পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : নবিজী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘর। একদিন এ ঘর দেখতে গেলেন সাহাবায়ে কেরাম। প্রিয় নবির ঘর যেন জৌলুস ও আভিজাত্যবিহীন সারা দুনিয়ার সুখ-সাচ্ছন্দ্যে ভরপুর। এ এক অন্যরকম জান্নাতি পরিবেশ।
সাহাবায়ে কেরাম দর্শনার্থীদের ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরে কী আছে? তা দেখার জন্য একদল লোক তাঁর বাড়িতে উপস্থিত। তারা সেখানে কী দেখতে পেলেন? কেমন ছিল তাঁর ঘর?
তাদের সামনে সাহাবায়ে কেরাম নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাড়ির বিছানা, আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র সম্পর্কে অবহিত করলেন। ইসলামে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, কারো ঘর বা কক্ষের দিকে তাকানো বা দেখা শোভনীয় নয়। তবে আদর্শ শেখার জন্য নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরের কিছু দৃশ্য দেখবে একদল লোক।
নবিজীর ঘর; যার ভিত্তি তো বিনয় এবং মূলধন হলো ঈমান। এ ঘরের দেয়ালে কোনো প্রকার জীব-প্রাণীর ছবি টানানো নেই। যা আজকের দিনের অভিজাত লোকদের ঘরের দেয়ালে অনেকে জীব-জন্তুর ছবি লটকিয়ে রাখা হয়। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ বলেছিলেন-
‘যে বাড়িতে কোনো প্রকার জীবের ছবি ও কুকুর থাকে সে বাড়িতে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।’ (বুখারি)
এতো গেলো ঘরের দৃশ্য। যেখানো জীব বা প্রাণীর ছবির অস্তিত্ব নেই। একেবারেই সাদামাটা ঘর।
এবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত কিছু আসবাবপত্র দেখা যেতে পারে। এ সম্পর্কে হজরত সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন-
একদিন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ১০ বছরের খাদেম হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের সামনে লোহার পাত দিয়ে বাঁধাই করা কাঠের তৈরি এক পাত্র নিয়ে উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হে সাবেত! এ হলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যবহৃত পাত্র। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ পাত্রে পানি, খেজুর সরবত, মধু ও দুধ পান করতেন।’ (তিরমিজি)
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও জানান যে- ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (পানীয়) পান করার সময় পাত্রের বাইরে তিনবার নিঃশ্বাস ফেলতেন।’ (বুখারি, মুসলিম)
এমনটি করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। কারণ পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ফেললে তা (পানীয়) দুষিত হয়ে যায়। এ কারণেই তিনি পানীয়ের পাত্র ফুঁ দিতে নিষেধ করতেন। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পান করার সময় পাত্রের ভিতর নিঃশ্বাস ফেলতে ও ফুঁ দিতে নিষেধ করেন।’ (তিরমিজি)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও?য়া সাল্লামের ঘরে ছিল একটি লৌহ বর্ম। যেটি তিনি জিহাদের ময়দানে, যুদ্ধাভিযানে কিংবা কঠিন বিপদের মুহূর্তে এ বর্মটি ব্যবহার করতেন। এ বর্মটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জীবদ্দশায় এক ইয়াহুদির কাছে তিন ‘সা’ জবের বিনিময়ে বন্ধক রেখেছিলেন। অবশ্য এ বর্মটি বর্তমানে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরে নেই। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন তার লৌহ-বর্মটি ইয়াহুদির কাছেই বন্দক ছিল।’ (বুখারি ও মুসলিম)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘর ছিল দুনিয়ার সব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরপুর। তিনি কখনো পরিবারের কাউকে আতঙ্কে ফেলার জন্য হঠাৎ ঘরে প্রবেশ করতেন না। ঘরে প্রবেশের আগে তিনি সবাইকে সালাম দিয়ে সতর্ক করেই ঘরে প্রবেশ করতেন।’ (যাদুল মাআদ)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একাধিক হাদিসের বিষয়বস্তু উদার হৃদয়ে অনুধাবন করা যেতে পারে। তিনি বলেছেন- ‘ইসলামের পথে হেদায়েত প্রাপ্তদের জন্য সৌভাগ্য, এমতাবস্থায় তার জীবনোপকরণও যথেষ্ট ও সন্তুষ্টি পূর্ণ।’ (তিরমিজি)
‘যে ব্যক্তি নিজ গোত্রে নিরাপদে বসবাস করেছে, শারীরিক ভাবেও সে সুস্থ এবং তার কাছে রয়েছে সেই দিনের পরিপূর্ণ খাবার; তাহলে লোকটি এমন যেন- ‘সারা দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যও তার মুঠোই রয়েছে।’ (তিরমিজি)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আভিজাত্যহীন ঘর ও তার জীবনঘনিষ্ঠ নসিহত হোক সব মুসলিমের চাওয়া-পাওয়া। আর তাতেই মিলবে দুনিয়া ও পরকালের সুখ ও শান্তি।
আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে তার অনুসরণ ও অনুকরণের তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের জীবন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরপুর করে দিন। আমিন।