সুনামগঞ্জে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, ডুবছে নিম্নাঞ্চল

সুনামগঞ্জে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, ডুবছে নিম্নাঞ্চল

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : টানা বর্ষণ ও ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় পাহাড়ি ঢল নেমেছে। বৃষ্টি ও উজানের ঢলে হাওড় এলাকার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ডুবেছে নিম্নাঞ্চল।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তাহিরপুর উপজেলার সোলেমানপুর এলাকার পাটলাই নদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ মিলিমিটার, ছাতকের সুরমা নদীতে ১৭ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ২৪ মিলিমিটার ও দিরাইয়ে সুরমা নদীর পানি ৩ মিলিমিটার ও যাদুকাটা নদীর পানি শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে ৪৪ মিলিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় লাউড়েরগড় পয়েন্টে ১৪১ মিলিমিটার, ছাতকে ৩০ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জে ১৫০ মিলিমিটার, দিরাইয়ে ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বৃষ্টিপাতের ফলে যাদুকাটা, চলতি খাসিয়ামারা, চেলা, মনাই, সোমেশ্বরীসহ সব পাহাড়ি নদীর পানি বেড়েছে।

তবে সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাকি সব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মূলত গত দুই দিনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। দুই দিনের টানা বর্ষণ ও সীমান্তের ওপাড়ে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় পাহাড়ি ঢল নেমেছে। চলাচলের সড়ক ডুবিয়ে বিকট শব্দে হুহু করে ঢলের পানি ডুকছে হাওর ও লোকালয়ে।

ঘোলাটে পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে হাওর এলাকা। শুক্রবার (৩০ জুন) ভোর থেকে মেঘালয় পাহাড়ের বিভিন্ন পাহাড়ি ছড়া দিয়ে ঢলের পানি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

মধ্যনগর উপজেলার উত্তর বংশীকূন্ডা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরু নবী তালুকদার জানান, শুক্রবার ভোর থেকে মেঘালয় পাহাড়ের মহেশখলা ছড়া দিয়ে প্রবলবেগে ঢলের পানি ঢুকছে। এতে এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। ঢলের প্রবল স্রোতে সীমান্তঘেঁষা মহেশখলা-বাঙ্গালভিটা ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের ৮ কিলোমিটার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এতে ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি, মহেশখলা, ঘোলগাঁও, রংপুর, বাঙ্গালভিটা, রূপনগর, রেঞ্জিপাড়া ও কলতাপাড়া গ্রামের লোকজনের চলাচলের একমাত্র সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এলাকার লোকজন পানি মাড়িয়ে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করছেন।

ঘোলগাঁও গ্রামের নিজাম উদ্দিন বলেন, ভোর থেকে মহেশখলা ছড়া দিয়ে ঢলের পানি প্রবল বেগে প্রবেশ করছে। এতে গ্রামীণ সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রবল স্রোতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, ঢল বন্ধ না হলে এসব এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে থাকবে। তবে এখনও মানুষের ঘরবাড়িতে পানি ওঠেনি।

মধ্যনগর উপজেলার ১ নম্বর বংশীকূন্ডা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরুনবী বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা দুই দিনের ভারী বর্ষণে সোমেশ্বরী, উব্দাখালী নদী ও এর আশপাশের হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রাস্তাঘাট ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মানুষ। উপজেলার সদর, চামরদানী, বংশীকূন্ডা দক্ষিণ ও বংশীকূন্ডা উত্তর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও মধ্যনগর মহেশখলা সড়কের নিচু অংশ পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে।

তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে বাদাঘাট ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উজানের ঢলের প্রবল স্রোতে সড়কের মাটি সরে গেছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকায় ঢল নামার ফলে মাটির সড়কগুলোর বেশ ক্ষতি হয়েছে। মধ্যনগর-মহিষখলায় বন্ধ রয়েছে যান চলাচল।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুল হাওলাদার বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে কোনও কোনও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে। এদিকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে গেলে পানি দ্রুত নেমে যাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *