কাশ্মীরের মর্যাদা রদের দিনে রামমন্দির ভূমিপূজায় মোদি

কাশ্মীরের মর্যাদা রদের দিনে রামমন্দির ভূমিপূজায় মোদি

কাশ্মীরের মর্যাদা রদের দিনে রামমন্দির ভূমিপূজায় মোদি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : মোদি সরকারের নাটকীয়তায় বার বার মুসলমানদের শিরে গিয়েই আঘাত পড়ছে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মূল চেতনায় যেনো দেশটি টিকতেই পারছে না। ভারতের উত্তর প্রদেশের ‘মন্দির শহর’ অযোধ্যায় রামচন্দ্রের মন্দির স্থাপনের উদ্দেশ্যে ভূমিপূজা অনুষ্ঠিত হবে বুধবার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে সেই পূজা দিয়েই শুরু হতে চলেছে মন্দির নির্মাণের আনুষ্ঠানিক সূচনাপর্ব। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার থেকেই অযোধ্যায় শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ। সর্বত্র সাজ সাজ রব।

প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ, রাজ্যপাল আনন্দিবেন প্যাটেল, রামমন্দির ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মহন্ত নৃত্যগোপাল দাস, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবতসহ আমন্ত্রিত ১৭৫ জনের। আমন্ত্রিতদের মধ্যে ১৩৫ জনই বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও পুরোহিত। মন্দির-মসজিদ বিতর্ক মামলার অন্যতম পক্ষ ইকবাল আনসারিও আমন্ত্রিত। তিনি ভূমিপূজায় উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন। ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকপ্রাপ্ত মোহাম্মদ শরিফ নামের আরেক মুসলমানও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। রাজ্য সরকারের পক্ষে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে যাবতীয় সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে।

রাজ্য সরকার করোনাসংক্রান্ত সাবধানতা অবলম্বনের কথা বললেও কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত করোনানীতি অনুযায়ী নরেন্দ্র মোদি (৬৯), মোহন ভাগবত (৬৯) ও আনন্দিবেন প্যাটেলের (৭৮) এ ধরনের প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে আসা নিষেধ। কেননা, প্রত্যেকেরই বয়স ৬৫-এর বেশি। নীতি অনুযায়ী ৫০ জনের বেশি ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক জমায়েতও নিষিদ্ধ। গত তিন দিনে অযোধ্যায় প্রায় ৩০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন রামমন্দিরের ২ পুরোহিত ও ১৫ জন নিরাপত্তারক্ষী। এই অবস্থায় কী করে এতজনের উপস্থিতির অনুমতি দেওয়া হয় ও প্রধানমন্ত্রী কেন সেখানে যাওয়ার অযথা ঝুঁকি নিচ্ছেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি অপরিবর্তিত। সেই অনুযায়ী তিনি দিল্লি থেকে বিশেষ বিমানে লক্ষ্ণৌ গিয়ে হেলিকপ্টারে অযোধ্যা পৌঁছাবেন। থাকবেন ৩ ঘণ্টা। ভূমিপূজার পর উপস্থিত আমন্ত্রিতদের সামনে ভাষণও দেবেন। গোটা অনুষ্ঠান দূরদর্শনে ‘লাইভ টেলিকাস্ট’ করা হবে। গতকাল থেকেই সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন অযোধ্যাসংক্রান্ত খবরে সয়লাব।

ভূমিপূজার দিন হিসেবে কেন ৫ আগস্টকে বেছে নেওয়া হলো, সেই প্রশ্নও উঠেছে। ঠিক এক বছর আগে এই দিনে জম্মু-কাশ্মীর দ্বিখণ্ডিত করা হয়। ২০১৯ সালের এই দিনেই প্রত্যাহৃত হয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ, যা কাশ্মীরকে দিয়েছিল বিশেষ ক্ষমতা। এক বছর ধরে উপত্যকার জনজীবন বিপর্যস্ত। ধরপাকড় আকছার। নাগরিক অধিকারও লঙ্ঘিত। এখনো বন্দী বহু প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক নেতা। রাজনৈতিক কর্মসূচির অধিকার এখনো কারও নেই। নেতাদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে রাজনীতি না করার মুচলেকা নিয়ে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গোটা উপত্যকায় অশান্তি রুখতে মঙ্গলবার ও বুধবার জারি করা হয়েছে কারফিউ। দেশ-বিদেশের সম্ভাব্য বিক্ষোভ ছাপিয়ে ভূমিপূজা যাতে খবরের শিরোনাম দখল করে, সেই কারণেই ৫ আগস্টের দিন বাছা হয়েছে বলে কোনো কোনো মহলের ধারণা। ভূমিপূজার পর ৪০ কেজি রুপার ইট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতীকী নির্মাণকাজও শুরু করবেন।

কংগ্রেস রামমন্দির প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করছে না, বরং সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই অনুষ্ঠান জাতীয় ঐক্য, সৌভ্রাতৃত্ব ও সাংস্কৃতিক চর্চার উপলক্ষ হোক। তিনি বলেন, রাম সারল্য, সাহস, ত্যাগ, সংযম ও অঙ্গীকারের প্রতীক। রাম সবার সঙ্গী। সবার মধ্যেই তাঁর অবস্থান।

মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস সদর দপ্তরে শুরু হয়েছে অখণ্ড রামনাম। স্পষ্টতই, ১৯৮৯ সালে রামমন্দিরের শিলান্যাসের মধ্য দিয়ে তৎকালীন কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী যে নরম হিন্দুত্বের রাজনীতি অনুসরণ করেছিলেন, কংগ্রেস আজও সেই কক্ষ থেকে বিচ্যুত হতে চায় না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *