মুক্তিযুদ্ধ কখনো ইসলাম ও ইসলামী চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক ছিল না

মুক্তিযুদ্ধ কখনো ইসলাম ও ইসলামী চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক ছিল না

  • আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ

বাঙ্গালীদের বঙ্গভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর প্রধান অংশের অবস্থান বাংলাদেশের ভৌগলিক স্বাধীনতা দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয় দিবস। আজ তার ৪২তম উদযাপন ক্ষণটির মাসে বর্ষপরিক্রমায় পৌঁছেছি আমরা। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মা বোনের সম্ভ্রমক্ষয়ী, লুণ্ঠনময় এক মহা আহবের  মাধ্যমে উপার্জিত আমাদের বিজয়। শেষ দিনটি পর্যন্ত জালিম বর্বর হানাদার বাহিনী নৃশংস পোড়ামাটি নীতি অবস্থান করে শেষ করে দিতে চেয়েছিল এই অঞ্চলের বঙ্গ ভাষাভাষিগণের পরম জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব। কিন্তু পারেনি। আল্লাহ কখনও জালিম শক্তির সাথে নেই। তাই আল্লাহ পাক তাদের সফল হতে দেননি। আত্মসমর্পণে বাধ্য হলো পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বিরাট সংখ্যক স্বশস্ত্র সেনা।

আল্লাহ তো মজলুমের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের একজন নগণ্য শরীক হিসেবে স্বাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহর কাছে দুআ করে, আল্লাহ পাককে স্মরণ করতে করতে সম্মুখ সমরে এগিয়ে যেত দামাল ছেলেরা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কখনো ইসলাম ও ইসলামী চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক ছিল না। মজলুমের অধিকার রক্ষায় সংগ্রাম কখনো ইসলাম বিরোধী নয়। আল্লাহ তো মজলুমের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের একজন নগণ্য শরীক হিসেবে স্বাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহর কাছে দুআ করে, আল্লাহ পাককে স্মরণ করতে করতে সম্মুখ সমরে এগিয়ে যেত দামাল ছেলেরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যারা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক দাঁড় করাতে চায় এরা মূলত ইতিহাস বিকৃতির দূষণে দুষ্ট।

ইসলামের দৃষ্টিতে কেবল ভৌগলিক ও আর্থ সামাজিক স্বাধীনতাই বিজয়ের চূড়ান্ততা নয়

তবে আজ বিয়াল্লিশ বছরের মাথায় এসে বলতে বাধ্য হতে হয় ভৌগলিক স্বাধীনতার দিকটি ছাড়া স্বাধীনতার সুফল তো আমজনতার দুয়ারে পৌঁছায়নি আজো। নসিমন-ছমীরণ আজো কর্পোরেট মহাজনদের নিগ্রহের শিকার। রহিম, করিমরা তো এখনো রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপরায়ণতার থাবা থেকে মুক্তি পায়নি। কিশোরীর লাশ পাতাবনে নির্মম থাবায় ক্ষতবিক্ষত। বিজয়ের চূড়ান্ত শিখর কোথায়? আজো তা অজানা। ইসলামের দৃষ্টিতে কেবল ভৌগলিক ও আর্থ সামাজিক স্বাধীনতাই বিজয়ের চূড়ান্ততা নয়। যতক্ষণ একজন মানুষ পূর্ণ মানুষে রূপান্তরিত না হতে পেরেছে ততক্ষণ তো সে পশু। বরং অনেক ক্ষেত্রে পশুর চেয়েও অধম। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বলশালী তো সে নয় যে লড়াইয়ে একজনকে কুপোকাত করল। প্রকৃত বলশালী হলো ওই ব্যক্তি যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো। মুহাজির তো সে নয় যে দেশ ত্যাগ করলো আসলে মুহাজির হলো, যে ব্যক্তি আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজগুলো বর্জন করতে পারলো।

নিজের উপর বিজয়ী হতে পারল না যে জন সে মৌল বিজয়ের স্বাদ পাবে কখন?

কিন্তু আমরা আজ কী দেখি, রাজনৈতিক বলি, ব্যবসায়ী বলি, শিক্ষিত বলি, পেশাজীবী বলি,  বুদ্ধিজীবী বলি প্রতিটি জন আজ প্রবৃত্তি ও পশুতার সাথে লড়াইয়ে নিয়ত কুপোকাত হচ্ছে, চিৎপটাং হচ্ছে। একান্ত অসহায়ের মতো পশুত্বের হাতে আত্মসমর্পণ করছে। কি যাদুতে যেন প্রতিরোধের উপায়, স্বীয় প্রতিরক্ষা শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। বিজয়ের প্রকৃত তাৎপর্য থেকে হৃদয় অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়েছে। নিজের উপর বিজয়ী হতে পারল না যে জন সে মৌল বিজয়ের স্বাদ পাবে কখন? সবার উপলব্ধি আরো শাণিত হওয়া দরকার। নইলে বিজয়ের সুফল অধরাই থেকে যাবে। বিজয়ের মোক্ষমতা যোজন যোজন দূরই থেকে যাবে। দিল্লী হনুয দূর আস্ত।

২০১৩ সাল হিসেবে ৪২ বছর, আজকের হিসেবে ৫৩ বছর

সম্পাদকীয়, মাসিক পাথেয় ২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *