‘মনে হচ্ছে কুড়িগ্রামে সাংবাদিককে তুলে নেওয়ার ঘটনায় আইন ভঙ্গ হয়েছে’

‘মনে হচ্ছে কুড়িগ্রামে সাংবাদিককে তুলে নেওয়ার ঘটনায় আইন ভঙ্গ হয়েছে’

‘মনে হচ্ছে কুড়িগ্রামে সাংবাদিককে তুলে নেওয়ার ঘটনায় আইন ভঙ্গ হয়েছে’

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম :: কুড়িগ্রামে সাংবাদিককে তুলে নেওয়ার ঘটনায় আইন ভঙ্গ হয়েছে বলে মনে করছেন জনপ্রশাসন সচিব। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, কুড়িগ্রামের স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সাজা দেওয়ার ঘটনায় আপাতত মনে হচ্ছে আইন ভঙ্গ হয়েছে।

তিনি রোববার সকালে গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন।

গত শুক্রবার মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে এনে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত । কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মাদকবিরোধী অভিযানে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে ৪৫০ গ্রাম দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।

সাংবাদিক আরিফুলের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদারের অভিযোগ, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে একদল লোক দরজা ভেঙে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে ‘তুই খুব জ্বালাচ্ছিস’ বলে আরিফুলকে পেটাতে থাকে। এ সময় তাঁকেও গালাগাল করা হয়। একপর্যায়ে কয়েকজন মিলে টেনেহিঁচড়ে আরিফুলকে তুলে নিয়ে যায়। তাঁকে জামাও পরতে দেয়নি। সকালে তিনি জানতে পারেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে আরেক দফা মারধরের পর সাজানো অভিযোগে আরিফুলকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন রোববার বলেন, কুড়িগ্রামের ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত প্রমাণ হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘মাদকবিরোধী অভিযান’-এর উদ্যোগ জেলা প্রশাসন নাকি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয় নিয়েছিল, তা নিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। আর কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেছেন, তিনি ওই গভীর রাতের অভিযানের বিষয়ে কিছুই জানতেন না।

রাতের বেলা এভাবে সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে এনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন শনিবার বলেন, বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম শনিবার বলেন, ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার গতকালই ঘটনাস্থলে গেছেন।

আরিফুল অনলাইন গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে কুড়িগ্রাম শহরের চড়ুয়াপাড়ায় থাকেন। গত শুক্রবার রাতে সেই বাড়িতেই অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা। তিনি দাবি করেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ, আনসার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়েছে। আর আরিফুল ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে দোষ স্বীকার করায় তাঁকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আরিফুলকে তুলে নেওয়ার বিবরণ দিয়ে তাঁর স্ত্রী বলেন, শুক্রবার রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সে সময় দরজায় আঘাত। একপর্যায়ে আরিফুল যখন সদর ওসিকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করেন, তখনই সবাই ঢুকে পড়ে। এই অভিযানে অন্তত ৪০ জন ছিল। তিনি বলেন, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন কিছুদিন আগে একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করেন। এ নিয়ে আরিফুল রিপোর্ট করেন। এ ছাড়া জেলায় নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দেন। এতে জেলা প্রশাসকসহ অনেকে ক্ষুব্ধ হন।

অবশ্য জেলা প্রশাসক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শনিবার তিনি বলেন, আমার নামে কোনো পুকুরের নামকরণ হয়নি। এক বছর আগে এমন প্রতিবেদন করেছিলেন আরিফুল। এ জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, অ্যাজ ইউজুয়াল টাস্কফোর্স অভিযানে গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে একজন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের কয়েকজন ফোর্স, ব্যাটালিয়ন আনসারের পাঁচজন আর মাদকদ্রব্যের তিনজন ছিলেন। মাদকদ্রব্যই আমাদের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছিল।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *