- আদিল মাহমুদ
আলিফ লাম মিম
আকাশের অন্তরে বাজে অজস্র রহমত, মাগফেরাত, নাজাতের বীণ
চোখের পানিতে জায়নামাজ ভিজিয়ে আদায় করো মাবুদের ঋণ
জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে ক্ষমা চেয়ে করো জমাট পুরোনো পাপের ক্ষয়
কুরআন নাজিলের এই মাস থেকে উত্তম সময় কি আর পৃথিবীতে হয়!
ইসলামের হুকুম-আহকাম পালন করে সরল-সহজ মনে করো ইবাদাত
ধর্মীয় পোশাকে শরীর ঢেকে গোপনেও না করো গোমরাহি-বিদআত
জীবনের দিশা পেতে অশুদ্ধ পথ বর্জন করে ধরো সিরাতে মুস্তাকিম
হেদায়াতের জন্য জবান সবসময় জিকির করুক আলিফ-লাম-মিম।
পাক হো নসিবওয়ালি
তাহাজ্জুদ পড়ে, কুরআন তেলাওয়াত—জিকির আজকার করে, আয়েশামনি কপালে তাসবিহ লাগাতো প্রগাঢ় বিশ্বাসে; পাক নসিবে।
সুবহে সাদিকের আলো গায়ে মেখে, জায়নামাজে পা ছড়িয়ে, জানালা দিয়ে তাকিয়ে, আকাশে আতিপাতি করে, কি যেন খুঁজতো আয়েশামনি। কি খুঁজতো?—একটি সন্তান!
কবুল বলার একবছর পর, ডানা মেলে আকাশে উড়তেই, ঘন কালো মেঘ নেমে আসে আয়েশামনির শাড়ি জুড়ে। বছরের পর বছর কাটে মাতাল স্বামীর চড়-থাপ্পড় গালিগালাজে। সেই সাথে শুনতে হয় বন্ধাত্বের গান—খোট, লাঞ্চনা, অপমান।
আয়েশামনির বাহির রঙিন প্রজাপতির মত উড়ো, স্বাধীন, দ্বিধাহীন, ব্যথাহীন! অথচ ভেতর জামরুলের মত পানসে, ফ্যাকাশে, রঙহীন, স্বাদহীন।
কলঙ্ক মোচনে নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়ে, কুরআন তেলাওয়াত—জিকির আজকার করে, আয়েশামনি আরশের দিকে চোখ তুলে বলে, ‘পাক হো নসিবওয়ালি, পাক হো।’
মুসলমানের নরম দিল
এক পুরোনো মসজিদ থেকে ভেসে আসছে আহবান। আকাশে বাতাসে ধ্বনি উঠছে—‘আল্লাহু আকবার-আল্লাহু আকবার।’
মিনারে দাঁড়িয়ে হৃদয় ফুটিয়ে সুমধুর কণ্ঠে বলছে—‘সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ এক, তার কোন শরিক নেই।’
মন-চক্ষু শীতলকারী রাহমাতুল্লিল আলামিনের নামটি জগৎবাসীকে শুনিয়ে বলছে—‘মুহাম্মাদ তাঁর প্রেরিত রাসূল।’
রাজা-প্রজা সবাইকে সমান করে নতশিরে মসজিদে আসার ঘোষণা করে বলছে—‘হে মানবজাতি, ফিরে এসো কল্যাণের পথে। সফলতার পথে।’
গভীর ঘুমে ডুবে থাকা উম্মাহকে হৃদয় জুড়ানো দরদমাখা মায়াবী সুরে ডাকছে—‘ঘুমের চাইতে নামাজ ভালো।’
দূর মসজিদ থেকে ভেসে আসছে আহবান। আকাশে বাতাসে ধ্বনি উঠছে—‘আল্লাহু আকবার-আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’
অতঃপর নতুন একটি কালেমা যুক্ত করে—‘সাল্লু ফি বুয়ুতিকুম’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়ছে।’
কে তুমি মুয়াজ্জিন—হৃদয়ের মানিক।
বলো, ‘নতুন কালেমা কেমনে সহ্য করবে মুসলমানের নরম দিল?’
করুণা চায় মালিকের কাছে
সঙ্গী সাথীহারা এক মুসাফির
দুরু দুরু হৃদয়ে—
বন্দি আছে ঘরে
যেন সে অপেক্ষমাণ ফাঁসির আসামি।
অদৃশ্য একটি দানব
খেয়ে ফেলতে চায় তাকে
যার কোন শিকারি নেই এই গ্রহে—
আসমানের নিচে।
একসময় মৃত্যুর খড়গ নিয়ে মুসাফির
বিরামহীন পথ চলতো—
অজানা পথে
অচেনা গন্তব্যে…!
আজ সে করুণা চায় মালিকের কাছে।
গুনাহ
মাটিতে পা রেখেছি বলে আমার পিছু ছাড়লো না! তার থেকে চাই ক্ষমা। গুনাহ!
মৃত্যু
মাটির বুকে ফুলের ঝরে পড়ার মত তুমিও একদিন অনায়াসে ঝরে পড়বে। মাটিতেই মাটি হবে।
রূহ যাবে আরশে
সুপ্ত সুখে পঙ্খী উড়া মুক্ত আকাশ ভেদ করে, রূহ যাবে আরশে। অর্থ বিত্ত রূপ বৈভব, পড়ে থাকবে জামিনে। এক থান সাদা কাপড় জড়িয়ে, দেহ যাবে কবরে। মাটির মানুষ মাটিতে গেলে, রোজ হাশরে সূক্ষ্ম বিচারে, কর্মই গলার মালা হবে।
ঠিকই একদিন মুক্ত আকাশ ভেদ করে, রূহ যাবে আরশে।
জোছনা
আমার আম্মা ‘জোছনা’
প্রতিদিন কুরআন তেলাওয়াত করেন
তাসবি হাতে আল্লাহকে ডাকেন
দুরুদ পড়েন—দুআ করেন।
আমি আম্মার কোলে মাথা রাখি
অনুচ্চ স্বরে তাকে পড়ি
জিকির করি—ইবাদত করি
মৌন সেজদায় নত থাকি।
আম্মা আম্মা বলে চ্যাঁচাই
তিনি চুপ থাকেন
কিংবা ‘কি’ বলেন ওঠেন
তাকিয়ে মিষ্টি হাসেন—আমাকে দেখেন।
আমিও জোছনাকে দেখি।
