শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয় : খালেদা জিয়া

শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয় : খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক ● শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে আপত্তির কথা আবারও জানালেন খালেদা জিয়া। রবিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় তিনি পরবর্তী সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের এই অবস্থান প্রকাশ করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধান থেকে বিলুপ্তির পর এখন ভোটের সময় নির্বাচিত সরকারই ক্ষমতায় থাকার বিধান। নির্দলীয় সরকার না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচনবর্জন করে বিএনপি। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও সহায়ক সরকারের দাবি তুলেছে তারা। কিন্তু বিএনপির দাবি প্রত্যাখ্যান করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, ভোটের সময় শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।

এই পরিস্থিতিতে দেড় বছর পর ঢাকায় প্রথম জনসভায় এসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের বলব, দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব আপনাদের। আপনারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলুন।

নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু মোতায়েন করলেওই হবে না, তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারও দিতে হবে।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে আপত্তি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, কোনো ইভিএম চলবে না। ইভিএম বন্ধ করতে হবে। ইভিএম আমরা চাই না।

গত বছরের ১ মে শ্রমিক সমাবেশে বক্তৃতার পর রোববারই প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করলেন খালেদা জিয়া। এই সমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে সরকার পরিকল্পিতভাবে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা। সমাবেশে জনসমাগমে পথে পথে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে তার নিন্দা জানান খালেদা।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে। কিন্তু দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে এক হতে হবে। তিনি বলেন, আমরা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি, আসুন। বহুদলীয় গণতন্ত্রে বহু মত ও পথের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে এক হতে হবে। এই কাজ করলেই জনগণের কল্যাণ, দেশের উন্নতি করা সম্ভব।

এই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বেগম জিয়া বলেন, তারা জনগণের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। যেই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে তাকে হয় উঠিয়ে নেওয়া হবে আর না হয় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ঠুকে দেওয়া হবে।

জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর আমরা জনসভা করছি। আপনারা জানেন, ৭ নভেম্বর আমরা সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তা সরকার দেয়নি। আজ জনসভার অনুমতি সরকার দিলেও এটি যেনো সফল না হয় তার জন্য নানা রকমের বাধা সৃষ্টি করেছে। যার কারণে জনগণকে অনেক কষ্ট করে আসতে হয়েছে।

সমস্ত পাবলিক পরিবহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বেগম জিয়া। এমনকি সমাবেশে পৌঁছাতে যাতে না পারি সেজন্য আমার রাস্তাও বাস দিয়ে আটকে রাখা হয় বলেও মন্তব্য করেন বেগম জিয়া।

খালেদা জিয়া বলেন, আজকে ঘরে ঘরে মানুষের কান্না আর আহাজারি। মানুষ আজকে অত্যাচারিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত। তাই এদের হাত থেকে মানুষ মুক্তি চায়। মানুষ পরিবর্তন চায়। মানুষ পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তন আমরা বলি আসতে হবে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, ভোটের মধ্য দিয়ে আসতে হবে। এই জন্য মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, সাত নভেম্বরকে আওয়ামী লীগ ভয় পায়। আর কি ভয় পায় জানেন? এই জনগণকে আওয়ামী লীগ ভয় পায়, আপনাদের ভয় পায়। এজন্যই তারা জনসভা করতে দেয় না। বিভিন্ন জায়গায় গেলে বাধা সৃষ্টি করে। আমাদের ছেলেপেলেদের প্রতিনিয়ত হয়রানি করছে। মিথ্যে মামলা দিয়ে জেলখানায় বন্দি করছে। তিনি বলেন, জনসভার অনুমতি তারা দিয়েছে। কিন্তু জনসভা যাতে সফল না হয়, জনগণ যাতে আসতে না পারে সেজন্য কত রকমের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।

গত শনিবার বেলা ২টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে জনসভা শুরুর এক ঘণ্টা পর খালেদা জিয়া সমাবেশস্থলে পৌঁছান। এসময় চার দিক থেকে তার নামে স্লোগান ওঠে। তিনি হাত উঁচিয়ে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। ৭ নভেম্বর ‘বিপ্লব ও জাতীয় সংহতি দিবস’ উপলক্ষে এই সমাবেশ ডাকা হলেও এতে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি গুরুত্ব পায়। মঞ্চের পেছনে লাগানো ব্যানারে লেখা ছিল- ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জনসভা’।

জনসভার জন্য উদ্যানে ৬০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চ নির্মাণ করে বিএনপি। মঞ্চের চারপাশে বসানো হয়ে সিসি টিভি ক্যামেরা। মঞ্চের সামনে ৩০ ফুট জায়গায় বেষ্টনি দেওয়া হয়।

পুরো জনসভা সুশৃঙ্খল রাখতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছিল।

জনসভা ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশ-পাশের এলাকা সাজানো ছিল নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুনে। এসব ডিজিটাল ব্যানারে ছিল জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি।

মহাসচিব মির্জা ফখরুল এই জনসভার পুরো কার্যক্রম সমন্বয় করেন। তাকে সহযোগিতা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। এই সমাবেশ করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ ২৩টি শর্ত দিয়েছিল বিএনপিকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *