কুরবানির ইতিবৃত্ত । মুফতী রিয়াজুল ইসলাম

কুরবানির ইতিবৃত্ত । মুফতী রিয়াজুল ইসলাম

বছরান্তে আমাদের দ্বারপ্রান্তে কুরবানি সমাগত। যা সমগ্র মানবজাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানব জাতির ইতিহাসের সূচনা লগ্ন থেকেই কুরবানির বিধান বিদ্যমান। তবে সব যুগে সব জাতির জন্যে কুরবানির বিধান এক রকম ছিল না কিন্তু কুরবানির আবেদন ও উদ্দেশ্য ছিল এক ও অভিন্ন। পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানির বিধান করে দিয়েছি।’ (সূরা হজ, আয়াত-৩৪)
ফার্সি, উর্দু ও বাংলায় কুরবানি বলা হয়। এটি মূলত আরবি ‘কুরবান’ শব্দের পরিবর্তে ব্যবহার হয়ে থাকে। কুরবান শব্দটি ‘কুরব’ মূলধাতু থেকে নির্গত। যার অর্থ হলো নৈকট্য।

পরিভাষিক অর্থে কুরবানি বলা হয়- ‘আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে হালাল উপার্জনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট কিছু পশু জবেহ করাকে কুরবানি বলে।

কুরবানির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : কুরবানির সূচনা হযরত আদম আ. পুত্রদ্বয় হাবিল ও কাবিলের মাধ্যমে। হযরত আদম আ. ও হাওয়া আ.এর সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার শুরু হয়েছিল টুইন বেবীর মাধ্যমে। তার একটি হতো পুত্র, আরেকটি হতো কন্যা। আর আদম আ.-এর শরীয়তের বিধান ছিল, এক গর্ভে ছেলে অপর গর্ভের মেয়েকে বিবাহ করবে। এরই ধারাবাহিকতায় কাবিলের সহোদর বোনকে হাবিল ও হাবিলের সহোদর বোনকে কাবিলের বিয়ের পালা চলে আসে। কিন্তু এখানেই সৃষ্টি হয় বিপত্তি। কাবিলের সহোদর বোন ছিল পরমা সুন্দরী। আর হাবিলের সহোদর বোন ছিল বিপরীত মেরুর কুশ্রী ও কদাকার। তাই কাবিল নিজেই নিজের সহোদর বোনকে বিবাহ করতে চাইলো। বিষয়টি হযরত আদম আ. পর্যন্ত গড়ালো। শরীয়তের পরিপন্থি হওয়ায় হযরত আদম আ. তা প্রত্যাখ্যান করলেন। কাবিল যখন কিছুতেই মেনে নিচ্ছিলো না, তখন হযরত আদম আ. বিষয়টি সমাধানের জন্যে বললেন, তোমরা উভয়ে আল্লাহর জন্যে কুরবানি কর। যার কুরবানি গৃহীত হবে, তার দাবি পূরণ করা হবে।

হযরত আদম আ. এর সিদ্ধান্ত থেকে আমরা এ শিক্ষা নিতে পারি যে, সব সমস্যার সমাধান কেবল আল্লাহর কাছে। তাঁর প্রেরিত ওহীর মধ্যে যার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। তাই তাঁর ওহীর কাছে সবাইকে ফিরে যেতে হবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, হযরত আদম আ. এর শরীয়তে কুরবানি গৃহিত হওয়ার নিদর্শন ছিল আসমান থেকে আগুন এসে কুরবানির পশুকে জ্বালিয়ে দেয়া। হাবিল ছিল মেষ ও দুম্বা পালক। তাই সে উত্তম একটি দুম্বা কুরবানির স্থলে রেখে এলো। আর কাবিল ছিল কৃষক। সে কিছু অনুত্তম শস্য কুরবানির স্থলে রেখে এলো। শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী আগুন এসে হাবিলের কুরবানির পশু জ্বালিয়ে দিল। কিন্তু হাবিলের শস্য আগের মতই পড়ে রইলো।

এ ঘটনা থেকে আমরা আরো একটি বিষয় জানতে পারি যে, কুরবানি কবুল হওয়ার জন্য সাধ্যানুযায়ী উত্তম জিনিস কুরবানি করা।

উল্লেখিত ঘটনা দ্বারা কুরবানি ইতিহাস শুরু হয়। পরবর্তিতে প্রত্যেক যুগে, প্রত্যেক ধর্মে কুরবানির বিধান চলে আসছে।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিআ ইকরা বাংলাদেশ, ঢাকা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *