‘স্বীকৃতিসাফল্যে আল্লামা মাসঊদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ’

‘স্বীকৃতিসাফল্যে আল্লামা মাসঊদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ’

পাথেয় রিপোর্ট : বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও বেফাকুল মাদারিসিদ্দীনিয়ার সভাপতি শাইখুল হাদিস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ অত্যুজ্জ্বল এক আদর্শের নাম। স্বীকৃতি নিয়ে কখনোই তিনি অতটা মাথা ঘামাতে চাননি। কিন্তু যখন দারুল উলূম দেওবন্দ সামনে এসে দাঁড়ালো, বাংলাদেশের তালেবুল ইলম স্বীকৃতি বাস্তবায়ন হলেই দেওবন্দে পড়তে পারবে। এমনই একটি তথ্য দিয়েছিলেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ খান। কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালে আল্লামা মাসঊদকে বলেছিলেন দারুল উলূম দেওবন্দে পড়তে আসার ভিসা আমরা কীভাবে দেবো? আপনাদের কওমী মাদরাসাতো বাংলাদেশেই স্বীকৃত না। আগে স্বীকৃত হন তারপর আমরা ভিসা দেবো।

এমন একটি আশা থেকেই বাংলাদেশের তালেবুল ইলম যাতে দারুল উলূম দেওবন্দে পড়তে পারে- স্বীকৃতি বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে যোগাযোগসহ মাঠে আন্দোলনও শুরু করেন। প্রথমে অবশ্যই নানা অজুহাতে বেফাকসহ দেশের কওমীগুণমুগ্ধ অনেকেই বিরোধিতা করেন। পরে যখন ১১ আগস্ট ২০১৬ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান আল্লামা মাসঊদের উদ্যোগে আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে উলামা সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‌সনদ দিতে হলে ন্যূনতম একটা কারিকুলাম দরকার। আমরা কওমী মাদরাসা কমিশন গঠন করে দিয়েছি। কিন্তু কওমী মাদ্রাসার পাঁচটি বোর্ড একমত হতে পারেনি। সবাই একমত হোন অথবা যারা আগ্রহী তারা একমত হোন, আমরা বাস্তবায়ন শুরু করে দেবো।’

বলা চলে তখন থেকেই দেশের স্বীকৃতি আন্দোলনের রঙ পাল্টে যায়। এর আগে রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. কয়েকদিন ধরে স্বীকৃতির অবস্থান করলেও তখনকার ক্ষমতাসীনরা পাত্তা দেননি।

১১ এপ্রিল মঙ্গলবার রাতে গণভবনে আলেমদের সঙ্গে বৈঠক কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমানের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ক্লাস দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মান দেওয়া হলো।’


বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার স্বীকৃতি বিষয়ক একটি সেমিনারের ফেস্টুনে ‘চল্লিশ লাখ চোখ চেয়ে আছে প্রধানমন্ত্রীর দিকে’ দেশের সব মানুষকে নজর কাড়ে। মিডিয়াতেও এ শিরোনাম ফলাও করে ছাপা হয়


স্বীকৃতি আন্দোলনের জন্য আল্লামা মাসঊদের পরামর্শে গঠিত কওমি শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফর করে করে স্বীকৃতি আন্দোলন ত্বরান্বিত করে। দিনের পর দিন শাইখুল হাদিস আল্লামা ইয়াহইয়া মাহমুদ, মুফতি আবুল কাসেম, মাওলানা আব্দুর রহীম কাসিমী, মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসিমী ও মাওলানা দেলওয়ার হুসাইন সাইফী সফর করতে থাকেন। স্বীকৃতির পক্ষে একটা সময় তরুণরা মাঠে নেমে আসে।  ধীরে ধীরে স্বীকৃতির পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়। হাজার হাজার মাইল মানববন্ধনেরও নজীর সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার স্বীকৃতি বিষয়ক একটি সেমিনারের ফেস্টুনে ‘চল্লিশ লাখ চোখ চেয়ে আছে প্রধানমন্ত্রীর দিকে’ দেশের সব মানুষকে নজর কাড়ে। মিডিয়াতেও এ শিরোনাম ফলাও করে ছাপা হয়।

১৩ আগস্ট ২০১৮ সোমবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে কওমি মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতি আইন। মন্ত্রিসভায় পবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি সাহিত্যে কওমি শিক্ষাব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের মাস্টার্সের (স্নাতকোত্তর ডিগ্রি) সমমর্যাদার আইন অনুমোদিত হয়েছে।

মন্ত্রিসভায় কওমি মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতি আইন অনুমোদন পাওয়ার পর পাথেয় টোয়েন্টিফোরকে ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ’এর আহ্বায়ক মুফতি আবুল কাসেম বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। ব্রিটিশ শাসন থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত কেউ কখনো কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দেয়নি। অথচ শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি আমাদের নাগরিক অধিকার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় কওমি মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃত আইন অনুমোদন দিয়ে মাদ্রাসার উলামায়ে কেরাম ও শিক্ষার্থীদের মন জয় করে নিয়েছেন।

জামিআ আজমিয়া দারুল উলুম রামপুরা মাদ্রাসার মুহতামিম ও কওমি শিক্ষা সনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত। ইনশাআল্লাহ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি পেয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা ইসলামী শিক্ষাঙ্গনে সারা পৃথিবীতে নজির সৃষ্টি করবে।

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে ধন্যবাদ জানান।


স্বীকৃতিসাফল্যে আল্লামা মাসঊদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, আমি কওমি শিক্ষা সনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আল্লামা আল্লামা মাসঊদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।


মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ বলেন, যার অক্লান্ত পরিশ্রম ও কষ্ট ক্লেশের বিনিময়ে আজ মন্ত্রিসভা কওমি সরকারি স্বীকৃতি আইন অনুমোদন পেয়েছে, তিনি হচ্ছেন বেফাকুল মাদারিসিদ্দীনিয়্যা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম শাইখুল হাদিস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। স্বীকৃতিসাফল্যে আল্লামা মাসঊদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, আমি কওমি শিক্ষা সনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আল্লামা আল্লামা মাসঊদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।


গ্রন্থনা : আদিল মাহমুদ ও কাউসার মাহমুদ
সম্পাদনা : মাসউদুল কাদির

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *