- আব্দুল্লাহ তাহসীন লাবীব ফরীদী
সকল প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি সমস্ত জাহানের প্রতিপালক এবং আমাদের একমাত্র রব দুরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক দু জাহানের বাদশা পেয়ারে হাবিব পেয়ারে রাসূল সাঃ এর উপর এবং তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের উপর যার অনুসরণ অনুগত্য ভালোবাসা ছাড়া আমাদের ইহকাল পরকালে কোন শান্তিও কল্যাণ আসবে না। যারা মনে প্রাণে আল্লাহ এক তার কোন শরিক নাই তিনিই একমাত্র ইলাহ এবং রাসূল সাঃ তার প্রেরিত রাসূল এবং রাসূল সাঃ এর আনিত সকল বিষয়ের উপর বিশ্বাস করে আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্যই জান্নাত রেখেছেন। আর যারা আল্লাহকে ইলাহ হিসাবে মেনে নেয় না, রাসূল সাঃ আনিত বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না, অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক করে। আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য জাহান্নাম রেখেছেন। এই পৃথিবী হচ্ছে মানুষের জন্য আখেরাতের শান্তিময় জীবন যাপন করার জন্য কর্মস্থল।
সুতরাং আবার যখন মানুষরা তার রুবুবিয়্যাত ও উলুহিয়্যাত ভুলে গিয়ে শিরকের মাঝে লিপ্ত হয় তখন আল্লাহ তায়ালা এই সব মানুষদেরকে হেদায়েতের পথে আনার জন্য অগনিত রাসূল নবীদের কে পাঠিয়েছেন যাতে মানুষরা শিরক থেকে সরে আসে।
মানুষ যেন এখানে আল্লাহ তায়ালার তাওহীদে বিশ্বাসী হয় সেজন্যে আল্লাহ তায়ালা রুহ জগতে থাকাকালীন আমাদের থেকে রুবুবিয়্যাতের সেচ্ছায় স্বীকার করে নিয়েছেন তেমনিভাবে দুনিয়াতে পাঠানোর আগেও রব হিসাবে স্বীকৃতি নিয়ে পাঠাইছেন।
এই সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِن بَنِي آدَمَ مِن ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ ۖ قَالُوا بَلَىٰ ۛ شَهِدْنَا ۛ أَن تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَٰذَا غَافِلِينَ
অর্থ: আর স্মরণ করো! তোমার প্রভু আদমের বংশধরদের থেকে — তাদের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তান-সন্ততি এনেছিলেন, আর তাদের নিজেদের সন্বন্ধে তাদের সাক্ষ্য দিইয়েছিলেন ”আমি কি তোমাদের প্রভু নই? তারা বলেছিল ”হাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি। আবার না তোমরা কিয়ামতের দিনে বলো যে ”আমরা তো এ বিষয়ে অজ্ঞাত ছিলাম। (সুরা আরাফ। আয়াত নং ১৭২)
এই আয়াত থেকে ও বুঝে আসে যে আমরা রুহ এর জগত ও সাক্ষ্য দিয়ে আসছি আল্লাহ এক তিনি আমাদের রব। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তার সাথে শিরক করার তো কোন প্রশ্নই আসে না।
সুতরাং আবার যখন মানুষরা তার রুবুবিয়্যাত ও উলুহিয়্যাত ভুলে গিয়ে শিরকের মাঝে লিপ্ত হয় তখন আল্লাহ তায়ালা এই সব মানুষদেরকে হেদায়েতের পথে আনার জন্য অগনিত রাসূল নবীদের কে পাঠিয়েছেন যাতে মানুষরা শিরক থেকে সরে আসে।
অগণিত নবী রাসূলদেরকে পাঠিয়েছেন সেই সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۚ
অর্থ: আর আদ জাতির প্রতি আমি তাদের ভাই হুদ আ:কে প্রেরণ করি তিনি বলেন হে আমার জাতি তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নাই। (সুরা হুদ।আয়াত নং ৫০)
وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ
অর্থ: আর সামুদ জাতির জন্য তাদের ভাই সালেহ আ: কে প্রেরণ করি। তিনি বলেন হে আমার জাতি তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নাই। (সুরা হুদ।আয়াত ৫৯)
وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ
অর্থ: মাদয়ান বাসীদের জন্য আল্লাহ তায়ালা শুয়াইব আ: কে প্রেরণ করি। তিনি বলেন হে আমার জাতি তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নাই। (সুরা হুদ আয়াত ৮৪)
এসব আয়াত দ্বারা প্রমানিত হয় যে, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক জাতির জন্য অগণিত নবী রাসূলগণ পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করার জন্য। কেউ যেনো আল্লাহর সাথে শিরক না করে। যারা আল্লাহর সাথে শিরক করে তাদেরকে হিদায়াতের পথে আনার জন্য।
আর যারা নবী রাসূলদের পথে চলেছে এবং ইমান এনেছে তারাই সফল। সেই সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِيرُ
অর্থ: নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়। এটাই মহা সফলতা। (সুরা বুরুজ আয়াত ১১)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَيُدْخِلُهُمْ رَبُّهُمْ فِي رَحْمَتِهِ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْمُبِينُ
অর্থ: সুতরাং যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তো তাদের প্রতিপালক নিজ রহমতের ভেতর দাখিল করবেন। এটাই সুস্পষ্ট সফলতা। (সূরা জাছিয়া ৩০)
আল্লাহ তায়ালা সফলতা সম্পর্কে আরো বলেন,
اِنَّ لِلْمُتَّقِیْنَ مَفَازًا. حَدَآىٕقَ وَ اَعْنَابًا . وَّ كَوَاعِبَ اَتْرَابًا . وَّ كَاْسًا دِهَاقًا . لَا یَسْمَعُوْنَ فِیْهَا لَغْوًا وَّ لَا كِذّٰبًا
অর্থ: নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে সফলতা। উদ্যানরাজি ও আঙুর, সমবয়সী নব যৌবনা তরুণী এবং ছলকানো পান-পাত্র। সেখানে তারা কোনো অহেতুক কথা শুনবে না এবং কোনো মিথ্যা কথাও না। এসব হবে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে পুরস্কার, (আল্লাহর) এমন দান, যা মানুষের কর্ম হিসাবে দেওয়া হবে। সেই প্রতিপালকের পক্ষ থেকে, যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও এর মধ্যবর্তী সবকিছুর মালিক, দয়াময়। (সূরা নাবা ৩১-৩৭)
কিন্তু এই সফলতার পিছনে এক শক্র দাড়িয়ে আছে। যেদিন আদম আ: কে সিজদা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিলো সেদিন সে সিজদা না দিয়ে এক আল্লাহর অভিশপ্ত হয়েছিলো সেই দিন সে বলেছিলো আমি যেমন অভিশপ্ত হয়েছি ঠিক তেমনিভাবে তোমার বান্দাদেরকে অভিশপ্ত করার জন্য দৃঢ প্রতিজ্ঞা করে সেই দিন আল্লাহর সামনে বলেছিলো,
قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ
অর্থ: শয়তান আল্লাহ তায়ালা কে বলতেছে আপনি যেমন আমাকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করলেন।
আমিও অবশ্য ( এই আদম সন্তান কে) পথ ভ্রষ্ট করার জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকবো । অথপর তাদের সামনে পশ্চাত ডানে ও বাম দিক থেকে তাদের কাছে আসবো। আপনি তাদের অধিকাংশ কে অধিাংশকে অকৃতজ্ঞ পাবেন। (সুরা আরাফ। আয়াত নং ১৬-১৭)
তবে শয়তান তার মিশনকে বাস্তবায়ন করার লক্ষে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চক্রান্ত করে থাকে। আর সেই চক্রের মাধ্যমে বনী আদমকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মে লিপ্ত করছে যার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ অপরাধ হচ্ছে শিরক। এই শিরকের মাধ্যমে অতীতে কওমে নুহ, কওমে লুত, কওমে হুদ, কওমে আদ, কওমে সামুদসহ অনেক জাতিকে পথ ভ্রষ্ট করেছে। দ্বীনে ইবরাহিম পালনকারী, কাবা শরিফের খাদেম কুরাইশ ও আরববাসীদেরকেও এই শিরক এর মাধ্যমে পথ ভ্রষ্ট করেছিলো। তাদেরকে তাদের কতিপয় সৎ মানুষ এবং লাত উজ্জা মানাত নামের কাল্পনিক মূর্তি ছাড়াও অসংখ্য দেব-দেবীর মূর্তিসমূহকে আল্লাহ তায়ালার রুবুবিয়্যাতের সাথে শরিক করে তাদের উপাস্যয় লিপ্ত করেছিলো এবং সেই সব মূর্তিগুলোকে আল্লাহ তায়ালার ওলী এবং আল্লাহ ও সাধারন মানুষের মাঝে সুপারিশকারী হিসাবে সাব্যস্ত করে ছিলো। তারা আল্লাহ তায়ালাকে পাওয়ার আশায় তাদেরও ইবাদত করা শুরু করে দিয়ে ছিলো। ওই সময় কিছু লোক ছাড়া বাকী সবাই শয়তানের এই চক্রর মাঝে নিমজ্জিত হয়েছিলো। এবং কিছু লোক ছাড়া সবাই আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক করা আরম্ভ করে দিলো
সেই সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে এরশাদ করেন,
وَلَقَدْ صَدَّقَ عَلَيْهِمْ إِبْلِيسُ ظَنَّهُ فَاتَّبَعُوهُ إِلَّا فَرِيقًا مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ
অর্থ আর শয়তান তাদের উপর তার ধারনাকে সত্য পরিনত করেছিলো ফলে তাদের মধ্যে হতে মুমিনের একটি দল ব্যতিত সকলেই তার পথ অনুসরণ করেছিলো।
(সুরা সাবা আয়াত নং ২০)
তবে আল্লাহ তায়ালার দয়া-মায়া এবং তার অনুগ্রহে সর্বশেষ নবী রাসূল আকরাম সা: শুভাগমনে এবং তাঁর যোগ্য সাহাবীগণের মাধ্যমে পুরো আরব এবং বিশ্বের আনাচে কানাচ থেকে শিরককে বিতাড়িত করে এবং শয়তানের বিভিন্ন চক্রান্তকে ধূলিসাৎ করে তাওহীদের পতাকা উড্ডয়ন করেছিলেন এবং তাওহিদীদের অমিয় বাণী পৌছে দিয়েছিলেন। সাথে মানুষদেরকে সঠিক সরল পথে পরিচালিত করেছিলেন। সভ্যতার উত্থান-পতন যেন ইতিহাসের এক অমোঘ বিধান।
এই বিধান থেকে ইসলামও রক্ষা পায়নি। অতীতে বিভিন্ন জাতিরা শয়তানের চক্রান্তে পড়ে তাওহীদের পথ থেকে বের হয়ে শিরকের পথ অবলম্বন করেছিলো। ঠিক তেমনিভাবে ইসলামের পরবর্তীতে অসংখ্য লোক শয়তানের চক্রান্তে পড়ে ইসলামের সঠিক পথ থেকে দূরে সরে গিয়ে শয়তানের আনুগত্য করছে। যেমনিভাবে পূর্ববর্তী জাতিরা করেছিলো। আজকাল আমাদের সময় দেখতে পাই যে, আল্লাহ তায়ালাকে সহজে পাওয়ার আশায় তাদের পীরদেরকে সিজদা দেয়। তাদের কাছে গিয়ে সন্তান চায়। এবং সব ধরনের বিপদ আপদের মুক্তি কামনাসহ নানান কর্মকান্ড করে। অথচ এগুলো সব হারাম। শুধু হারামই নয়। শিরক হয়ে থাকে। যার মাধ্যমে আমাদের ঈমান চলে যায়।
অথচ এই ব্যপারে কোরআন ও হাদিসে অসংখ্য নির্দেশিকা রয়েছে।
এই সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন ,
وَلَا تَدْعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ ۖ فَإِن فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ
অর্থাৎ, তুমি আল্লাহ ছাড়া অন্য এমন কাউকে উপাস্য বানিয়ে নিও না যে না তোমার উপকার করতে পারে না ক্ষতি ও করতে পারে। যদি তা করো মুশরিকদের অন্তরভূক্ত হয়ে যাবে।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِن تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُونَ بِشِرْكِكُمْ ۚ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيرٍ
অর্থ: তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে ডাকো তারা এতটুকু জিনিসের অধিকারী নয় যদিও তাদেরকে ডাকো তারা তোমাদের কোন আহবানেই শুনেনা যদি শুনতো কখনো উওর দিতে পারত না এবং কিয়াৃতের দিন তারা তাদের শিরককারীকে অস্বীকার করবে এবং আমি ছাড়া কেই এভাবে তোমাকে বলবে না। (সুরা ফাতির আয়াত নং ১৩ ১৪)
এই সম্পর্কে হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: “مَنْ مات وهو يدعُو مِنْ دون الله نِدًّا دخَل النَّار”
অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রাসূল স.বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা গেলো সে আল্লাহ ছাড়া অন্য কে ডাকে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
(সহীহ বুখারী)
বর্তমানে অনেকে আল্লাহ তায়ালার সিফাতের মাঝে শিরক করে থাকে যেমন গায়েব জানা এটা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার শানও মর্যাদা। কিন্তু বর্তমানে অনেক মানুষ আছে যারা বলে নবী আ: তো গায়েব জানেই সাথে সাথে তাদের পীর বাবারাও জানে। নাউজুবিল্লাহ !
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে এরশাদ করছেন,
وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ
অর্থ: তাঁর নিকটেই গায়েবের চাবিকাঠি সমূহ আছে আর তা ( গায়েব) তিনি ছাড়া কেউ জানে না। (সুরা আন আম ৫৮)
আজকাল সমাজে আমরা দেখতে পাই যে কিছু মানুষ গাভির পূজা করে অথচ এই গাভীকে বানিয়েছেন মানুষের খেদমত করার জন্য আবার কিছু মুসলমান কবরের পূজা করতে থাকে আল্লাহ তায়ালার কাছে সিজদা না দিয়ে বাবার কাছে দেয় ইত্যাদি।
শিরকের ক্ষতিকর দিকগুলো এবং তার ভয়াবহতা
শিরক মানবতার জন্য অবমাননাকর। মানুষের সম্মানকে ধুলায় লুণ্ঠিত করে ও তার সামথ্যকে নীচু করে দেয়। এবং মর্যাদা কে ও নীচু করে দেয়। কারণ, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে এই পৃথিবীতে খলীফা হিসাবে পাঠিয়েছেন এবং তাকে সম্মানিত করেছেন। এবং তার সমস্ত নামসমূহকে শিখিয়েছেন। এবং সমস্ত প্রাণী আসমানে যমীনে যা কিছু আছে সবগুলিকে মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন। এবং মানুষকেই সকলের উপর নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ তার অবস্থাকে ভুলে গিয়ে বস্তুবাদী জিনিসকে ইলাহ হিসাবে গ্রহণ করে নিজেকে ছোট ও অপমানিত করেছে।
আজকাল সমাজে আমরা দেখতে পাই যে কিছু মানুষ গাভির পূজা করে অথচ এই গাভীকে বানিয়েছেন মানুষের খেদমত করার জন্য আবার কিছু মুসলমান কবরের পূজা করতে থাকে আল্লাহ তায়ালার কাছে সিজদা না দিয়ে বাবার কাছে দেয় ইত্যাদি। অথচ তারাও আল্লাহ তায়ালার দাস দাসী না তারা নিজেদের কোন উপকার করতে পারে না কোন ক্ষতি করতে পারে মূতরাই জীবিত মানুষের কাছে দুয়ার মুখাপেক্ষী তাদের জন্য দোয়া করি তাদের কাছে দোয়া না চাই
এই সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَٱلَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْـًٔا وَهُمْ يُخْلَقُونَ
অর্থ: যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যকে ডাকে তারা এতটুকু জিনিসও সৃষ্টি করে না বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে মৃতরা কখনো জীবিতদের সমান না এবং তারা জানেনা কখন তাদেরকে কবর থেকে উঠানো হবে। (সুরা নহল আয়াত ২০)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ
অর্থ: আল্লাহ তায়ালা বলেন যে আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক করে যেন সে আকাশ থেকে পড়ে গেছে এবং এক পাখি তাকে ঠোক দিয়ে তুলে নিয়ে গেছে অথবা বাতাসে বহুদূর নিক্ষেপ করেছে (সুরা হজ্জ আয়াত নং ৩১)
শিরকের কারনে সমস্ত আজেবাজে কুসংস্কার ও বাতিল মানুষের মাঝে প্রবেশ করে। কারণ, যে মনে করে এই জগতে আল্লাহ ছাড়া অন্যের প্রভাব আছে যেমন- নক্ষত্র, জিন, মাজার, খাজাবাবা ইত্যাদি। তার বুদ্ধি এমন হয়ে যায় যে, সমস্ত কুসংস্কার এবং ময়লা আবর্জনা গ্রহণ করতে তৈরি হয়ে যায় এবং মিথ্যাবাদী দাজ্জালদেরকে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এভাবে সমাজের মাঝে শিরক প্রবেশ করতে থাকে।
জিন বশকারী, গণক, যাদুকর, জ্যোতিষী এবং এই জাতীয় লোকদের দ্বারা যারা মিথ্যা দাবী করে যে তারা ভবিষ্যত জানে, অথচ আল্লাহ সুরা লোকমানের মাঝে বলছেন ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একমাত্র আমি জানি।
ফলে সমাজের মাঝে আস্তে আস্তে আসবাব সংগ্রহের প্রচেষ্টা দূর্বল হয় এবং বস্তু বাদীর দিকে ধাবিত হতে থাকে।
শিরক সমস্ত কল্পনা ও ভয়ের মূল। কেননা যখন কুসংস্কার মাথায় বাসা বাঁধতে শুরু করে এবং আজেবাজে কথা, কাজকে গ্রহণ করতে থাকে তখন সমস্ত দিক হতে ভয় পেতে শুরু করে।
কেননা তারা নানা মাবুদের উপর ভরসা করতে শিখেছে। তাদের প্রত্যেকেই ভাল করতে অপারগ এমনকি নিজেরদের থেকেও নানা ধরনের বালা-মুসিবত দূর করতে পারে না। ফলে যেখানে শিরক চলতে থাকে সেখানে নানা ধরনের কুসংস্কার ও ভয় প্রকাশিত হতে থাকে।
এই সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
سَنُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُوا الرُّعْبَ بِمَا أَشْرَكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا . وَمَأْوَاهُمُ النَّارُ ۚ وَبِئْسَ مَثْوَى الظَّالِمِينَ
অর্থ: যারা কুফরী করে আমি তাদের অন্তরে ভয়কে নিক্ষেপ করব ঐ কারনে যে তারা আল্লাহর সাথে শিরক করছে আর যে সম্পর্কে আল্লাহ কোন প্রমাণ পাঠাননি। তাদের ঠিকানা আগুন আর জালেমদের জন্য সেটা কতইনা নিকৃষ্ট জায়গা (সুরা আল ইমরান আয়াত ১৫১)
শিরকের কারনে নেক আমল গুলো নষ্ট হয়ে যায়। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো শিরক মাধ্যমে ইমানও চলে যায় এবং মানুষ চিরস্থায়ী ভাবে জাহান্নামে যাবে।
এই সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
অর্থ: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করবে আল্লাহ পাক তাঁর জন্য জান্নাত কে হারাম করে দিয়েছেন তার ঠিকানা জাহান্নাম এবং জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সুরা আল মায়িদা ৭২)
তাই আসুন শিরক মুক্ত জীবন যাপন করি। এবং কখনো যদি শিরক হয়ে যায় সাথে সাথে তওবা করি। কেননা শিরক তওবা ছাড়া মাফ হয়না।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তাঁর সাথে শিরক করার গুনাহকে ক্ষমা করবেন না এবং তা ছাড়া অন্য গুনাহকে ক্ষমা করবেন যাকে খুশি তাকে এবং যে আল্লাহর সাথে শিরক করে নিশ্চয় সে বিরাট গোমরাহীর মাঝে আছে। (সুরা নিসা আয়াত ১১৬)
শিরকের অনেক শ্রেণী আছে তার মধ্যে কোনটা বড় শিরক কোনটা ছোট শিরকের চেয়ে সকলের জন্য বড় বিষয় ও ওয়াজিব হলো এইগুলো হতে সাবধান থাকা।
তাই আমাদের জন্য জরুরী হল আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক করা থেকে বেচে থাকার জন্য দোয়া করা। যে দুয়া রাসূল স. শিখিয়ে দিয়েছেন।
রাসূল সাঃ বলেন,
اللهم إني أعوذ بك أن أشرك بك شيئًا وأنا أعلم، وأستغفرك لما لا أعلم
অর্থ: হে আল্লাহ আমরা তোমার কাছে ঐ শিরক থেকে বাঁচতে চাই যা আমরা জানি এবং যা আমরা জানিনা তা হতে মাফ চাই। (মুসনাদে আহমদ)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাই কে শিরক মুক্ত জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুক। আমিন!
লেখক, তরুণ আলেম