মাদক জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে আল্লামা মাসঊদের পথযাত্রা সমাপ্ত

মাদক জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে আল্লামা মাসঊদের পথযাত্রা সমাপ্ত

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ৪ দিনব্যাপি ঐতিহাসিক পথযাত্রার সর্বশেষ দিন মঙ্গলবার বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার উদ্যোগে আলেম-জনতা ঐক্য গড়ার আহ্বানে, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান,  শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, শাইখুল হাদীস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।

মাদক যুবসমাজকে নষ্ট করে দিচ্ছে মন্তব্য করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্মপ্রাণ দেশ। এদেশের যুবকেরা ধর্মপ্রেমী। ইসলাম, ধর্ম ও দ্বীনের প্রতি এতো টান অন্যান্য দেশের যুবকদের মাঝে কমই দেখা যায়। কিন্তু পরিকল্পিত ভাবে কিছু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি আমাদের দেশের উন্নতি সহ্য করতে না পেরে আমাদের যুব সমাজকে মদ-নেশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকাসক্ত করে তাদের জীবনকে নষ্ট করার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি যুবকদের জীবন নষ্ট করে দিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ আর কখন বিশ্বেরদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।

দুর্নীতি দেশের উন্নতি নষ্ট করে দেয় দাবী করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধি। সমাজের সর্বত্র দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এদেশের এই উন্নয়নের ধারা আকড়ে রাখতে হলে আমাদেরকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজটা উঠাতে হবে, যাতে করে মানুষ সচেতন হতে পারে।

বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার উদোগ্যে আলেম-জনতা ঐক্য গড়ার আহ্বানে, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি বিরুদ্ধে দেশব্যাপি ঐতিহাসিক পথযাত্রার সর্বশেষ দিন ৯ অক্টোবর মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ পুরান বাস স্ট্যান্ডের সমাপনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

হযরত ইলিয়াস রহ. উম্মতের মধ্যে বিভক্তি করার জন্যে তাবলীগ জামাত তৈরি করেননি দাবী করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, হযরত ইলিয়াস রহ. ইসলামের প্রচার-প্রসার, মানুষের দ্বীনের হেফাজত, জনসাধারণকে উলামায়ে কেরামের সাথে জুড়িয়ে দেয়ার জন্যে তাবলীগ জামাত তৈরি করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার জন্যে নয়। কাউকে নাস্তিক-মুরতাদ বলে ফাতওয়া দেয়া জন্যে নয়। মসজিদে মসজিদে মারামারি জন্যে ইসলাম আসেনি। ইসলাম প্রেম ও ভালোবাসার ধর্ম। ইসলাম মানুষকে ভালোবাসতে শিখায়। দ্বীনকে মহব্বতের নামে মসজিদে মসজিদে মারামারি করে, মসজিদ থেকে কাউকে বের করে দেয়ার জন্যে ইসলাম আসেনি।

বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা চেয়ারম্যান বলেন, তাবলীগের মাধ্যমে সারাবিশ্বে সুন্দর একটা দাওয়াতি কাজ চলছিল। তাবলীগের সাথীরা পৃথিবীর সর্বত্রে দ্বীনের প্রচার-প্রসার করছিল। কিছুদিন আগে যারা একই দস্তরখানায়, এই প্লেইটে বসে একসাথে খানা খেয়েছে, এখন তাদের মাঝে বিভজন সৃষ্টি হওয়ার করণে তারা ইহুদী-খৃষ্টানদেরকে সহ্য করতে পারে কিন্তু তার অপর পক্ষের সাথীকে সহ্য করতে পারে না।

আল্লামা মাসঊদ বলেন, মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রেম-ভালোবাসাকে ইসলাম পছন্দ করে। বিভাজন-বিদ্বেষকে নয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- ‘আল্লাহর জন্যে মানুষকে ভালোবাসা’। তাবলীগের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ভুলে আলেম-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাবলীগের কাজকে বেগবান করার আহ্বান জানান তিনি।

কওমি মাদরাসা স্বীকৃতি প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি প্রদান করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি ইসলাম ও উলামায়ে কেরামকে ভালোবাসেন। শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি না থাকার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারছিল না, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে এখন বিশ্বের দরবারে শিক্ষিত হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছেন।

ঐতিহাসিক পথযাত্রা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা ইয়াহয়া মাহমুদ বলেন, আল্লামা মাসঊদ উলামায়ে কেরামের অভিবাবক। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী মানবকল্যাণে শান্তির ফতোয়া প্রকাশ করে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন কওমি মাদরাসায় কোন জঙ্গি নেই।

জনসভায় বক্তব্য দেন, মাওলানা আব্দুর রহীম কাসেমী, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাইফী, মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসেমী, মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকী, মুফতি তাজুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা সদরুদ্দিন মাকনুন, মাওলানা আইয়ুব আনসারী, মাওলানা আব্দুল আলীম ফরীদী, মাওলানা সাঈদ নিজামী, দারুল হাদিস তেঘরিয়া মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা আনোয়ার হুসাইন, মাওলানা আবদুল্লাহ  প্রমুখ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার উদোগ্যে আলেম-জনতা ঐক্য গড়ার আহ্বানে, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি বিরুদ্ধে দেশব্যাপি ঐতিহাসিক পথযাত্রা ৬ অক্টোবর শনিবার সকাল ১১টার দিকে যশোরের চাঁচড়ার মোড়ের জনসভা মাধ্যমে শুরু করেছেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম শাইখুল হাদিস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। তারপর ওইদিনই বিকাল ৫টার দিকে শহীদ হাদীস পার্ক খুলনাতে আরো একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। পরেদিন ৭ অক্টোবর রোববার সকাল ১০টার সময় ঘোনাপাড়া গোপালগঞ্জে একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়, তারপর ভাঙ্গা ফরিদপুরে দুপুর ২টার দিকে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিনই বিকেল ৫টার সময় শিবচর মাদারীপুরে আরো একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর কুচিয়া মোড়া কলেজ মাঠ মুন্সিগঞ্জে রাত ৮টার দিকে রোববারের সর্বশেষ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ৮ অক্টোবর সোমবার সকাল ১০টার দিকে ভেলানগর নরসিংদীতে একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর দুর্জয় মোড় ভৈরবে দুপুর ১২টার দিকে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর বিশ্বেরোড ব্রাক্ষণবাড়িয়াতে ২টার সময় আরো একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। আসরের নামাজের পর মিরপুর বাহুবল হবিগঞ্জে আরো একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৮টার দিকে মৌলভীবাজার একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। অতপর রাত ১০টার দিকে নয়াসড়ক, সিলেটে পথসভার মাধ্যমে সোমবারের কর্মসূচি শেষ হয়। পরেদিন দিন ৯ অক্টোবর মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ পুরান বাস স্ট্যান্ড সর্বশেষ জনসভা ও সমাপনী দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *