পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : এ যেন মানবতার সবচেয়ে বড় চিত্র। মানুষের পাশে থাকার এক মহান ব্রত নিয়েই যেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের দীর্ঘকালের পথচলা। যখন, যেখােনই প্রয়োজন পড়েছে মানুষের সেবায় সবার আগেই এ দলটি। নিজেদের সর্বোচ্চ উজার করে মানব সেবায় নেমে যায় দলের কর্মীরা। সংখ্যাগরিষ্ট ভারতে হিন্দু-মুসলিম দূরত্ব যতই থাক। মুসলমানরা সর্বদাই তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেন। এক ভারতীয় হিসেবেই একসাথে বসবাস করতে চায় তারা। আর তাদের মাঝে এ বিশ্বাসটা জাগিয়ে রাখে জমিয়তে উলামা হিন্দ।
কাজে কাজে পথ দেখায় তারা। তাই তো শুধু মুসলানই নয় বরং সারা ভারতে যেখানেই সংকট আর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে সেখানেও হিন্দুদের পাশে জমিয়ত। সম্প্রতি তা আবারো প্রমাণ হলো। জমিয়তে উলামা হিন্দের জেনারেল সেক্রেটারী মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানী অমৃতসরে রেল দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
এদিকে এই দুর্ঘটনায় মৃত সকলের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের মহাসচিব তথা প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ সাইয়্যেদ মাওলানা মাহমুদ মাদানি। মাহমুদ মাদানী মাদানী জানিয়েছেন, অমৃতসরে আহত সকলের পাশে দাঁড়াবে জমিয়তে জমিয়তে উলামা হিন্দ। জমিয়ত সবসময়ই মানুষের পাশে। এ দুর্ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
প্রসঙ্গত, ট্রেনটি জালান্দর থেকে অমৃতসরে আসছিল। অমৃতসরের জোড়া ফটকের কাছেই হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘রাবণ বধ’ চলছিল। রাবণের কুশপুত্তলিকায় আগুন দেওয়া হচ্ছিল। এসময় আতশবাজির শব্দে ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেরা ট্রেনের হুইসেল শুনতে পাননি। এতে শিশুসহ অন্তত ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ দুর্ঘটনায় শিশুও নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলে প্রায় ৭০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
যেসব ছবি স্থানীয় সাংবাদিকরা পাঠিয়েছেন, তা ভয়াবহ। শরীরের নানা অংশ রেল লাইনের আশেপাশে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
প্রচুর বাজি ফোটনোর শব্দ হচ্ছিলো, ফলে ট্রেন আসার শব্দ মানুষ শুনতে পায়নি।
রাবন-দহনের সময়ে বহু মানুষ সেটার ভিডিও করছিলেন মোবাইল ফোনে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া একজন পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য।
এরকমই একটি ভিডিও বিবিসি-র হাতে এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, রাবণের কুশপুতুলে আগুন দেওয়া হয়েছে, আর তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একটি ট্রেন বেশ দ্রুতগতিতে চলে গেল।
ওই ট্রেনটি পাঠানকোটের দিক থেকে আসছিল বলে জানা গেছে।
স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলি প্রত্যক্ষদর্শীদের যে বয়ান দেখাচ্ছে, সেখানে বলতে শোনা যাচ্ছে যে প্রতি বছরই এই জায়গায় রাবণ পোড়োনো হয় কিন্তু ওই সময়টায় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে, বা অতি ধীরে ট্রেন যায়। কিন্তু এবারে ট্রেনটি দ্রুতগতিতে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শী অমিত কুমার বিবিসিকে জানিয়েছেন, বহু মানুষ রেল লাইনের ওপরেই ভিড় করে দাঁড়িয়েছিলাম প্রতি বছরের মতোই। রাবন দহন দেখছিলাম, হঠাৎ করেই জোরে ট্রেনটা এসে পড়ল লোকের ওপর দিয়ে চলে গেল। কোনও হর্ণ বাজায় নি, ট্রেনের গতিও কমায়নি একটুও।
বন্ধুদের সঙ্গে রাবণ দহন দেখতে জোড়া ফটকে গিয়েছিলেন রবি। বিবিসিকে তিনি বলেন, তার এক বন্ধুকে দুর্ঘটনার পর থেকে খুঁজে পাচ্ছেন না।
এখনো বাতাসে কান্নার চোখের জল যেনো বাষ্প হয়ে উড়ছে অমৃতসরে। সামাজিক সংগঠন জমিয়তে উলামা হিন্দ নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণায় হিন্দুরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছে।