অনন্তকাল তারাই বাঁচে | মুহম্মদ নূরুল হুদা
সূর্যের বুকে জন্ম নিলো আলো।
সেই আলো বুকে নিয়ে উদিত হলো সূর্য।
তারপর দশদিগন্ত আলোকিত করে
সূর্য চললো গগনে গগনে।
হিংসা হলো অন্ধকারের।
সেও নাছোড়বান্দার মতো
তাকে তাড়া করলো।
তবে দেখা মাত্র তাকে
গিলে খেলো আলো।
তাই দেখে ভোরের পাখি ভীষণ মজা পেলো।
উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সে-ও সূর্যের পিছু নিলো।
দিন গড়িয়ে রাত এলে তো আসবে অন্ধকার।
‘তখন কি করবে এই সূর্য, এই আলো?’
ভেবে ভেবে কূল পেলো না সে।
– রাত এলে তুমিও কি করবে পাখি?
– কেন? গাছে গাছে পাতাদের নীড়ে ঘুমিয়ে পড়বো।
– বেশ তো! তাই ঘুমিয়েই নিয়ো।
মুচকি হেসে উড়ে চললো আলোর সূর্য।
পাখিও খুশি মনে সূর্যের পেছন পেছন উড়ে চললো।
সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা।
এবার তো রাত আসবেই। পাখিও ঘুমিয়ে পড়বে পাতার আড়ালে।
কিন্তু কী আশ্চর্য! পৃথিবীর এক পাশ পার হয়ে
আরেক পাশে আবার উদিত হলো দিনমণি।
তবে তার আগে তাকে খানিক তাড়া করলো অন্ধকার।
দিনমণি তেমন গা করলো না; বরং মুহূর্তেই তাকে গিলে খেলো।
হানাদার অন্ধকার দিনমণির আলো-বুকে
বেমালুম বিলীন হয়ে গেলো।
পাখিটিও আর পাতার আড়ালে যায় না।
সে ঢুকে পড়ে দিনমণির উড়ন্ত আলো-খাঁচায়।
তারপর কখনো ঘুমায়, কখনো উড়ে বেড়ায়।
না, এই আলোর খাঁচার কোনো সীমান্ত নেই।
যতদূর আলো যায়, ততদূর খাঁচাও বেড়ে যায়।
একটি বিন্দু থেকে জন্ম নেয় এই আলো-খাঁচা।
তারপর মহাবিশ্বের আকার নিয়ে তার প্রসারতা।
আসলে পুরো সূর্যটাই একটা আলো-খাঁচা।
তার শুরু আছে, শেষ নেই। জন্ম আছে, মৃত্যু নেই।
বেশ মজা পেয়ে যায় ছোট্ট পাখি।
সে খাঁচার বুকে ঘুমায়, ক্ষিধে পেলে পান করে আলো।
যতবার সে আলো পান করে
ততবার সে আবার নতুনভাবে জন্ম নেয়।
সদ্যোজাত শিশু হয়ে যায়। পরমুহূর্তেই লাভ করে যৌবন।
তারপর ডানা মেলে খাঁচার দশদিগন্তে উড়ে বেড়ায়।
সে বুঝতে পারে, এখন থেকে তারও কেবল জন্ম আছে, মৃত্যু নেই।
সূর্যের খাঁচানীড়ে আলো পান করতে করতে
এভাবেই ছোট্ট পাখিটি অমরতার সন্ধান পেয়ে যায়।
সেই থেকে
আকাশের বাঁকে বাঁকে
পাখিটি শুধু ডাকে আর ডাকে।
কিচিরমিচির তার ভাষা।
বুক ভরা তার ভালোবাসা।
তাকে দেখে কেমন আকুল
একতারা হাতে এক বাউল
গেয়ে ওঠে দরদী ব্যাকুল,
“শোনো এক সূর্য আছে।
বুকজোড়া তার আলো আছে।
আলোর বুকে পাখিও আছে।
অনন্তকাল তারাই বাঁচে।
হায়রে আমার মানুষপাখি
উড়ছো শুধু গাছে গাছে!”
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯