাসিক পথযাত্রা যদি সফল হয়, তাহলে কি আপনারা মনে করবেন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক পথযাত্রা বড় একটি লড়াই হিসেবে কাজ করবে?

মাওলানা আবিদুর রহীম কাসিমী : অবশ্যই বড় লড়াই হিসাবে কাজ করবে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা তো আর মদের লাইসেন্স বন্ধ করতে পারবো না। আমরা তো মদের দোকানে গিয়ে হামলা করতে পারবো না। আমাদের কাজ হলো সচেতনতা সৃষ্টি করা। যাতে করে প্রত্যেকে তার নিজের জন্যে এটা ক্ষতিকর মনে করে, তার পরিবার, দেশ ও জাতির জন্যে ক্ষতিকর মনে করে।

পাথেয় : আপনারা বলছেন আলেম-জনতা ঐক্য গড়ার আহ্বানে এই পথযাত্রা। আসলে কি আলেম-জনতার মাঝে কোন ফাটল আছে এখন? আমরা তো আলেম জনতার মাঝে কোন ফাটল দেখছি না। আপনারা এখন এই স্লোগানটাকে কেন সামনে নিয়ে এলেন?

মাওলানা আবিদুর রহীম কাসিমী : আসল কথা হচ্ছে মানুষ যখন অনৈক্যের মধ্যে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন তার কাছে অনৈক্যটাই ঐক্য মনে হয়। আমরা দীর্ঘদিন থেকে অনৈক্যের মধ্যে বসবাস করছি। ইংরেজরা এই দেশে এসে প্রথমেই যে কাজটা করতে চেয়েছে এবং অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে সেটা হলো, জনসাধারণকে উলামায়ে কেরামের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, উলামায়ে কেরামদের থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া। আর এই ক্ষেত্রে ইংরেজরা অনেকটাই সফল হয়েছে। যার জন্যে আমরা এখন বিভিন্ন শ্রেণীতে আবদ্ধ হয়ে গেছি। আমাদের মাঝে এখন ঐক্য নেই। আর আলেম-জানতার ঐক্য গড়া- এটা নতুন কোন স্লোগান নয়, বরং এটা রাসূল সা. এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই উলামায়ে কেরামদের ওরাসতের দায়িত্ব দিয়েছেন। উলামায়ে কেরাম জনসাধারণের মধ্যেই তো দ্বীন প্রচার করবে। ওরাসাতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রই তো হচ্ছে জনসাধারণ। আর ইসলামের বুনিয়াদ গড়ে ওঠে আলেম-জনতার ঐক্যে মাধ্যমেই।

পাথেয় : বাংলাদেশে তাবলীগ নিয়ে এখন আলেম ও জনসাধারণের মধ্যে যে ফাটল দেখা দিয়েছে, আপনারা কি এই পথযাত্রার মাধ্যমে আলেম ও জনসাধারণের এই ফাটল দূর করতে চান?

মাওলানা আবিদুর রহীম কাসিমী : শুধু কেবল তাবলীগ জামাত নয়, যত জামাতই আছে সবার ক্ষেত্রে আমাদের কথা শুধু একটাই, যেটা আমাদের আকাবিরদের কথা, যেটা দেওবন্দের কথা, যেটা দেওবন্দীয়ত, যেটা রাসূল সা.এর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, আলেম-জনতা এক ও অভিন্ন থাকবে চিরদিন। জনসাধারণ চলবে উলামায়ে কেরামের সাথে। ইংরেজ , ইহুদী-নাসারা ও মুনাফিকের দোসররা এখনও আলেম ও জনতার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করার চক্রান্ত করছে। কারণ উলামায়ে কেরামদের থেকে জনসাধারণকে দূরে সরিয়ে দিলে তারা তাদের আদর্শ জনসাধারণের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করাটা সহজ হয়ে যাবে।

পাথেয় : আলেম-জনতা ঐক্য গড়ার আহ্বানে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক পথযাত্রায় কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

মাওলানা আব্দুর রহীম কাসিমী : আলহামদুলিল্লাহ আমরা সারাদেশ থেকে এর ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এটা যেহেতু বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার একক কোন বিষয় নয়, এটা আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবের একক কোন বিষয় নয়, তাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শ্রেণীর মানুষ থেকে সর্বনিম্ন শ্রেণীর মানুষ তাদের দায়িত্ব মনে করে আমাদের এই পথযাত্রায় সাড়া দিচ্ছেন। আমরা সবাই এক সাথে আলেম-জনতা ঐক্য গড়ার আহ্বানে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবো ইনশাআল্লাহ।

পাথেয় : আলেম ও জনতার মধ্যে যদি ঐক্য তৈরী হয়, তাহলে কি দেশ কোন লাভবান হবে?

মাওলানা আব্দুর রহীম কাসিমী : অবশ্যই দেশ লাভবান হবে। আলেম-জনতার মধ্যে যখন ঐক্য সৃষ্টি হয়ে যাবে তখন উলামায়ে কেরাম কুরআন-হাদীসের কথা বলবেন, জনসাধারণ কুরআন-হাদীসের কথা গ্রহণ করবে। উলামায়ে কেরাম সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবেন, জনসাধারণ তা গ্রহণ করবে। তারা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি থেকে দূরে থাকবে। তো এটা সর্বপ্রথম দেশের লাভ হবে।

পাথেয় : হযরত, সময় দেয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।

মাওলানা আব্দুর রহীম কাসিমী : আপনাকেও ধন্যবাদ।

02
সাক্ষাৎকার শেষে মাওলানা আবদুর রহীম কাসেমীর সঙ্গে করমর্দন করছেন পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহযোগী সম্পাদক মাসউদুল কাদির

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *