আপনি তো চলে গেলেন কবি
আদিল মাহমুদ
আপনি তো চলে গেলেন কবি!
এখন ‘সেনালি কাবিন’ লিখবে কে আর শুনি
কে বলবে, ‘ও পাড়ার সুন্দরী রোজেনা
সারা অঙ্গে ঢেউ তার, তবু মেয়ে কবিতা বুঝে না।’
কবিতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে কে
কে বলবে, ‘কবিতা তো মক্তবের মেয়ে চুলখোলা আয়েশা আক্তার।’
বখতিয়ারের ঘোড়া দেখাবে কে
শেখাবে কে, ঘুমের ঘরে স্বপ্ন দেখে শিউরে ওঠলে—
‘জেহাদ জেহাদ বলা।’
আপনি তো চলে গেলেন কবি!
এখন ‘লোক লোকান্তর’ লিখবে কে আর শুনি
কে বলবে, ‘প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে
বাংলা আমার বচন, আমি জন্মেছি এই বঙ্গে।’
কালের কলস কাঁধে নিয়ে লোকান্তরে ছুটবে কে
কে বলবে, ‘আমার কাফন আমি চাদরের মতো পরে কতদিন আন্দোলিত হবো।’
মানুষ কিভাবে হবো শিখাবে কে
প্রয়োজনে আবার বলবে—
‘মানুষ হওয়ার ইচ্ছে আমার এক্কেবারে নাই।’
আপনি তো চলে গেলেন কবি!
এখন ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’ লিখবে কে আর শুনি
কে বলবে, ‘বৈঠকখানা থেকে আব্বা
একবার আমাকে দেখে নিয়ে মুখ নিচু করে পড়তে থাকবেন
ফাবি আইয়ে আলা ই-রাব্বিকুমা তুকাজ্বিবান।’
মায়ের নোলক খুজঁবে কে
কে বলবে, ‘আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।’
শুক্রবারের মৃত্যু চাওয়া শিখাবে কে
কে বলবে, ‘ভালোমন্দ যা ঘটুক মেনে নেবো এ আমার ঈদ।’
প্রভুর সান্নিধ্যে—
আপনি তো চলে গেলেন কবি!
*
পুনশ্চ: আজ কবি আল মাহমুদ-এর জন্মদিন। ১৯৩৬ সালের এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে কবির জন্ম। লেখালেখি শুরু করেন ৫০’র দশকে। কবি হিসেবে জনপ্রিয়তা পেতে খুব একটা সময় লাগেনি। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। সৃজনশীল সাহিত্য রচনার জন্য অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিতও হয়েছেন। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৮), জয় বাংলা পুরস্কার (১৯৭২), হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭২), জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭২), কাজী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৬), কবি জসীম উদ্দিন পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৭), নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯০), ভানুসিংহ সম্মাননা পদক (২০০৪), লালন পুরস্কার (২০১১) উল্লেখযোগ্য।
কবির উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ হলো, লোক লোকান্তর (১৯৬৩), কালের কলস (১৯৬৬), সোনালী কাবিন (১৯৬৬), মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো (১৯৭৬), আরব্য রজনীর রাজহাঁস, বখতিয়ারের ঘোড়া, অদৃশ্যবাদীদের রান্নাবান্না, Al Mahmud In English, দিনযাপন, দ্বিতীয় ভাঙ্গন, একটি পাখি লেজ ঝোলা, পাখির কাছে ফুলের কাছে, আল মাহমুদের গল্প, গল্পসমগ্র, প্রেমের গল্প, যেভাবে বেড়ে উঠি, কিশোর সমগ্র, কবির আত্নবিশ্বাস, কবিতাসমগ্র, কবিতাসমগ্র-২, পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত, গন্ধ বণিক, ময়ূরীর মুখ, না কোন শূন্যতা মানি না, নদীর ভেতরের নদী, পাখির কাছে ফুলের কাছে, প্রেম ও ভালোবাসার কবিতা, প্রেম প্রকৃতির দ্রোহ আর প্রার্থনা কবিতা, প্রেমের কবিতা সমগ্র, উপমহাদেশ, বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ, উপন্যাস সমগ্র-১, উপন্যাস সমগ্র-২, উপন্যাস সমগ্র-৩, তোমার গন্ধে ফুল ফুটেছে (২০১৫), ছায়ায় ঢাকা মায়ার পাহাড় (রূপকথা), ত্রিশেরা, উড়াল কাব্য।
তিনি ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই কবির মৃত্যু যেন মৃত্যু নয়। এ যেন অমৃতের পথে মহাপ্রয়াণ। সেই অনন্ত যাত্রার যাত্রী, কবির প্রতি আজীবন শ্রদ্ধা।