সমাজের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছাড়া সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয় : আফফান মানসুরপূরী

সমাজের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছাড়া সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয় : আফফান মানসুরপূরী

  • মুফতি আফফান মানসুরপুরি

সম্মানিত উপস্থিতি!

আমরা একটা পরিবর্তনের জন্য এখানে একত্রিত হয়েছি যে পরিবর্তন সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে,সমাজ ও রাষ্ট্রে এ পরিবর্তন কিভাবে আসবে? এ ব্যাপারে আমি কয়েকটি পরিকল্পনা প্রকাশ করছি আশা করি উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।

সফল হতে হলে আমাদের কয়েকটা ধাপে কাজ করতে হবে।

প্রথমত :

আমাদের একটা মজবুত প্লাটফর্মে আসতে হবে, মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে কারণ ইসলামের প্রতিটি বিধান কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয় মানব সমাজকে ঘিরে। আমরা জানি মানব সমাজ মুসলিম যেমন আছে তেমনি আছে গাইরে মুসলিম আছে, আছে ভিন্ন চিন্তাধারার মানুষজন। মনে রাখবেন সব মানুষের সাথে যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দৃঢ় বন্ধন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ফিল্ডে সঠিকভাবে কাজ করতে পারব না। যখন সমাজে থেকে সমাজের জন্য কাজ করব তখন সমাজই উপলব্ধি করবে হ্যাঁ এই কাজটা আমাদের জন্য উপকারী। ফলশ্রুতিতে আমাদের পক্ষ থেকে যে আহ্বান ও বার্তা তাদের নিকট যাবে তারা সানন্দে স্বাচ্ছন্দ্যে তা গ্রহণ করে নিবে।

দ্বিতীয়ত:

আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই যে, আমরা সমাজের বোঝা না হয়ে বরং সমাজের বোঝা বহনকারী হব। এ ব্যাপারে আমাদের মহানবী সা.ছিলেন উম্মতের জন্য শ্রেষ্ঠ আদর্শ। হযরত খাদিজাতুল কুবরা রা.নবিজির যে উত্তম গুণাবলীর কথা উল্লেখ করেছিলেন তার মধ্যে একটি হচ্ছে ” আপনি অসহায়ের বোঝা বহন করেন” সুতরাং সফল হতে হলে আমাদের এই পদ্ধতি অর্জন করতে হবে।

তৃতীয়তঃ

ময়দানে কাজ করতে গিয়ে আমাদের নিরাশ হওয়া যাবে না। বরং নিত্য নতুন অবস্থার মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষা ও তালাশে থাকতে হবে। আকাবিরদের ওয়ারাসাত হিসেবে বিভিন্ন ময়দানে কাজ করার এক মহান দায়িত্ব আমাদের কাঁধে। দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, কুরআন হাদিসের পাঠদান,লেখনি ও সাংবাদিকতার ময়দানে কৃতিত্ব অর্জন ,মুসলিম বাচ্চাদের জন্য মক্তব প্রতিষ্ঠা, ইসলাহে নফস ও আত্মশুদ্ধির জন্য খানকাহী মেহনত মাজলুম মানুষের পাশে দাঁড়ানো এজন্য আপনাকে গ্রামেগঞ্জে শহরে মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হবে এসব কাজে আপনার সাথে কেউ থাকবে কেউ থাকবে না নানান অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে কিন্তু নিরাশ হওয়া যাবে না। মনে রাখবেন এক্ষেত্রে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামদের জীবনী কর্মপন্থা আমাদের জন্য হেদায়েত ও আলোকবর্তিকা।

চতুর্থতঃ

আমরা যখন সমাজে কাজ করতে যাব তখন অনেক বিষয় শরীয়তের আলোকে অনর্থক মনে হবে আবার অনেক বিষয় আসবে যা সুশীল সমাজে ভালো মনে করা হয় না। এ ক্ষেত্রে সমাজ কে বিশুদ্ধ ও পরিশুদ্ধ করার জন্য অনেক চিন্তা চেতনা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে, সিস্টেম জানতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে বয়কট সব সমস্যার সমাধান নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আজকাল বিবাহ শাদিতে নাচগান, অপচয় সহ অনেক শরীয়ত বিরোধী কাজ হয় এখন যদি আমরা প্রথম চান্সেই ওদেরকে বয়কট করি তাহলে তারাও আমাদের বয়কট করবে।

তাহলে করণীয়? আমাদের সর্বপ্রথম ঐ পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে যেখানে বিবাহ হচ্ছে; বুঝাতে হবে, দাওয়াত দিতে হবে আল্লাহ চাহে তো এভাবে পরিবর্তন আসবে, কাজ হবে। তবে এর পরও যদি তারা না শুনে, না মানে তাহলে বয়কটের বিষয়টি সামনে আনা যেতে পারে। কিন্তু তা না করে প্রথম চান্সেই বয়কট করলে আমাদের বুঝমতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। তারা তো আমাদেরই লোক পরিণতিতে ক্ষতি মূলত কার হচ্ছে সেটা বিবেচনা করা দরকার।

সার কথা হচ্ছে, আমরা সমাজে আদর্শ ও অনুকরণীয় অনুস্বরণীয় ব্যক্তি হিসেবে জীবন অতিবাহিত করব আর এ জন্য আগে নিজের ভিতরে তিনটি গুণ তৈরি করতে হবে।

  • ১)صالحيت তথা আমরা উত্তম চরিত্রবান হব পবিত্র জীবনধারণের যোগ্যতা অর্জন করব,নিফাক ও কপটতা থেকে পবিত্র থাকব,সদা সত্য বলব। আমার কথা কাজে কোন মানুষ যেন ধোঁকা না খায় এটাই নেককার মানুষের গুণ। আদর্শবান হওয়ার জন্য এটা মৌলিক জিনিস। যে সমাজে এমন ব্যক্তি না থাকবে সে সমাজ কখনো পরিবর্তন হবে না।
  • ২) صلاحيت আমরা যেন মানুষের কল্যাণকামী ও এর উৎস হতে পারি। এক জায়গা পড়ে না থেকে জমে না থেকে আমার চারিপাশের চারদিকের মানুষগুলোর কল্যাণকামী হই তাদের জন্য দৌড়ঝাঁপ করি। আমাদের আদর্শ, আমাদের মহানবী সা.কখনো স্থির থাকেননি বরং মানুষের কল্যাণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটে গিয়েছেন দুঃখী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাহলে আমরা কেন কার অপেক্ষায় বসে আছি?
  • ৩) اصلاحيت কারো কষ্ট দেখে খুশি না হয়ে তার ব্যথায় ব্যথিত হওয়া। দুইজনের মাঝে ঝগড়া হলে হাততালি না দিয়ে তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করা। এটাই ইসলাহিয়্যাত। জনাব রাসুল সা.এর দামি একটি কাজ ছিল এটি। الا اخبركم بافضل الصلاة و الصيام والصدقة قالوا بلي يا رسول الله قال اصلاح ذات البين و فساد ذات البين الحالقة আমি কি তোমাদের এমন আমল সম্পর্কে বলব না যা মর্যাদায় নামাজ, রোজা ও সদকা থেকেও উত্তম? সাহাবারা বললেন, অবশ্যই ইয়া রাসুলাল্লাহ! পারস্পরিক ঝগড়া বিদ্বেষকে মিটমাট করা আল্লাহর দৃষ্টিতে এসব থেকে উত্তম। এটাই ইসলাহিয়্যাতের অর্থ।

সুতরাং এই তিনগুণের সমন্বয় যদি আমাদের মাঝে ঘটে তাহলে আমরা বলতে পারব اجعلني علي خزاءن الارض اني حفيظ عليم তখন আমরা জগতের দায়িত্ববান ব্যক্তি হব আমানতদার ব্যক্তি হব। সুতরাং উল্লিখিত তিন গুণ আমাদের মাঝে তৈরি করা অত্যাবশ্যক যদি আমরা যুগকে বদলাতে চাই, নিজের সহযোগী করতে চাই।

মূল ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন

Related Articles