শিক্ষক লাঞ্ছনায় অব্যাহতি পেলেন সেলিম ওসমান

শিক্ষক লাঞ্ছনায় অব্যাহতি পেলেন সেলিম ওসমান

পাথেয় টোয়েন্টি ফোর ডটকম : অব্যাহতি পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমান। বাংলাদেশের অলিগলিতে টনক নড়া সেই বিখ্যাত শিক্ষক লঞ্ছনার ঘটনায় আদালত তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত সেলিম ওসমানের বিচার করার কোনো উপদান দেখতে পায়নি বলে জানিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের স্কুল শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে তারই স্কুল প্রাঙ্গণে লাঞ্ছিত করার যে ঘটনায় সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম এ কে এম এমদাদুল হক মঙ্গলবার এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সন্তান সেলিমকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।

তবে এ মামলার আরেক আসামি অপুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তার বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন বিচারক। ১৮ ডিসেম্বর এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণে দিন ঠিক করে দিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে তারই স্কুলের প্রাঙ্গণে লাঞ্ছিত করা হয়।

স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান স্কুল শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে তারই স্কুল প্রাঙ্গণে ওই ঘটনার ভিডিওতে প্রধান শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বসের নির্দেশ দিতে দেখা যায়।

এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সবখানে নিজেরা কানধরে ওঠবস করে প্রতিবাদ জানায়। সরকারের মন্ত্রীরাও সে সময় সেলিম ওসমানের ভূমিকার জন্য সমালোচনায় মুখর হন।

তবে জাতীয় পার্টির নেতা সেলিম ওসমান সে সময় কোনো ‘ভুল করেননি’ দাবি করে ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করেন।

ওই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হলে ‘লাঞ্ছনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ বলে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ।

পুলিশ প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে হাইকোর্ট এরপর পুরো ঘটনার বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেয়। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গত বছরের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্টে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করে।

তিন দিন পর গত বছরের ২২ জানুয়ারি বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে জিডিসহ বিচারিক নথিপত্র অবিলম্বে ঢাকায় পাঠাতে নির্দেশ দেয়।

হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে দেশের আইন নিরপেক্ষ ও বৈষম্য ছাড়া প্রয়োগ করা। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন, সবাই আইনের অধীন। এটি আইনের শাসনের মর্মবাণী। বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা ওই ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। বিচারের স্বার্থে এটি যথাযথ বলে প্রতীয়মান হয়।

দোষীদের বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করার জন্য জিডিসহ বিচারিক নথিপত্র গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিচারক জেসমিন আরার কাছে পৌঁছালে সেলিম ওসমান ও অপু নামের একজনকে তলব করেন বিচারক। সেলিম ওসমান আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনও নেন।

কিন্তু এরপর আসামিপক্ষ বার বার সময়ের আবেদন করায় অভিযোগ গঠনের শুনানি আটকে থাকে প্রায় দেড় বছর। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার সকালে সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে সেই শুনানি ‍শুরু হয়।

নারায়ণগঞ্জের এই সাংসদের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রায়হান, সিদ্দিকুর রহমান ও মোজাম্মেল হক। তারা বলেন, তাদের মক্কেল সেলিম ওসমান সেদিন শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। কোনো অপরাধ তিনি করেননি। সুতরাং তাকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।

শুনানি শেষে বিচারক সেলিম ওসমানকে অব্যাহতি দিয়ে অপর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ঠিক করে দেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *