বঙ্গবন্ধু ও আলেম সমাজ

বঙ্গবন্ধু ও আলেম সমাজ

  • আমিনুল ইসলাম কাসেমী

মনে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একজন অসাধারণ সংগ্রামী নেতা। পুরো জীবনটাই যার কেটেছিল সংগ্রাম-সাধনায়। একদম কিশোর থেকে বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রতিবাদী। অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতেন। জীবনের পদে পদে তিনি সংগ্রাম করে বড় হয়েছিলেন। সেই মানুষটির বড় সংগ্রাম ছিল এই দেশকে পাক হায়েনাদের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দেওয়া। সে সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিজয়ী। সত্যিকারের সংগ্রামী নেতা ছিলেন তিনি। এজন্য অনেকে বলেন, সংগ্রাম-সাধনার অপর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আজ ১৫ই আগষ্ট। এ দিন আসলেই বঙ্গবন্ধুর কথা ভীষণভাবে মনে পড়ে। চোখের পাতায় ভেসে ওঠে দুর্বিষহ ও চরম বেদনার্ত স্মৃতি। এই দিনে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের নির্মমভাবে নিহত হওয়ার ঘটনা পীড়া দেয় বার বার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি। যাঁর ডাকে এ দেশের মুক্তিপাগল লাখো মানুষ দেশকে স্বাধীন করতে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, জীবনবাজী রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মধ্য দিয়ে রক্ত আর তীব্র বেদনার পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে আমরা এই স্বাধীন সার্বভৌম ভূমি অর্জন করেছিলাম। যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল প্রায় ত্রিশ লাখ আদমসন্তান, যাদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম। সেই সাথে বর্বরদের দ্বারা ইজ্জত লুণ্ঠিতহয়েছিল লক্ষ লক্ষ মা-বোনের।

বড় পরিতাপের বিষয়, ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট আমাদের সেনাবাহিনীর ভেতর ঘাপটি-মেরে থাকা এক শ্রেণীর দুর্বৃত্ত দ্বারা বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হয়েছিলেন। যা ইতিহাসের এক জঘন্যতম অধ্যায়। বেদনার্ত বিষয় হচ্ছে, যে মানুষটি এই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য আজীবন লড়াই করেছিলেন। কারা ভোগ করেছিলেন বহুবার। যার জীবনের বৃহৎ অংশ কেটেছিল জালিমের কারাগারে, শুধু মাত্র মাজলুম মানুষের মুক্তির জন্য, পরাধীনতার জিঞ্জির থেকে এ দেশকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। সেই মহান ব্যক্তিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল ১৫ আগষ্ট। এ কারণে আগষ্ট মাস আসলে বড় স্মরণ হয়, সেই নির্মমতার কথা। মনে পড়ে সেই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের কথা।

বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষ দরবেশ শেখ আউয়াল, এই বঙ্গদেশে ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন। তিনি হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রহ.) এর অন্যতম প্রিয় সঙ্গী ছিলেন। ১৪৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ইসলাম প্রচারের জন্য তিনি বাগদাদ থেকে বঙ্গে আগমন করেন বলে জানা যায়। পরবর্তীকালে তাঁরই বংশধরগণ ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বসতি স্থাপন করেন। জাতির জনক হচ্ছেন ইসলাম প্রচারক শেখ আউয়ালের সপ্তম অধস্তন বংশধর। পূর্বসূরীদের ঐতিহ্য-অনুগামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন ইসলাম প্রিয় ব্যক্তি। ইসলামকে তিনি মনে-প্রাণে ভালবাসতেন। নিজে ইসলামী বিধি-বিধান মেনে চলতেন। আলেম-উলামাদের সাথে তাঁর আন্তরিক উঠা-বসা ছিল। তৎকালীন সময়ের হক্বানীআলেমদের সাথে তাঁর ছিল গভীর সখ্য।

বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতায় আজো শোনা যায়, ‘আমি বাঙালী, আমি মুসলমান’। সত্যি বঙ্গবন্ধু একজন খাঁটি মুসলমান ছিলেন। তিনি যে রাজনীতি করেছেন, একজন মুসলমান হিসেবে রাজনীতি করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির দিকে নজর করলে দেখা যায়, এ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন একজন আলেম। এমনিভাবে বহু বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন একজন প্রতিভাবান আলেম, যাঁর নাম মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। এরপর ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আরেক হক্বানী আলেম মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ সাহেব।

আমরা লেবাস সর্বস্ব ইসলামে বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে।

আলেমদের সাথেই রাজনীতি করতেন বঙ্গবন্ধু। কোনো বিপদগামী মানুষের সাথে তিনি রাজনীতি করেন নি। তিনি ছিলেন ইসলামপ্রেমী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে বেতার ও টেলিভিশনে প্রদত্ত ভাষণে তাঁর উন্নত মনোভাব স্পষ্টরূপে প্রকাশ পায়। তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। এ কথার জবাবে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য, আমরা লেবাস সর্বস্ব ইসলামে বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হযরত রাসূলে করীম (সা.) এর ইসলাম, যে ইসলাম জগৎবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। ইসলামের ‘প্রবক্তা’ সেজে পাকিস্তানের মাটিতে বার বার যারা অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ-বঞ্চনার পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছেন, আমাদের সংগ্রাম সেই মোনাফেকদের বিরুদ্ধে।’

রাজনীতির বাইরে আলেম-উলামার সাথে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক ছিল। মুজাহিদে আজম আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) এর সাথে দারুণ সুসম্পর্ক ছিল। তিনি আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) এর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ নিয়েছেন। গভীর আন্তরিক সম্পর্কের টানে বার বার তিনি লালবাগ মাদ্রাসায় ছুটে গেছেন। এবং শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আন্তরিকতার টানে সদর সাহেব হুজুর (রহ.) এরও ইত্তেফাক যাওয়ার ঘটনা মাওলানা আতাউর রহমান খানের স্মৃতিচারণে পাওয়া যায়।

এ রকম মাওলানা আতাহার আলী (রহ.) ‘ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে ছয় দফা’ বইয়ের লেখক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মাওলানা অলিউর রহমান (রহ.), ক্বারী মোহাম্মদ ইসহাক সাহেব, ক্বারী উবায়দুল্লাহ (রহ.), ‘মাসিক মদীনা’ সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (রহ.), শায়খুল হাদীস আজীজুল হক সাহেব (রহ.) সহ অসংখ্য আলেমে দ্বীনের সাথে বঙ্গবন্ধুর ছিল চমৎকার সুসম্পর্ক। অর্থাৎ আলেমগণের সাথে তাঁর সুসম্পর্কের বহু নজির, বহু ঘটনা রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর যখন ক্ষমতায় ছিল, এ দেশে ইসলামের জন্য বহু কাজ করেছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যখন দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়েছিল, তখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই এ দেশে মাদ্রাসাগুলো পুনরায় খোলা হয়। তিনিই মাদ্রাসাগুলো চালু করে দ্বীনী শিক্ষা সম্প্রসারণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনিই মাদ্রাসা বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা। মাদ্রাসা বোর্ডকে অন্যান্য বোর্ডের মতো স্বায়ত্বশাসন দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা, যেটা আমাদের বাংলাদেশের মানুষের গর্ব। এই বিশ্ব ইজতেমার জায়গা বরাদ্দ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। কাকরাইল মসজিদের জায়গা সম্প্রসারণেও তিনি অবদান রেখেছিলেন। হজযাত্রীদের জন্য পাকিস্তান আমলে কোনো সরকারী অনুদানের ব্যবস্থা ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতা বাংলাদেশে প্রথম হজযাত্রীদের জন্য সরকারী তহবিল থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করেন। শুধু তাই নয় তিনি হজভ্রমণ কর রহিত করেন। তবে বঙ্গবন্ধু শাহাদাতের পরবর্তী সরকার হজে সরকারী অনুদান বন্ধ করে দেয়। সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুই প্রথম বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেন।

বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়কালে তাঁরই নির্দেশে সর্ব প্রথম বেতার ও টেলিভিশনে পবিত্র কোরআন ও তার তাফসীর এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচার করার সুব্যবস্থা করেন। তাঁর আমলেই শবেকদর, মিলাদুন্নবী (সা,), শবেবরাত উপলক্ষে সরকারী ছুটি ঘোষণা এবং উল্লিখিত দিবসসমূহের পবিত্রতা রক্ষার্থে সিনেমা হলো বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন।

তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। যে কারণে ওই দেশে বিদেশ থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য কেউ অনুমতি পেত না। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশটি সহযোগিতা করেছিল। ফলে সে সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সে দেশের নেতৃবৃন্দের একটি সুদৃঢ় বন্ধুত্বের ভিত্তি রচিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রথম তাবলীগের জামায়াত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

এমনিভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এ দেশে ইসলাম প্রচার-প্রসার এবং এ দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ইসলামের প্রশান্তিময় স্রোতধারায় পরিচালিত করতে কাজ করে চলছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে পবিত্র কুরআনের তরজমা, তাফসীর, হাদীস গ্রন্থের অনুবাদ, রাসূলে করীম (সা.) এর উপর রচিত বই, সাহাবী (রা.) জীবনী, ইসলামী বিশ্বকোষ, সীরাত বিশ্বকোষসহ সাড়ে তিন হাজারেরও বেশী বই প্রকাশিত হয়েছে। এভাবে বহু ইসলামী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। নিজে ইসলাম প্রিয় ছিলেন, এবং ইসলামী ভাবধারার বহু কাজ তাঁর হাতেই হয়েছে।

বড় দুঃখের বিষয়, বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর, যারাই পরবর্তীকালে ক্ষমতায় এসেছেন, তারা বঙ্গবন্ধুর ইসলামী কীর্তিগুলো মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন। কোনো সরকার বঙ্গবন্ধুর সেসব অবদানের কথা মানুষের সামনে তুলে ধরে নি। এমনকি, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সংগঠনকে অন্যভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পঁচাত্তরের পরবর্তী সময়, আশির দশক, নব্বইয়ের মাঝামাঝি সময়ের প্রজন্মের সামনে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর দলের ভালো কোনো দিক জাতির সামনে তুলে ধরা হয়নি। সে সময়ের ক্ষমতাসীন দল এবং কিছু কিছু সংগঠন, যারা ক্ষমতায় না থেকেও বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে বিষোদগার ছড়িয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধুর ইসলামী কার্যক্রমকে চেপে রেখেছিল। তবে সত্য কখনো গোপন থাকে না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর চেপে-রাখা ইতিহাসের এই অধ্যায়টি ফের আলোর মুখ দেখতে থাকে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর সেসব ইসলামী কীর্তিগুলোকে জাতির সামনে ক্রমশঃ স্পষ্ট হয়ে আসে। সাধারণ মানুষ জানতে পারতে থাকেতিনি ইসলামের জন্য কত কিছু করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়লে, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায়, তিনি প্রকৃত ইসলামপ্রেমী ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) তিনি পিতার মতো ইসলামী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশব্যাপী ইসলামী কীর্তি এখন তাঁর। এ দেশের অবহেলিত কওমী মাদ্রাসার উন্নয়নে এবং সনদের স্বীকৃতিতে তিনি বড় অবদান রেখেছেন। দেশব্যাপী মসজিদ মাদ্রাসার ব্যাপক উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় দৃষ্টি নন্দন মসজিদ নির্মাণ করে যাচ্ছেন। যেটা এই সরকারের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই মসজিদ সবগুলো নির্মাণ হলে এ দেশের মুসলমানদের বড় উপকারে আসবে। দ্বীন-ইসলামের তারক্কী হবে। আম-জনতা বড় ফায়দা হাসিল করতে পারবে।

বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়লে, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায়, তিনি প্রকৃত ইসলামপ্রেমী ছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পুরো সময়টা আলেম-উলামা এবং দ্বীনদার মানুষের সাথে তাঁর কেটেছে। তিনি ইসলামেরই কাজ করেছেন। কোন নাস্তিক্যবাদী চিন্তা-চেতনা নিয়ে তাঁর রাজনীতি ছিল না। তাঁর সংগঠনও কোন নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসে ছিলেন না। একটা আলেমদের বহর ছিল আওয়ামী লীগে। প্রতিষ্ঠাতা লগ্ন থেকে আলেম-উলামা যেখানে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন, সেখানে কখনো নাস্তিকদের স্থান হতে পারে না।

কিন্তু দুঃখজনক হলো, বঙ্গবন্ধু ইসলামী ভাবাপন্ন হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে অন্যভাবে চিত্রায়িত করা হলো, জাতির সামনে ভিন্ন কায়দায় তাঁকে দেখানো হলো। আর আলেম-উলামা এবং আওয়ামী লীগ এর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করা হলো। শেষমেষ আওয়ামী লীগের মধ্যে বাসা বাঁধল কিছু নাস্তিক এবং কমিউনিষ্টপন্থী লোকেরাও। ওরা আওয়ামী লীগে ঢুকে দলকে ভিন্ন খাতে ব্যবহারের চেষ্টা করল। অথচ বঙ্গবন্ধু আমাদের। বঙ্গবন্ধু আলেমসমাজের। যিনি সারাজীবন আলেমদের সাথে চলেছেন। যার সংগঠনের উদ্বোধন হয়েছে আলেমদের দিয়ে। যিনি সারাজীবন ইসলামের খেদমত করেছেন। সুতরাং তিনি তো কখনো ইসলামের দুশমন হতে পারেন না।

এখন আওয়ামী লীগে আলেমদের পদচারণা নেই বললেই চলে। সংগঠনের বড় কোনো পদে অন্ততঃ একজন আলেমও খুঁজে পাচ্ছি না। অথচ এ সংগঠনের শুরুটাই করেছিলেন আলেমগণ। অপর দিকে এই সুযোগে কিছু লোক পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ভীতি ছড়ায়েছে। মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ায়েছে। আওয়ামী লীগ ‘অমুক-তমুক…’!

বড় আশ্চর্য! ওনারা আওয়ামী লীগকে খারাপ বলেন, তাহলে আপনারা কি দুধে ধোয়া? আপনাদের তথাকথিত কীর্তি সকলের জানা আছে। আপনারা কতটুকু ইসলামকে ভালবাসেন, সেটা আমরা বেশ কয়েকবার দেখলাম। এমনিভাবে আপনাদের ক্ষমতার অংশীদার যারা ছিল, তাদের হালাতও আমরা দেখেছি। আপনাদের যে অবস্থা, আপনাদের সঙ্গীদের অবস্থা এবং ইসলামের জন্য আপনাদের যা কিছু অবদান, তার থেকে আওয়ামী লীগের পাল্লা ভারী। ইসলামের নাম দিয়ে, ইসলামের দোহাই দিয়ে কত গর্হিত কাজের জন্ম আপনারা দিয়েছেন, সেটাও জাতি চোখ খুলে দেখেছে।

আসলে আলেমগণ আওয়ামী লীগ থেকে সরে যাওয়া, জাতির জন্য মঙ্গল হয়েছে বলে মনে হয় না। কেননা আলেমগণ সঙ্গে থাকলে আওয়ামী লীগে আর নাস্তিকরা বাসা বানাতে পারত না। ওরা আওয়ামী লীগে বসে আলেমদের শানে বিষোদগার করার সাহস পেত না কোন দিন। আলেমগণ আওয়ামী লীগের সাথে নেই বিধায়, ওরা ফাঁকা পেয়ে দলকে কলুষিত করে যাচ্ছে। আলেম-উলামার প্রতিষ্ঠিত সংগঠনকে ওরা দখল করে বসে আছে। এ জন্য আওয়ামী লীগ আমাদের। বঙ্গবন্ধু আমাদের-আলেমদের। তিনি একজন ইসলামপ্রিয় এবং আলেমদের প্রিয় মানুষ ছিলেন।

পরিশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের জন্য আন্তরিকভাবে দুআ রইল। ইসলামের জন্য তিনি যে সকল কাজ করেছেন, সেগুলো যেন সদকায়ে জারিয়া হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁদেরকে ক্ষমা করুন, রহম করুন এবং জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। আমীন।

লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট

আরও পড়ু: আমার স্বপ্নপুরুষ যিনি, আমি তাঁর গল্প বলি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *