বরেণ্য শিল্পি এস এম সুলতান
আমিনুল ইসলাম : চিত্র শিল্পি এস এম সুলতান। জন্মঃ ১৯২৪ সালের ১০ আগষ্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে। মৃত্যুঃ ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।
শিল্পি এস এম সুলতানের পারিবারিক নাম ছিল ‘লাল মিয়া’। ছোট বেলা থেকে ছবি আঁকার প্রতি বেশ ঝোঁক ছিল। ছেলে বেলায় পুঁই শাকের পাকা ফল এবং কাঁচা হলুদ মিশিয়ে ছবি আঁকতেন।
শিল্পি এস এম সুলতান বড় হতে লাগল আর তাঁর ছবি আঁকার নেশা বেড়ে গেল। সে সময় নড়াইলের জমিদার ধীরেন্দ্র নাথ তাঁর ছবি আঁকা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
অসম্ভব প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি। তাঁর আঁকা ছবি দেখে মানুষ ভক্ত হয়ে যেত। দেশ- বিদেশের সব জায়গায় তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে ছিল।
সেই ১৯৪৭ সনে ভারতের সিমলায় এক চিত্র প্রদর্শনি হয়েছিল তাঁর। বিশ্বের বহু দেশ থেকে তিনি অনেক সন্মাননা পেয়েছেন।
কেমব্রিজ বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ম্যান অব দ্য ইয়ার, নিউইর্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ম্যান অব আ্যচিভমেন্ট এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ম্যান অব এশিয়া খেতাব লাভ করেন।
১৯৮২ সনে একুশ পদক পান এস এম সুলতান সাহেব।১৯৯৪ সনে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার এবং ১৯৮৪ সনে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিষ্ট ও ১৯৮৬ সনে চারু শিল্পি সন্মাননা পান।
শিল্পি এস এস সুলতানকে অনেক কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়াতেন, ছবি আকঁতেন। তিনি ছিলেন সংসার ত্যাগী এবং ভাবুক। কি যেন ভাবতেন সব সময়। তাঁর ভাবনা গুলো ফুটে উঠত ছবি আঁকার মাধ্যমে।
সমাজের চিত্র গুলো ফুটে উঠেছে তাঁর তুলির আঁচড়ে। সমাজের নানা বিধ সমস্যা, নানান কর্মকান্ড চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরে ছিলেন।
রাস্তা দিয়ে একাকি হেঁটে বেড়াতেন এস এম সুলতান। কোন দলবল তাঁর সাথে থাকত না। কারো সঙ্গে কোন গল্প বা আড্ডায় তাঁকে দেখিনি। একদম নিরব। শুধু ঘুরে বেড়াতেন। আর যখন মন চেত ছবি আঁকতেন।
নড়াইলের নদীর পাড়ে, সরকারী হাইস্কুল, রুপগঞ্জ বাজার, জমিদার বাড়ি, এ সব জায়গাতে শিল্পিকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি।
তিনি যে বিশ্ববরেণ্য শিল্পি ছিলেন, এটা কোনদিন তাঁর চাল- চলনে বোঝা যায় নি। একদম ভবঘুরে মনে হত তাঁকে। আসলে তিনি ছিলেন ভাবুক। দেশ, জাতি, সমাজ নিয়ে তাঁর চিন্তা ছিল তাঁর।
যাইহোক, এই মহান শিল্পির চির বিদায় ছিল ১০ অক্টোবর ১৯৯৪ সনে। তাঁর জন্য দোয়া মাগফেরাত রইল। আমিন।
লেখক : শিক্ষক