আব্বাকে ফিরিয়ে দাও

আব্বাকে ফিরিয়ে দাও

  • আদিল মাহমুদ

রহমান, ঈদ উপলক্ষে আমার আব্বাকে কিছু দিনের জন্য ফিরিয়ে দাও। এক সপ্তাহের জন্য হলেও হবে। অথবা আমার কাছে আব্বাকে ধার দাও। যে কোন শর্তে, যে ভাবে দেবেন আমার কোন আপত্তি নেই। তবুও আব্বাকে এক সপ্তাহের জন্য ফিরিয়ে দাও।

রাহিম, যে দিন আব্বাকে ফিরিয়ে দেবেন, দয়া করে একটু খেয়াল রাখবেন। ভালো একটা পোশাক গায়ে জড়িয়ে দেবেন। জান্নাতী যে কোন পোশাক অথবা ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি, পায়জামা, টুপি। অনেক দিন পর আব্বা ঘরে ফিরবেন তো, তাই একটু ভালো পোশাক গায়ে না থাকলে আম্মা আবার মন খারাপ করতে পারেন। এ জন্য আরকি!

মালিক, আপনি আব্বাকে কবে পাঠাবেন আমাকে আগে জানিয়ে দেবেন। আমি আম্মাকে বলে রাখবো আব্বা অমুক দিন আসবেন। আম্মাকে একটা সুন্দর শাড়ি কিনে দিতে বলবো ভাইয়াকে। আম্মা অনেক দিন পর আব্বাকে দেখে লজ্জা পেতে পারেন, কিন্তু পছন্দের সব খাবার ঠিকই রান্না করবেন। আমরা ভাই-বোনেরা আড়াল থেকে আব্বা-আম্মার ভালোবাসার কথা শুনবো। জানি এটা অন্যায় হবে, তারপরও শুনবো, দেখবো। আসলে আমরা কতদিন আমাদের আম্মার প্রফুল্ল হাসি দেখি না। সে দিন আমরা আম্মার হাসি মুখ দেখবো।

কুদ্দুস, একদিন আব্বাকে নিয়ে ধোপাদিঘীর শিশু পার্কে যাবো। ছোটবেলা আব্বা সুযোগ পেলেই আমাদের সবাইকে নিয়ে এখানে ঘুরতে আসতেন। আসলে অল্প টাকায় এর চেয়ে ভালো কোথাও ঘুরতে যাওয়া যায় না। তাই আব্বা শিশু পার্কে নিয়ে আসতেন। সামান্য টাকায় আমাদের সাথে আনন্দে কিছু সময় কাটাতেন।

সালাম, তুমি তো জানো, আব্বা সবসময় পাঞ্জাবি, পায়জামা পরতেন। কিন্তু আব্বার খুব শখ ছিল একটা ভালো স্যুট-কোট বানানোর। হাসান মার্কেট থেকে একটা স্যুট কিনে ছিলেন আমার জন্মের আগে। এটা পরেই প্রায় অনুষ্ঠানে যেতেন। আর আম্মা প্রায়ই বলতেন, এই স্যুটটা আর কতদিন পরবে। আব্বা বলতেন, এই বছরই একটা দামি স্যুট বানাবো। কিন্তু কখনো আর তা বানানো হয়নি টাকার অভাবে। তাই আম্মার আর আব্বার নতুন স্যুট দেখা হয়নি। ভাইয়া বলেছে, আব্বা আসলে টাকা পাঠাবে। আমি আব্বাকে দামি একটা স্যুট-কোট বানিয়ে দেব। এতে আব্বা খুশি হবেন, সাথে আম্মাও!

মুমিন, একদিন আব্বাকে সাথে নিয়ে আমরা সবাই নামিদামি হোটেলে খাবো। আব্বাকে প্রায়ই আক্ষেপ করে বলতে শুনতাম, কিছু টাকা জমলেই সবাইকে নিয়ে একবেলা দামি একটা হোটেল খাবো। তোরা ইচ্ছে মত খাবি। আব্বার আর টাকা জমানো হয়নি। তার আগেই আপনি আমার আব্বাকে আপনার কাছে নিয়ে গেলেন।

মুহাইমিন, একদিন বিমানে করে আমরা সবাই সমুদ্র সৈকতে যাবো। বিমানের আওয়াজ শুনলেই আব্বা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতেন, আগামি বছর তোদের সবাইকে বিমানে করে কক্সবাজার নিয়ে যাবো, সমুদ্র দেখাবো। হাতে টাকা বেশি থাকলে রাঙামাটিও ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে পারি। সেই আগামি বছর আর কখনো আসেনি আমাদের পরিবারে।

আজিজ, একদিন আব্বাকে নিয়ে সারাদিন হাঁটবো। আব্বার হাত এক মূহুর্তে জন্য হলেও ছাড়াবো না। ছোটবেলায় রাস্তায় বের হলেই আব্বা আমার হাত শক্ত করে ধরে রাস্তা পার করাতেন। যেন কোন এক্সিডেন্ট না হয়, কিংবা কোথাও হারিয়ে না যাই। এখন এমন ভাবে আমিও আব্বার হাত ধরবো, আব্বা যেন না হারিয়ে যায়।

জাব্বার, একদিন রাতে আব্বার কাছে ছোটবেলায় বলা সব মিথ্যাগুলো অবলীলায় স্বীকার করবো। স্কুল ফাঁকি দেয়া, না বলে পকেট থেকে টাকা নেয়া, ওজু না করে নামাজ পড়া, সব, সব স্বীকার করবো। আমি চাইবো মিথ্যার জন্য আব্বা আমাকে শাসন করুক। বকা দেউক। কিছু সময় পর আবার মায়ামাখা কণ্ঠে কাছে ডাকুক, আদর করুক, বুকের সাথে জড়িয়ে ধরুক।

আলিম, আম্মা যদি আব্বাকে আর যেতে না দেয়, কিংবা আব্বা আর যেতে না চায়, আপনার কি ক্ষতি হয়ে যাবে? আপনার কাছে তো মানুষের অভাব নেই। আমরা না’হয় আমাদের আব্বাকে রেখে দিলাম। এ জন্য আপনি যে কোন শাস্তি দিলে আমরা মাথা পেতে নেবো। তবুও আব্বাকে রেখে দেবেন। কারণ আমরা চাই, আব্বা আমাদের সুখ-শান্তি দেখবেন।

খালিক, ঈদ তো সবার জন্য আনন্দ নিয়ে আসে। সে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড় নির্বিশেষে সবার মাঝে। কিন্তু আব্বা নেই বলে আমাদের ঘরে কোন আনন্দ থাকে না। তাই বলি, সাত দিন না হোক, অন্তত ঈদের দিনের জন্য হলেও আমার আব্বাকে ফিরিয়ে দাও!

আরও পড়ুন: আব্বাকে….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *