পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : টানা তিন সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান চলছে। বৈশ্বিক এই পরাশক্তিকে মোকাবিলায় পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জামের পাশাপাশি ইউক্রেনে নো-ফ্লাই জোন আরোপের দাবি জানিয়ে আসছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
স্থানীয় সময় বুধবার (১৬ মার্চ) মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেওয়ার সময়ও এই দাবি জানান ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। তবে বাইডেন তার আগের জায়গাতেই অনড়। বাইডেন প্রশাসনের দাবি, নো-ফ্লাই জোন ঘোষণার মতো পদক্ষেপ রাশিয়ার সাথে বৃহত্তর যুদ্ধ শুরুর ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি।
রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর কয়েকদিন পর থেকেই কয়েকবার ইউক্রেনে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করতে পশ্চিমাদের প্রতি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সামরিক জোট ন্যাটো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনেক আইনপ্রণেতাই তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কারণ হিসেবে তারা বলেন, ইউক্রেনে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হলে তা পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাশিয়ার সাথে সরাসরি পশ্চিমের সংঘাত সৃষ্টি করবে। এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণও হতে পারে। এছাড়া হোয়াইট হাউস এখন পর্যন্ত রাশিয়ার তৈরি মিগ যুদ্ধবিমানগুলো ইউক্রেনে পাঠানোর প্রস্তাবেও সমর্থন জানায়নি।
বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ভাষণের পর হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, নো-ফ্লাই জোন ঘোষণার পর সেটি বাস্তবায়ন করে দেখানোর প্রয়োজন হবে। এর ফলে আমাদেরকে রাশিয়ার প্লেনগুলোকে লক্ষ্য করে গুলি করতে হবে, ন্যাটোকেও রাশিয়ার প্লেন গুলি করে নামাতে হবে।’
সংবাদমাধ্যম আরটি বলছে, জেলেনস্কির বুধবারের ভাষণের পর নো-ফ্লাই জোন আরোপের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার আগের মত পরিবর্তন করবেন কি না, একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জেন সাকি বলেন, ‘আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চাই না।’
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন জেলেনস্কির ভাষণ শুনেছেন এবং এটিকে ‘আবেগপূর্ণ এবং শক্তিশালী’ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
এর আগে বুধবার স্থানীয় সময় সকালে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ প্রদান করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। ভাষণে জেলনস্কি বলেন, ইউক্রেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে এবং গত আট বছর ধরেই ইউক্রেন রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করে আসছে।
তার ভাষায়, আমরা এক সেকেন্ডের জন্যও হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবিনি। রাজধানী কিয়েভে প্রতিদিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে রুশ দখলদাররা। কিন্তু তারপরও আমরা হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারিনি।
এ সময় তিনি আবারও ইউক্রেনে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি প্রশ্ন করেন, আমাদের এই চাওয়া কি খুব বেশিকিছু?
পরে বুধবার রাতে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়া সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে এবং বিশ্বকে অবশ্যই আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্বীকৃতি দিতে হবে।’