সরকারি চিনিকলে ভর্তুকি আরও শত কোটি টাকা

সরকারি চিনিকলে ভর্তুকি আরও শত কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি চিনিকলগুলো উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে বাজারদরে চিনি উৎপাদনে এখনো ততোটা সক্ষম নয়। ফলে প্রতিবছরই চিনি খাতে বিপুল অর্থ লোকসান দিতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দরে চিনি বিক্রি করায় মাত্র ৬ বছরে (২০০৬-০৭ থেকে ২০১২-১৩) রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। শুধু তা-ই নয়, সংস্থাটি ২০১০ থেকে ২০১২ সালে বিদেশ থেকে চিনি আমদানি করে কম দামে বিক্রি করাতে লোকসান হয়েছে ৪৮৯ কোটি টাকা। যদিও বিএসএফআইসি এই লোকসানের নাম দিয়েছে বাণিজ্য ব্যবধান (ট্রেড গ্যাপ)। এমন পরিস্থিতিতে বিএসএফআইসিকে ভর্তুকি হিসেবে সরকার আরো ১০০ কোটি টাকা দিচ্ছে।

বিএসএফআইসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএসএফআইসি প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনে যতো টাকা খরচ করছে, বাজারে বিক্রি করছে তার প্রায় অর্ধেক দামে। আর এ ঘটনা ঘটছে প্রতিবছরই। ফলে সংস্থাটির লোকসানের পাল্লা ক্রমাগত ভারী হচ্ছে। এমন অবস্থায় বিএসএফআইসি অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, লোকসান ও বাণিজ্য ব্যবধানÑ দুই কারণেই বিএসএফআইসি আর্থিক সংকটে রয়েছে। সংকটের কারণে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আখমাড়াই মৌসুমে শ্রকি-কর্মচারীদের বকেয়া মজুরি ও বেতন-ভাতা দেওয়া যাচ্ছে না। এখন চিনিকলগুলো সচল রাখতে ৩৫০ কোটি টাকা দরকার। আর টাকা চেয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে শিল্পমন্ত্রী উপানুষ্ঠানিক পত্র দিয়েছিল। আর ওই পত্রের কারণ অর্থমন্ত্রী শর্তসাপেক্ষে নির্দেশনার পর অর্থ মন্ত্রণালয় এক দফায় ২০ কোটি ও আরেক দফায় ৫০ কোটি অর্থাৎ ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। থোক বরাদ্দ অর্থাৎ অপ্রওত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে ওই অর্থ দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, চিনি খাতের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ওই টাকায় কিছুই হবে না বলে জানিয়েছে বিএসএফআইসি। পরিস্থিতি সামাল দিতে সংস্থাটি মোট ৩৫০ কোটি টাকা চাইলেও অর্থ মন্ত্রণালয় পুরো টাকা দিতে রাজি নয়। যদিও চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে অন্যান্য মঞ্জুরি খাত থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় আরো ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ চলতি মাসেই ওই টাকা ছাড় করবে বলে জানা গেছে। আর ওই টাকা দিয়ে সংস্থাটি শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারবে।

সূত্র আরো জানায়, চিনি আমদানি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা বিএসএফআইসির মূল কাজ না হলেও সংস্থাটি চিনি আমদানির পরও লোকসান দিচ্ছে। আর এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সংস্থাটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবে বলে মনে হয় না। বিগত ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ভর্তুকি ও বাণিজ্য ব্যবধান সমন্বয়ের জন্য বিএসএফআইসিকে ৪০৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৭৫ কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৩৫ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫০ কোটি এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। সংস্থাটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে ৩টি ত্রিশের দশকে, ৩টি পঞ্চাশের দশকে, ৭টি ষাটের দশকে এবং ২টি স্বাধীনতার পর স্থাপিত হয়। তবে অধিকাংশ চিনিকলের যন্ত্রাংশ অতি পুরনো ও জরাজীর্ণ।

এদিকে দেশে মাথাপিছু বার্ষিক চিনির চাহিদা ৯ কেজি। ওই হিসাবে দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ টন। কিন্তু বর্তমানে বিএসএফআইসির চালু ১৫টি চিনিকলের চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ২ লাখ ১০ হাজার ৪৪০ টন।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিএসএফআইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেন জানান, দেশে চিনির দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখতে বিএসএফআইসি সব সময়ই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। এই সংস্থার চিনি না থাকলে বেসরকারি পরিশোধন কারখানাগুলো চিনির দাম খেয়ালখুশিমতো বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *