আমরা কবে মানুষ হব? | মুহাম্মদ আইয়ূব

আমরা কবে মানুষ হব? | মুহাম্মদ আইয়ূব

আমরা কবে মানুষ হব? | মুহাম্মদ আইয়ূব

মানুষকে ভিতর ও বাহির থেকে শেষ করে দেওয়ার দুটি মারাত্মক ব্যাধি আছে। ১. ক্যানসার। ২. হিংসা।
আজ আমি দুই নম্বরটি নিয়ে একটু কথা বলতে চাই। যেহুতু ৯৯%মানুষ বুঝেইনা যে, এটা তার পরকাল চুষে চুষে খাচ্ছে এবং জান্নাতের পথে বাদশাহ যুলক্বারনাইনের সিসা ঢালা প্রাচীরের মত প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। তাই ভাবলাম এটা থেকে আগে আমি আমাকে অতঃপর আমার জাতিকে সতর্ক করতে হবে।

হিংসা নামক ব্যাধীটা এত ভয়ঙ্কর ও মারাত্মক যে, আল্লাহ তাআ’লা এবং রাসূলে পাক (সাঃ) উম্মতকে খুব তাকিদের সাথে এ থেকে পানাহ চাইতে বলেছেন, দূরে থাকতে কড়া বার্তা দিয়েছেন। এর ভয়াবহতা যে কত ভয়াবহ তা বোঝার জন্য কুরআন ও হাদিস থেকে কয়েকটি উদাহরণ পেশ করা যেতে পারে।

১. হিংসার বিরুদ্ধে কুরআনের শক্ত অবস্থান সূরা ‘ফালাক’-‘আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই যখন সে হিংসা করে।’ (সূরা ফালাক-৫)

২. অসংখ্য হাদিসে হিংসা থেকে উম্মতকে সতর্ক করা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হুজুর (সাঃ) বলেন, ‘তোমরা পরস্পরের প্রতি হিংসা করোনা, একে অন্যের পিছনে পড়োনা, আর তোমরা পরস্পর ভাই হিসেবে আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও’।
অন্য এক হাদিসে আবু হুরাইরা রাঃ হতে বর্ণিত হুজুর সাঃ বলেন, ‘তোমরা হিংসা করা থেকে বেঁচে থাক। কেননা হিংসা নেক আমলকে এভাবে খেয়ে ফেলে যেভাবে আগুন কাঠকে।’
বাপরে বাপ! কত মারাত্মক কথা!

এবার আসুন হিংসুকের পরিচয় জানি।
হযরত লোকমান (আঃ) স্বীয় পুত্রকে বললেন, ‘হিংসুকের তিনটি চিহ্ন রয়েছে- পিঠ পিছনে গীবত করে, সামনাসামনি তোষামোদ করে এবং অন্যের বিপদে আনন্দিত হয়’। ( আল খেসাল,পৃষ্ঠা ১২১ হাদিস নং ১১৩)

পাঠক! এসব দলিল থেকে স্পষ্টভাবে একথা প্রমাণিত হয় যে, হিংসা আমাদের ঈমান ধ্বংস করে, দুনিয়া আখেরাতের যাবতীয় কল্যান সমূলে উপড়ে ফেলে, বরবাদ করে দেয়। তাহলে আর দেরী কেন, আসুন যেকোন মূল্যেই এ থেকে আমাদের ঈমান রক্ষা করি।

হিংসা নিয়ে দলিল-মলিল দিয়ে এমন লেখা কেন লিখতে বসলাম? এর কারণ মনের গহিনে লুকায়িত অনেক ব্যথা। অধ্যাপনা জীবনের সবে এক বছর পার করতে চললাম। এই স্বল্প সময়ে সহকর্মীদের কাছ থেকে যে মধুর(!) ব্যবহার আমি পেয়েছি তা আগ থেকে কেবল শুনে আসছিলাম। আর এই অল্প সময়ে তার সত্যতা হাতেনাতে পেয়ে গেলুম।

পাঠক! এটা ভেবে ধোঁকা খাবেননা যে, আমি কোন দুনিয়াবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। বিলকুল না, আমি তো ধর্মীয় একটি প্রতিষ্ঠানে পড়াই। আবার যেনতেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান না, সরাসরি শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামের এক বিদ্যাপিঠে! সুতরাং আমার সহকর্মীরা তো হাফেজ, মাওলানা, মুফতীই হবেন বলাবাহুল্য। অথচ দেখুন উনাদের কথাবার্তা।

: জুনাইদ সাব, আপনি তো জানেন আমি অন্যায় করি না অন্যায়কে প্রশ্রয়ও দিইনা।
: তারপর বলুন।
: এই যে মোতালেব সাহেব ছাত্রদেরকে যে বাসায় নিয়ে কাম করায় এটা কি ঠিক? গার্জিয়ানরা তো ছাত্রদেরকে এ জন্য পড়তে পাঠায়না যে অমুকের কাম কর, তমুকের কাম কর, আপনি কি বলেন?
: আচ্ছা বজলু ভাই, আমি তো আপনার কাছের মানুষ তাইনা?
: তা না হলে কি আর আপনার কাছে নিয়মিত আসি?
: আপনি যে পুলাপাইনরে দিয়া কাপড় ধোয়ান এটা কি ঠিক?
: এটা তো মাদ্রাসার ভিতর।
: আপনার যদি বাসা থাকত?
: কোনদিনও আমি এই ছাত্রদের বাসায় নিতাম না।
: নিবেন কেন, নিলে তো নাস্তা খাওয়াইতে হবে সে ভয়তে নিতেন না।
: জুনাইদ সাব যে কি বলে!
: আচ্ছা হুজুর আপনি বলেনতো, মুহতামিম সাবের এত টাকা দিয়া ইংলিশ টিচার রাখা ঠিক হইছে?
যেখানে আপনার আমার মত যোগ্য উস্তাদদের বেতন তার অর্ধেক।
: দেখেন বজলু ভাই যিনি মাদ্রাসা পরিচালনা করেন তাঁর বুদ্ধি আমার আপনার চেয়ে কম না। দ্বিতীয়ত, দুনিয়াবী শিক্ষার দিক থেকে ইংলিশ টিচারের স্ট্যাটাস আমাদের থেকে অনেক বেশী সেদিক আপনাকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। ছাত্র জীবনে আমার আপনার হাত খরচ আর হাবিবুর রহমান স্যারের মত ঢাকা ভার্সিটির একজন ছাত্রের হাত খরচ কত ছিল তা কি কখনো ভেবেছেন?
তাদের সামনে দুনিয়া আর আমাদের সামনে আখেরাত, এই ভাবনা যদি আমার আপনার মাঝে না থাকে তাহলে কুরআন হাদিস শিখে কি লাভ বলেন?
: ও আচ্ছা, আপনি কি ইদানীং খেয়াল করছেন তোফায়েল সাহেবের ব্যাপারটা?
: কোন বিষয়?
: এই যে আসরের পরে তার বিশেষ ছাত্রদের পড়তে বসায়, আরে ভাই সারাদিন পড়লে তো মাথা নষ্ট হবে, ছাত্রদের তো একটু খেলাধুলারও দরকার আছে তাইনা?
: আপনার এত জ্বলে কেন বজলু ভাই? আপনাকে একটা কথা বলব?
: হাজারটা বলেন, আপনি আমার কাছের মানুষ।
: আপনার চামড়াটা যেমন কালো আপনার মনটা তার দিগুণ কালো।
: আপনি এটা কোন কথা বললেন? সরল মন বলেই তো আপনার কাছে দিলখুলে কথাগুলো বলি, যাতে মাদ্রাসার উন্নতি হয়।
: এই হল আপনার সরলতার অবস্থা! আল্লাহ বাঁচাইছে আপনার গরলতা এখনো চোখে পড়ে নাই। আপনাকে আমি পরিষ্কার ভাষায় বলি বজলু ভাই! অনেক কষ্টে আলেম হয়েছেন জানি, সুতরাং হিংসার অনলে তা দগ্ধ করবেননা। আপনিই তো গত জুম্মার আগের জুম্মায় হিংসার ভয়াবহতা মুসল্লিদের বয়ান করে জানালেন বুঝালেন, ছাত্রদেরকে হিংসা না করার হাদীস পড়াচ্ছেন অথচ আপন আস্তিনের তলে সেই ধংসাত্মক সাপকে দুধ কলা খাইয়ে পুষছেন? কি বিষ্ময়কর! নাউযুবিল্লাহ।
কে কি করল না করল সে গল্প মেহেরবানী করে আমাকে আর শুনাতে আসবেননা মাফও চাই, দোয়াও চাই।

লেখাটা পড়ে কেউ কারো উপর আঙুল না তুলে নিজের দিকে আঙুল দিলে বোধহয় আপন আপন দুনিয়া ও আখেরাত ডায়মন্ডের মত চকচক করবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা সবাইকে হিংসার অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করুন, আমিন। (দেশ ও দশের জন্য আর মাত্র কয়েকটি দিন ঘরে থাকুন, সতর্ক থাকুন, সবাইকে বাঁচতে দিন।)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *