শিক্ষাসনদ আন্দোলনের অগ্রদূত আল্লামা মাসঊদ

শিক্ষাসনদ আন্দোলনের অগ্রদূত আল্লামা মাসঊদ

আব্দুল্লাহ আল আমীন ●: বাংলাদেশে ২০ লাখ কওমী শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি কওমী শিক্ষা সনদ স্বীকৃতি। কওমি মাদরাসা শিক্ষাসনদ কালে কালে নানা আন্দোলনে রূপ নেয় জনপ্রত্যাশায়। পল্টনের মুক্তাঙ্গনে শায়খুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক রহ.-এর জাগরণের ফলে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র [চীনমৈত্রী] থেকে বিগত চার দলীয় জোট সরকারের ঘোষণার বাণী ছাড়া জাতি বেশি কিছু পায়নি। নানা ছলছাতুড়ি আর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় স্বীকৃতি ও কওমী মাদরাসার আলেম ওলামাগণ।
আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ দামাত বারাকাহুতমÑ তিনি সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করে দেশব্যাপী জনসচেতনতা, জনমতগঠন, সভা-সেমিনার, সংলাপ, মানববন্ধন, মতবিনিময়ের মাধ্যমে কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদাইয়ের লক্ষ্যে নীরব আন্দোলনে মাঠে নামেন। বিজ্ঞ ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের আহ্বানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, জনসাধারণ ও কওমী অঙ্গনের অনেকেই তৎপর হন। অতঃপর সরকারের নজরে আসে কওমী শিক্ষা সনদ স্বীকৃতির বিষয়টি সারাদেশে ব্যাপক সাড়া জাগায়। রাজনৈতিক মহলে আলোচনার পর্যালোচনা বিষয়ে রূপ নেয়।

দারুল উলূম ওেবন্দের ৮ মূল নীতি অনুসরণ করে স্বীকৃতি চাওয়া হয়। এরও একটা কারণ আছে। অনেকেই হয়তো বলতে চান- এ দেশের আলেমগণ কি কম বুঝেন? সবক্ষেত্রে দারুল উলূম দেওবন্দ প্রয়োজন হয়? এ সময়কটার অনেক তরুণেরও সেটা প্রশ্ন হিসেবে মাথায় ঘুরে। কেবল আল্লামা মাসঊদই এই দারুল উলূম দেওবন্দ জুড়ে দিয়েছেন এমন নয়। মুফতি আহমদ শফী হযরতও দারুল উলূমের আদলের কথা বিভিন্ন আলোচনায় উপস্থাপন করেছেন।

পাঠকের কানে কাণে একটা কথা বলে রাখিÑ সময়ের তরুণরাও অনেককে এ ক্ষেত্রে বিশ্বাস করতে চাইছিল না। যেমন এখন স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটিতে কওমি অঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত নয় বরং বিরোধী, এমনকি হুমায়ুন আজাদ কন্যাকেও মেনে নিয়েছেন। বিজ্ঞ আলেমগণ আন্দোলনের সময় কোনো ক্ষেত্রেই দারুল উলূম দেওবন্দের আট মূলনীতির বাইরে যেতে চাইছিলেন না।

আল্লামা মাসঊদ কওমী মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে যুগোপযোগী শিক্ষা সিলেবাস ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কারিকুলাম প্রণয়নে প্রবীন এ আলেম অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৈরী করেন সুনির্দিষ্ট রূপরেখা। নীতিমালা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রেরণ করা হয়। পরে এই নীতিমালা চুলছেড়া বিশ্লেষণ করা হয়। চূড়ান্ত নীতিমালা করতে দেশখ্যাত শীর্ষ আলেমদের মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশমালা আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা গণভবনে আলেম ওলামাদের এক সম্মেলনে স্বীকৃতি ঘোষণা করেন। যা অল্প সময়ে এগিয়ে যায় স্বীকৃতির পাঠ। ২০১৭ সালেই প্রথম দাওরায়ে হাীসকে এম.এ, মাস্টার্স এর মান প্রদান করে। এ বছরই পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। যা দেশে কওমী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার সৃষ্টি হয়।

বেফাক ও পাঁচ বোর্ড মতানৈক্য সৃষ্টি হয় ইফার ডিজিসহ ইউজিসি’র প্রতিনিধি নিয়ে যে কমিটি গঠন করে সেখানে কোন আলেমকে না রাখায় তীব্র হয়ে ওঠে কওমী অঙ্গন। আলোচনা সমালোচনার কবলে পড়ে বেফাকসহ তাদের সহযোগী ব্যক্তিরা। তখন পরিষ্কার হয় আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের ভূমিকা যে পূর্বে সঠিক ছিল। যা অনেকেই না বুঝে সমালোচনা করেছেন।

আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দেশের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্রান্ড ইমাম, ইকরা বাংলাদেশের মহপরিচালক, ইসলামী গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, সোয়া লক্ষ আলেম ইমাম মুফতিগণের স্বাক্ষর সম্বলিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী ফাতওয়া প্রকাশ করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের এক নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। মিসরের আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে তার রচিত বই পাঠ্যসূচিতে অর্ন্তভুক্ত। বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশ হয়েছে নিজের সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা একশ’র উপরে। তিনি একজন সদালাপি সজ্জন মানুষ হিসেবে অনেকের মনে স্থান করে নিয়েছেন আল্লামা মাসঊদ। জীবনে নিজের চাওয়া পাওয়াকে দূূরে রেখে দেশ জাতির কল্যাণে জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন। তারপরও কওমী মাদরাসা ও শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে জীবনের শেষ সময়ে কঠিন মুহূর্তে নিজেকে ঢাল স্বরূপ আবির্ভাব হয়ে একটি ঐতিহাসিক শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মমুখি জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মাসিক পাথেয়, ডিসেম্বর ২০১৭

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *