ক্রীড়া ডেস্ক : ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলছেন দেড়শ ক্রিকেটার। তাঁদের মধ্যে একই সঙ্গে নিজ দেশের সেরা ব্যাটসম্যান ও সেরা বোলার হয়ে উঠতে পেরেছেন মাত্র একজনই। তিনি সাকিব আল হাসান। এমনটাই বলছে ব্রিটেনের অন্যতম প্রভাবশালী দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ।
১৮৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কোনো সন্দেহ নেই, সাকিবই এখন পর্যন্ত ২০১৯ বিশ্বকাপের সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড়।’
এই বিশ্বকাপে ধারাবাহিকভাবে ব্যাটে-বলে আলোকিত পারফর্ম করে যাচ্ছেন সাকিব। প্রথম দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৫ ও ৬৪ রান করেছেন। এরপর ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছিল ১২১ ও হার না মানা ১২৪ রানের ইনিংস। বল হাতেও দারুণ ইকোনমি রেট তার, উইকেট ৫টি। বাংলাদেশের দুটি জয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা।
সব মিলিয়ে টেলিগ্রাফের সাংবাদিক টিম উইগমোরের বিশ্লেষণে এখন পর্যন্ত সাকিবই সেরা খেলোয়াড়।
তারা ঘোষণা করেছে, ‘শুধু একজনকে আপাতদৃষ্টিতে তার দেশের সেরা ব্যাটসম্যান ও সেরা বোলার হিসেবে দাবি করা যায়। তার নাম সাকিব আল হাসান, নিঃসন্দেহে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তিনিই সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড়।’
সাকিবকে যথাযথ মূল্যায়ন না করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। যদিও সাকিবের সতীর্থরা, এমনকি যাঁদের বিপক্ষে খেলেছেন সাকিব তাঁরা, সাকিবের নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করা আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার এবং আইপিএলে তাঁর খেলা দেখে তৃপ্তির স্বাদ নেওয়া ভক্তকুল কিংবা আইসিসির র্যাংকিং—কোনো কিছুতেই আন্ডাররেটেড নন সাকিব। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই আইসিসির র্যাংকিংয়ে সেরা অলরাউন্ডার হওয়া একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ২০১৫ সালে এ কৃতিত্ব দেখান সাকিব।
তবে সাকিব যে তাঁর যোগ্যতার প্রাপ্য স্বীকৃতি পান না, সেই সত্যের পেছনে একটি প্রবল যুক্তি কিন্তু আছে। যেহেতু সাকিব ক্রিকেটের পরাশক্তি কোনো দেশ থেকে উঠে আসা খেলোয়াড় নন, তাঁর বহুমুখী প্রতিভাকে ইচ্ছে করেই উপেক্ষা করে কেউ কেউ। এর একটা অন্যতম উদাহরণ হলো, ২০১১ সালের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে মোটে একটি ওয়ানডে খেলেছে অস্ট্রেলিয়া।
সংবাদপত্রটি আরও উল্লেখ করেছে, ২০০০ সালে দুটি ঘটনা বাংলাদেশের ক্রিকেট দলকে বর্তমান জায়গায় নিয়ে এসেছে। ওই বছর বাংলাদেশকে দেওয়া হয় টেস্ট মর্যাদা এবং ১৩ বছর বয়সে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন সাকিব। ৬ বছর পর আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় তার। স্বভাবজাত ব্যাটিং ও বিচক্ষণ বাঁহাতি স্পিনে দলের অপরিহার্য খেলোয়াড় হতে খুব বেশি সময় নেননি তিনি।
টেলিগ্রাফ আরও যোগ করেছে, আত্মবিশ্বাস দিয়ে সাকিব ধারাবাহিকভাবে জ্বলে উঠলেও ২০১৪ সালে কোচের সঙ্গে দ্বিমত থাকায় বোর্ড ছয় মাস নিষিদ্ধ করে তাকে। কিন্তু এখন তিনি পরিণত এবং টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে ফিরে এসেছেন দারুণভাবে। টেলিগ্রাফ তাদের পর্যবেক্ষণে আরও বলেছে, ‘তার দলের সবচেয়ে কঠিন ভূমিকা নেন সাকিব। পাওয়ার প্লেতে নিয়মিত বল করেন এবং শেষদিকেও। আর ওয়ানডেতে তিন নম্বরে ব্যাটিং শুরু করে ১৯ ম্যাচ খেলে গড় রান ৫৯.৬৮-এর মধ্যে আছে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা সেঞ্চুরি।’
সবশেষে সংবাদমাধ্যমটি উল্লেখ করেছে, সাকিবের সাদামাটা উদযাপনের কথা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২২ রানের কঠিন লক্ষ্য পার করে দেওয়ার পরও তার উদযাপন ছিল খুবই সহজ-সরল। দলকে জেতানোর পর ক্রিজের অন্য প্রান্তে থাকা লিটন দাসের সঙ্গে হাত মেলালেন। প্রত্যেক দলের বিপক্ষে নিজের সেরাটা দেওয়াই যে এখন তার ধ্যানজ্ঞান।