শ্রেণিকক্ষের অভাবে গাছতলাতে পাঠদান

শ্রেণিকক্ষের অভাবে গাছতলাতে পাঠদান

পাবনা প্রতিনিধি : শ্রেণিকক্ষের ও পর্যাপ্ত বেঞ্চের অভাবে ১৭ নম্বর এম এস কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের গাছতলা ও স্কুলের বারান্দায় চট বিছিয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে।

উপজেলা প্রকৌশলীর এনামুল কবিরের গড়িমসি ও অদূরদর্শিতার কারণে শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তি হচ্ছে বলে মনে করেছেন ভুক্তভোগীরা।

একমাস আগে উপজেলা নিলাম কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিদ্যালয়ের সেমি পাকা ভবনটি প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যে বিক্রি করা হয়। এ সময় উপজেলা প্রকৌশলী মো. এনামুল কবির প্রতিশ্রুতি দেন, স্কুল ভাঙার সাত দিনের মধ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতে টিনশেডের শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে দেওয়া হবে। অথচ এখনো পর্যন্ত কোনো প্রক্রিয়া না থাকায় শিশুদের গাছতলায় পাঠদান করতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) সরেজমিন উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের ২৭ নম্বর এম এস কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমনেই চিত্র দেখা যায়।

ওই স্কুলের পুরোনো ভবনের বারান্দায় বসে কোমলমতি শিশুদের ক্লাস নিচ্ছেন সিনিয়র সহকারী শিক্ষিকা সালমা রশিদ। তিনি বলেন, এ স্কুলে শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী ৭০ জন। অথচ বারান্দাতে বসে ক্লাস করানোর কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের পাশ্বের একটি স্কুলে ভর্তি করিয়েছে। অনেক শিশু অনিহা প্রকাশ করছে স্কুলে আসতে।

শিশুদের জন্য আলাদা একটি শ্রেণিকক্ষের বিধান থাকলেও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ক্লাসে আসতে অনেক শিশু আগ্রহ হারাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

২০১৮ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় পাঠদান করাচ্ছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সারোয়ার।

তিনি বলেন, এ বছর এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৭৫ শিক্ষার্থী পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। বিদ্যালয়ে দুই পালায় ক্লাস চলছে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত শিশু শ্রেণি, প্রথম, দ্বিতীয়, পঞ্চম শ্রেণি এবং বেলা সোয়া ১২টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। একই সময় দু’টি শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হলে বিদ্যালয়ের চারটি কক্ষ না থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না।

এদিকে শিশু শ্রেণিতে ক্লাস বিরতি রেখে ওই চট আবার খোলা আকাশের নিচে বসিয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

আবার হঠাৎ বৃষ্টি চলে আসলে ক্লাস বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীরা ছুটোছুটি শুরু করে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম হবিবুল বাংলানিউজকে বলেন, গত ৩ মে উপজেলা প্রকৌশলী মো. এনামুল কবির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাত দিনের ভেতর অস্থয়ী টিনশেডের ৪-৫টি কক্ষ তৈরি করে দিবেন, যেন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত না হয়।

তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের সেমি পাকা ভবন প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি করা হয়। সর্বোচ্চ দরদাতা ভবন ভেঙে নিয়ে চলে গেলেও এখনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি তিনি। কবে কাজ শুরু হবে তাও জানি না। এখন শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বাংলানিউজকে বলেন, শিশু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে কষ্ট হচ্ছে। অস্থায়ী টিনশেডের কক্ষ করে দেওয়ার জন্য লিখিত ও মৌখিকভাবে উপজেলা প্রকৌশলীকে বলেও কোনো কাজ হয়নি।

এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী এনামুল কবির বলেন, ‘জুন ক্লোজিং নিয়ে বেশ ব্যস্ত আছি। টেন্ডার হয়েছে ‘ধ্রুব কনস্টাকশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে। ৫০ লাখ টাকারও বেশি ব্যয়ে ভবনটি নির্মিণ করা হবে। আশা করছি অচিরেই কাজ শুরু করবো।’

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। আমি অবশ্যই খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রুত গতিতে কাজ যেন বাস্তবায়ন হয়, সেই ব্যবস্থা করছি।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *