রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতিলাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৮৭৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ কবিকাহিনী ’প্রকাশিত হয়। এ সময় থেকেই কবির বিভিন্ন ঘরানার লেখা দেশ-বিদেশে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেতে থাকে। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘গীতাঞ্জলী’। এই বইয়ের জন্য কবি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
কবির ওপর প্রকাশিত বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাখ ঠাকুর মূলত কবি। তার মৌলিক কাব্যগ্রন্থ ২৫টি। তবে বাঙালি সমাজে তার জনপ্রিয়তা সংগীতেও রয়েছে। তিনি দুই হাজার গান রচনা করেন। অধিকাংশ গানে সুরারোপ করেন। তার সমগ্র গান ‘ গীতবিতান’ গ্রন্থে রয়েছে। কবির লেখা ‘ আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবির লেখা। জীবিতকালে তার প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ হচ্ছে
৫২টি, উপন্যাস ১৩, ছোটগল্প’র বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্হ ৩৬টি, নাটকের বই ৩৮টি। কবির মত্যুর পর ৩৬ খণ্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী ’ প্রকাশ পায়। এ ছাড়া ১৯ খণ্ডে রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র।’ ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত কবির আঁঁকা চিত্রকর্ম’র সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।
বর্ণাঢ্য জিবনের অধিকারী রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর দীর্ঘ রোগভোগের পর বাংলা ১৩৪৮ সালের বাইশে শ্রাবণ (ইংরেজী ৭ আগস্ট-১৯৪১) মৃত্যুর সাথে আলিঙ্গন করেন।
তিনি মরেও অমর হয়ে আছেন উভয় বাংলার প্রতিটি মানুষের হৃদয়গভীরে। এপার বাংলায় ” আমার সোনার বাংলা” জাতীয় সংগীতের জন্য আমাদের হৃদয়ে গ্রথিত তার প্রতি গভীর ভালবাসা। রবিন্দ্র সাহিত্য চর্চায় আমরা বিস্তৃত করতে পারি ভালবাসার এ ক্ষুদ্র পরিসর।