অমুসলিমদের ব্যাপারে ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি কী?

অমুসলিমদের ব্যাপারে ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি কী?

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ইসলাম সম্প্রীতি সৌহার্দ্য ও শৃঙ্খলার ধর্ম। দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও অশান্তি সমর্থন করে না ইসলাম। অমুসলিমদের সাথে আচরণে ভদ্রতা ও সৌজন্য রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। অন্য ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করার বিষয়েও নিষেধ করেছেন ইসলামের নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

কারো প্রতিবেশী অমুসলিম হলে ইসলামের নির্দেশনা হল- তার সাথেও প্রতিবেশীর হক রক্ষা করে চলতে হবে। পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এ সম্পর্ক রক্ষা করার ওপর যথেষ্ট জোর দেয়া হয়েছে।

হজরত উমর রা.-এর একটি ঘটনা রয়েছে। তিনি খলীফাতুল মুসলিমীন থাকাকালীন একদিন এক ইহুদি বৃদ্ধকে দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করে বেড়াতে দেখলেন। তখন তিনি ইহুদিকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘আমরা তোমার ওপর ইনসাফ করতে পারিনি। এরপর তিনি তার জন্যে বায়তুল মাল থেকে প্রয়োজনীয় ভাতার ব্যবস্থা করে দেন।’ -কিতাবুল আমওয়াল, ইবনে যানজূয়াহ্, ১/১৪৩, হাদীস ১৭৯

এছাড়া ইসলাম অমুসলিমদের উপসনালয়েও হামলা না করার নির্দেশ দিয়েছে। এমনকি যুদ্ধাবস্থাতেও অমুসলিমদের উপসনালয়ে হামলা করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধে সৈন্যদল পাঠানোর সময় বলতেন,

‘তোমরা আল্লাহ ও আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যাত্রা কর। তোমরা আল্লাহর প্রতি কুফরকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আমি তোমাদের কয়েকটি উপদেশ দিয়ে প্রেরণ করছি : (যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, (শত্রুপক্ষের) কারো চেহারা বিকৃতি ঘটাবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো গির্জা জ্বালিয়ে দেবে না এবং কোনো বৃক্ষও উৎপাটন করবে না। -ইবন আবী শাইবা, ‘মুসান্নাফ’ : ৩৩৮০৪; কিতাবুল জিহাদ।

ইসলাম কখনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়াকে সমর্থন করে না। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তারা শুধু ইসলামের শত্রু নয়, বিশ্বমানবতার শত্রু। অন্যদিকে অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমের উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়া অমার্জনীয় অপরাধ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এসব কর্মকাণ্ডকে কঠোর ভাষায় নিষিদ্ধ করেছেন।

ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হলো, তাদের হয়তো হত্যা করা হবে, নয়তো শূলে চড়ানো হবে অথবা হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে কিংবা তাদের দেশান্তর করা হবে। এটা হলো তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্য আছে আরো কঠোর শাস্তি। ’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৩৩)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন বিশ্বমানবতার মুক্তি দূত। অন্যায়ের ক্ষেত্রেও তিনি কারো সঙ্গে আপোষ করেননি। অন্যায়ভাবে কোনো মুসলিমের পক্ষ অবলম্বনও করেনি। তিনি ছিলেন ন্যায়ের প্রতীক।

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত, বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ উদার নীতি ও দৃষ্টান্ত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। ইসলাম ও মুসলমানদের লালিত এবং মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুমহান আদর্শগুলো বিশ্বব্যাপী তুলে ধরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *