আন্দোলনে শহীদ পরিবারকে লাখ টাকা সহায়তা করবে জমিয়ত
পাথেয় টোয়েন্টিফের ডটকম :: উত্তপ্ত ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে যারা আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন তাদেরকে এক লাখ রুপী করে সহায়তা করার ঘোষণা দিয়েছেন জমিয়তে উলামা হিন্দের সেক্রেটারী জেনারেল আওলাদে রাসূল সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানী।
CAA-র প্রতিবাদে দিল্লিসহ কেন্দ্রীয় শহরগুলোতে প্রকাশ্যে চলবে জমিয়তের বিক্ষোভ।নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনআন্দোলনে শহীদদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদের প্রত্যেককে এক লক্ষ্য অর্থ এবং হয়রানির শিকার সবাইকে আইনি সহায়তা করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে দিল্লীর জমিয়তের উলামা হিন্দের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
বৈঠকে আরও আলোচনা হয়, জমিয়তে উলামা হিন্দ পার্লামেন্ট কর্তৃক পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে তথা CAA দেশের মৌলিক নীতিমালা বিরোধী বিশ্বাস করে নিন্দা জানিয়েছে। কারণ এ আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকে (এনআরসি) কেন্দ্র করে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ভারতের দিল্লির মাদানী হলে জমিয়তে উলামা হিন্দ সভাপতি মাওলানা কারী সাইয়্যিদ মুহাম্মদ উছমান মানসুরপুরী এর সভাপতিত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং লাখনৌয়ের দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামার শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের বর্বরতার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এ বৈঠকে জমিয়তে উলামা হিন্দের জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানী এসব আইনের ক্ষতিকারক দিক, তার পরিণতি ও বর্তমান সরকারের দূরভিসন্ধির উপরে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেন। বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের উকিল, জমিয়তে উলামা হিন্দের জাতীয় পরিষদের রুকন, সাইয়্যিদ শাকিল আহমদ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন থেকে জন্ম নেয়া প্রতারণা-উদ্বিঘ্নতা এবং এ প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা আপিলের রিপোর্ট তুলে ধরেন।
এ বৈঠকে থেকে জমিয়তে উলামা হিন্দ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি ইত্যাদির শেষ দেখা পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ও আইনী প্রক্রিয়ায় তাদের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এ দিন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, অনতিবিলম্বে মুসলিম-অমুসলিম নেত্রীবৃন্দের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি সমাবেশের আহ্বান করা হবে এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনের একটা কাঠামো তৈরী করা হবে এবং বিভিন্ন প্রদেশের কেন্দ্রীয় শহরগুলোতে গণপ্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে।
জমিয়তে উলামা হিন্দের প্রতিনিধিগণ ও তাদের মতাদর্শী অন্যান্য পার্টির কর্মীদেরকেও এ গণ আন্দোলনে রাজপথে নামাতে সম্মত করাবে। চলমান এ আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদের প্রত্যেককে এক লক্ষ্য অর্থ এবং হয়রানির শিকার সকলকে আইনি সহায়তা প্রদান করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে আরও আলোচনা হয়, জমিয়তে উলামা হিন্দ পার্লামেন্ট কর্তৃক পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে দেশের মৌলিক নীতিমালা বিরোধী বিশ্বাস করে নিন্দা জানিয়েছে। কারণ এ আইন সংবিধানের দফা ১৪ ও ২১ বিরোধী। এখানে অবৈধ অভিবাসীর সংজ্ঞায়নে ধর্মভিত্তিক বৈষম্যে শুধু মুষলমানদেরকে চিহিৃত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। জমিয়তে উলামা হিন্দ কোন অমুসলিমকে নাগরিকত্ব প্রদানের বিরোধী নয়, কিন্তু শ্রেণীগতভাবে মুসলমানদেরকে অবৈধ চিহ্নিত করার এ অপপ্রয়াস সাংবিধানিকভাবে প্রদেয় স্বাধীনতার ঘোর বিরোধী। বৈচিত্র্যপূর্ণ সৌন্দর্যের এ দেশের সাংবিধানিক ভিত্তি ‘সেকুলারিজম’ তাতে প্রশ্নের মুখে পড়ে। এর অশুভ প্রতিক্রিয়া ইতোমধ্যেই আসামে পড়েছে। সেখানে নাগরিকত্ব তালিকা থেকে বাদ পড়া অমুসলিমদের পূণরায় নাগরিকত্বের আবেদনের সুযোগ থাকলেও মুসলমানরা সেখানে অবৈধ অভিবাসী সাব্যস্ত হচ্ছে! ফলে সারা দেশেই মুসলিমরা নিজেদের ভবিষ্যতের প্রশ্নে ভুগছে আশংকায়। যদি সারা দেশেই এ আইন কার্য়কর করা হয়, কোন কারণে সম্পূর্ণ প্রমাণ দেখাতে না পারা মুসলমানের নাগরিকত্ব সংশয়ের মুখে পড়বে।
জমিয়তে উলামা হিন্দের দাবি হলো অনতিবিলম্বে সংবিধান বিরোধী এ আইন বাতিল করতেই হবে। অন্যথায় এ বৈষম্য আইনের শেষ দেখা পর্যন্ত আইনী ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে দেশের মৌলিক নীতিমালা বিরোধী বিশ্বাস করে নিন্দা জানিয়েছে জমিয়তে উলামা হিন্দের বৈঠক থেকে বলা হয়, গণতান্ত্রিক বিচার ব্যবস্থায় আন্দোলন করা নাগরিকের আইনী অধিকার। তাই সরকার যেন কোন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীকে বাধা প্রদানের অপচেষ্টা না চালায়! তাহলে আগুন জলে উঠবে। পালাবার পথ পাবেন না। সম্প্রতি ইউপিতে আন্দোলনকারীদের প্রতি সরকারি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানায় জমিয়তে উলামা হিন্দ।
আন্দোলনকারীদের প্রত্যেক ব্যক্তি ও দলের উদ্দেশে এ বৈঠক থেকে বলা হয়, আপনারা সহিংসতায় অংশ নিয়ে আইনকে হাতে না তুলে শান্তিপূর্ণ ও সংঘবদ্ধ হয়ে ধৈর্যের সাথে আন্দোলন অব্যাহত রাখুন। উত্তেজিত হয়ে আইনকে হাতে তুলে নিলে হিতে বিপরীত হবে।
মাদানী হলে জমিয়তে উলামা হিন্দের এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামা হিন্দ সভাপতি মাওলানা কারী সাইয়্যিদ মুহাম্মদ উছমান মানসুরপুরী, জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানি, জমিয়তে উলামা হিন্দের সহসভাপতি মাওলানা আমানুল্লাহ, মাওলানা রহমাতুল্লাহ মীর কাশ্মিরী, মুফতি সালমান মানসুরপুরী, মহারাষ্ট্রের জমিয়ত উলামা হিন্দ সভাপতি হাফেজ নাদিম সিদ্দিকী, অন্ধপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা জমিয়তে উলামা হিন্দের সভাপতি হাফেজ শাব্বির আহমদ, কর্ণাটক জমিয়তে উলামা হিন্দের সভাপতি মুফতি ইফতিখার আহমদ কাসেমী, এ্যাডভোকেট শাকিল আহমদ সাইয়্যিদ, মাওলানা মাআয উদ্দিন আহমদ, দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষক মুফতি মুহাম্মদ রাশেদ আজমী, দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষক মাওলানা সালমান বিযনুরী, মুফতি শামসুদ্দিন, গুজরাত জমিয়তে উলামা সভাপতি মাওলানা রফিক আহমদ মাযাহেরী, আসাম জমিয়তে উলামা সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল কাদের, এবং জমিয়তে উলামা হিন্দ সেক্রেটারি মাওলানা হাকিমুদ্দিন কাসেমী প্রমুখ।
সূত্র : আসরে হাজির, মিল্লি টাইমস, দিল্লি