মৌলভীবাজার জেলা ইজতেমা ৮ নভেম্বর

মৌলভীবাজার জেলা ইজতেমা ৮ নভেম্বর

পাথেয় রিপোর্ট : কওমীপন্থী শীর্ষ আলেম ও তাবলীগের অপর পক্ষের একটি অংশের সাথে ঐক্যমত ছাড়াই মৌলভীবাজারে শুরু হচ্ছে জেলা ইজতেমা। সারাবিশ্বে মুসলিম ধর্মালম্বীদের অরাজনৈতিক ও সর্ববৃহৎ ধর্মীয় জামাত তাবলীগে দু’টি গ্রুপের মধ্যে তীব্র বিভক্তি ও বিভাজন বিদ্যমান। এরকম প্রেক্ষাপটে কওমীপন্থী শীর্ষ আলেম ও তাবলীগের অপর পক্ষের একটি অংশের সাথে ঐক্যমত ছাড়াই মৌলভীবাজারে শুরু হচ্ছে এ জেলা ইজতেমা। তাবলীগ জামাতের শুরা সদস্য এ,এইচ এম ময়নুল ইসলাম তিনদিন ব্যাপী জেলা ইজতেমা আয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

আগামী ৮ নভেম্বর থেকে সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের সিএনজি পাম্পের সামনে গণপূর্ত বিভাগের প্রকল্প এলাকা উপশহরে শুরু হবে তিনদিন ব্যাপী এই জেলা ইজতেমা।

ময়নুল ইসলাম বলেন, সবরকম আইনি প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। প্রশাসন ইতিমধ্যই ইজতেমা আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে। এখন মাঠ প্রস্তুতের পালা। গত ইজতেমায় মাঠ প্রস্তুতের জন্য সময় ছিল পর্যাপ্ত, এবছর সময় যেহেতু কম তাই আমরা ডেকোরেটার্সসহ আমাদের তাবলীগের বিভিন্ন থানার সাথিদের সমন্বয়ে মাঠের প্যান্ডাল তৈরির কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ করবো।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি তাবলীগে একটি অনাকাঙ্খিত সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দু’দলে ভাগ হয়ে গেছে সবরকম দলাদলি ও সমালোচনার উর্ধ্বে থাকা দ্বীনি এ জামাতটি। এতে বিশ্বব্যাপী তাবলীগ জামাতের ভাবমূর্তি অনেকটা ক্ষুন্ন হয়েছে। তাই এসব কারনে এবারের জেলা ইজতেমায় বিদেশী তাবলীগ জামাতের সাথিরা নাও আসতে পারেন। তবে এ জেলা ইজতেমায় বহির্বিশ্ব তাবলিগের সাথিরা না আসলেও কাকরাইলের শীর্ষ মুরব্বিরা তাতে অংশ নেবেন বলে আমরা নিশ্চিত করেছি।

একবছরের মধ্যে দু’টি জেলা ইজতেমা আয়োজনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মইনুল ইসলাম জানান, তাবলীগ জামাতে একটি বিভক্তি বিদ্যমান, যার কারনে আমাদের তাবলীগ জামাতের একটি বড় অংশ বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে, এই বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষেই মূলত দ্রুত সময়ের মধ্যে আরেকটি জেলা ইজতেমা আয়োজন করতে হচ্ছে।

মৌলভীবাজার জেলা তাবলিগের আরেক পুরনো সাথী মাঈনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, আলহামদুিলল্লাহ! আমাদের সব কাজ প্রায় সম্পন্ন। আমরা প্রশাসনের অনুমতি পেয়ে গেছি, যা নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছিল। সবকিছু ঠিক থাকলে
আগামী ৮ নভেম্বর আমাদের জেলা ইজতেমা শুরু হবে।

মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল জানান, ইজতেমা আয়োজনের জন্য তারা আমাদের কাছে অনুমতি চাইলে সবকিছু বিবেচনা করে আমরা অনুমতি দিয়েছি। প্রশাসন ইজতেমা আয়োজনে সার্বিক নিরাপত্তা দেবে বলেও জানান তিনি।

চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি প্রথমবারের মত প্রশাসনের দুই স্থরের ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে লাখো মানুষের অংশগ্রহনে শুরু হয়েছিল প্রথমবারের মত মৌলভীবাজার জেলা ইজতেমা। একবছর যেতে না যেতেই বছরের শেষ প্রান্তে পূনরায় আবারো শুরু হচ্ছে মৌলভীবাজার জেলা ইজতেমা।

পুরো পৃথিবীতে কোনওরকম দল-মত ছাড়াই তাবলিগ জামাত ইসলাম ধর্ম ও দ্বীনের কাজ প্রচার করে আসছিলো। একমাত্র এ দলটিই সবরকম বিতর্ক ও সমালোচনার উর্ধ্বে থেকেই একমনে তাদের কাজ করে আসছিল প্রায় ১শতাব্দি ধরে। পৃথিবীর সবখানেই পৌঁছে দিচ্ছিলো এক অাল্লাহর বাণী। পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে পৌঁছৈ দিচ্ছিলো কালেমার কথা। এখানে সবাই যেন দ্বীনের খাদেম। সবাই এক। তাদের মাঝে কোনও ভেদাভেদ নেই। কোনও তফাৎ নেই। সবাই সাথী ভাই। সবাই দ্বীনি মেহনতে নিবেদত প্রাণ।

কিন্তু সেই তাবলিগই কিনা আজ বেশ কিছুদিন ধরে সমালোচনার প্রধান খোরাক। ইসলাম ধর্ম প্রচারে সবচেয়ে নিরঙ্কুশ এ দলটির ব্যাপারে চলছে নানা ধরণের অপ্রীতকর কথাবার্তা। তাবলিগে চলে এসেছে বিভক্তি। কেউ এতাআতী আর কেউ ওয়াজাহাতীর নামে নিজেদের ভেতরেও নিয়ে এসেছে দ্বন্দ্ব। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে কেউ কেউ আবার এই তাবলীগকেই ব্যবহার করার হিংস্র পায়তারা চালাচ্ছে। এ নিয়ে সারাদেশে সাধারণ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা উদ্বিগ্ন। সাধারণ তাবলিগের সাথিরা বলছে, আমরা আল্লাহর কাছে দুআ করছি। আল্লাহ এই যেন এই অবস্থার পরিবর্তন করে দেন। জেলা ইজতেমার মাধ্যমে যেন সবাই এক হয়ে যায়। নিজেদের ভেতরকার বিভ্রান্তিগুলো নিরসন হয়ে যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *