স্বস্তির আড়ালে আছে শঙ্কাও

স্বস্তির আড়ালে আছে শঙ্কাও

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: হিমাচলের শীতকালীন রাজধানী ধর্মশালা ট্র্যাকারদের প্রিয় জায়গা। এখান থেকেই তারা হাঁটতে শুরু করেন তোরাল পাস, ব্লেনি-দুনালির মতো জনপ্রিয় সব ট্র্যাকিং রুট ধরে। দেবদারু, পাইন আর ওকের ছায়ায় হিমাচলের পাহাড়ি অরণ্যের পায়ে চলা পথে হাঁটাটা তো আসলে নিজেকেই আবিষ্কার করা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও যেমন আবিষ্কার করেছে বিশ্বকাপে নিজেদের সামর্থ্যকে।

এশিয়া কাপ আর ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ ছিল আয়নায় ধুলোর আস্তরণ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় সেই ধুলোমাখা পরত সরিয়ে দিয়েছে। এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা জিতলেই হিমালয়ের কোল থেকে হিমালয়ের মতোই উঁচু আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাওয়া যাবে বঙ্গোপসাগরের পাড় চেন্নাইতে।

জয় দিয়ে শুরুটা করেছে বাংলাদেশ আর ইংল্যান্ডের শুরুটা হয়েছে তেতো এক হার দিয়ে। হারের ধরন, ব্যবধান সবই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দেওয়ার মতো। প্রবলভাবে ফিরে আসতে চেয়ে সর্বশক্তি দিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে ইংল্যান্ড, আহত সিংহের মতোই। সেই শঙ্কা তো আছেই, তবে তার চেয়েও বড় শঙ্কা আফগানিস্তানের বিপক্ষে অনায়াস জয়ে মিডল অর্ডারের পরীক্ষাটা হলো না। বোলারদেরও পূরণ করতে হয়নি ১০ ওভারের কোটা।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বোলারদের আরেকটু কড়া পরীক্ষাই দিতে হবে বলে মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ‘আমাদের বোলারদের কিন্তু শুরুর পরে খুব একটা কড়া পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। স্পিনাররা ভালো করেছে, পেসাররা ফিরে এসেছে, সবই ঠিক আছে কিন্তু আমার মনে হয় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০ ওভার খুব ভালো বোলিং নিশ্চিত করাটা গুরুত্বপূর্ণ।’

বাংলাদেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলেছে ৮ ব্যাটসম্যান নিয়ে যাদের ভেতর ৩ জন অলরাউন্ডার। সাকিব আল হাসান এবং মেহেদী হাসান মিরাজ দারুণ বল করেছেন, দুজনেই নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। মাহমুদউল্লাহ ১ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ৭ রান। মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজের পরই জাতীয় দলে জায়গা হারানো মাহমুদউল্লাহ শেষ সময়ে বিশ্বকাপ দলে ঢুকেছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংস খেলে। সাকিবের কাছে দলে ফেরা নিয়ে মাহমুদউল্লাহর জেদ, প্রস্তুতি, দলের প্রতি অবদান ভালো লেগেছে। তবে বোলার হিসেবে তাকে ভালো না লাগারই কথা।

মাহমুদউল্লাহ সবশেষ ১০ ওভার বোলিং করেছিলেন ২০২১ সালে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ৪৫ রানে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। এরপর ২২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন, অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ১২ ম্যাচেই বোলিং করেননি। যেসব ম্যাচে বোলিং করেছেন সেসব ম্যাচেরও কোনোটিতে চার ওভারের বেশি বোলিং করেননি, সবশেষ উইকেট নিয়েছেন গত বছর মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ ছিলেন ৮ নম্বর ব্যাটসম্যান, যদিও তাকে নামতে হয়নি। বিশ্বকাপ থেকে বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং পজিশন বদলেছে বেশ। ২০১১ বিশ্বকাপে ছিলেন সাতে, ২০১৫ বিশ্বকাপে ছিলেন ৪ নম্বরে, ২০১৯ বিশ্বকাপে ছয়ে আর এবার শুরুর দিনে তিন পেসারের ওপরে ছিল তার নাম। যার ব্যাটিংয়ে দলের এতটাই অনাস্থা যে ক্যারিয়ারে ৫ হাজারের বেশি রান করার পরও নবাগত ক্রিকেটারদের পেছনে আটে তার নাম, তার বদলে ফাহিম মনে করেন বোলিং শক্তি বাড়ানোই ভালো, ‘মাহমুদউল্লাহর পরিবর্তে শেখ মেহেদি (হাসান) বা নাসুম (আহমেদ) কাউকে দলে নিলেই আমি মনে করি ভালো। কারণ ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে একজন ভালো বোলার যদি ২০টা রান কম দেয় সেটাও অনেক বড় অবদান, তাতে লক্ষ্যটা ২০ রান কম হয়।’

ধর্মশালার উইকেট যতটা রান উৎসবের মঞ্চ হবে ভাবা হয়েছিল, প্রথম ম্যাচে সেটা হয়নি। ফাহিম মনে করেন, এখনো সেটা হতে পারে, ‘আফগানিস্তান কিন্তু শুরুটা ভালো করেছিল। ওদের জুটিটা বড় হয়ে গেলে সেটা হতেও পারত। উইকেট যে খুব বোলিং সহায়ক তেমনটা নয়। এখানে বাংলাদেশকে আগে ব্যাট করলে ২৭০-২৮০ অন্তত করে খুব ভালো বোলিং ও ফিল্ডিং করতে হবে। আর যদি ইংল্যান্ড আগে ব্যাটিং করে তাহলে পুরো ৫০ ওভারই খুব ভালো বোলিং করে যেতে হবে।’

অর্থাৎ একাদশে বাড়তি একজন বোলার বা ছয় নম্বর বোলারের কথাই বলছেন ফাহিম, তার ধারণা ব্যাপারটা দলের সংশ্লিষ্টদেরও মাথায় আছে। ফিল্ডিং প্রথম ম্যাচে ভালো হলেও শঙ্কা আউটফিল্ড নিয়ে। রীতিমতো বালুকাবেলার ওপর সবুজ ঘাসের আস্তরণ যা জায়গায় জায়গায় উঠে গেছে।

আফগানদের কোচ জোনাথন ট্রট তো বলেই ফেলেছেন, ‘খেলোয়াড়রা নিশ্চিত নয় তারা এই মাঠে ডাইভ দিতে পারবে কি না। কারণ এখানে ইনজুরিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা ভাগ্যবান যে মুজিবের হাঁটুতে সিরিয়াস কিছু হয়নি। তার আসলে সেখানে ডাইভ দেওয়া উচিত হয়নি।’

পেসারদের রানআপে উড়েছে ধুলো। এতে তাসকিন-শরিফুলরা ভুগেছেন, মার্ক উড আর ক্রিস ওকসদের ভুগতে যেন না হয় সেজন্য নাকি মাঠকর্মীরা তৎপর হয়েছেন। ঐচ্ছিক অনুশীলনের দিনে মাঠে জিম করতে আসা বাংলাদেশ দলের কয়েক জন খেলোয়াড়কে ঢুকতে হয়েছে ঘুরপথে।

মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়েই না নামা, বোলারদের বোলিং কোটা পূরণ না হওয়া; জয়ের আনন্দের পিঠে এসব অস্বস্তি তো আছেই সঙ্গে ধর্মশালার আউটফিল্ড নিয়ে দুশ্চিন্তাটাও কম নয়। আসরের গোড়ার দিকেই কেউ যদি এখানে চোট পেয়ে যান, তাহলে বাকি বিশ্বকাপটাই যে তার মাটি হয়ে যেতে পারে!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *