২৯শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ৮ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি

হজ্জ করুন হজ্জের হাকীকতের সাথে : আল্লামা মাসঊদ

শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ
শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ

‘আল্লাহর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে একজন হাজী হজ করতে যায়। তার সামনে দুনিয়ার কারো মুহাব্বাত থাকে না। একমাত্র আল্লাহ তাআলার মুহাব্বাতই তখন তার হৃদয়ে বড় হয়ে যায়’

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আল্লাহর তাওফিক ছাড়া হজ করা যায় না বলে জানিয়েছেন শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, বাংলাদশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।

শুক্রবার (১২ মে) জামিআ ইকরা সংলগ্ন হাজীপাড়া ঝিল মসজিদে জুমার বয়ানে ফিদায়ে মিল্লাত রহ.-এর এই খলীফা এ কথা বলেন।

আল্লামা মাসঊদ বলেন, হজ আল্লাহ তাআলার একটি ফরজ হুকুম। অন্যান্য ফরজের সাথে হজের কিছুটা প্রার্থক্য রয়েছে। কিছু ফরজ দৈনিক আদায় করতে হয়। কিছু ফরজ বছরে একবার আদায় করতে হয়। আর হজ সারা জীবনে একবার আদায় করা আবশ্যক।

কার উপর হজ ফরজ হয় তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাকাতের মতো হজের কোনো নেসাব নেই যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ থাকলে হজ আদায় করতে হবে। হজের ব্যাপারটা হলো, ব্যক্তি যেখানে থাকে, সেখান থেকে মক্কা শরীফ যাওয়া ও ফিরে আসা এবং এই সফরের দিনগুলিতে নিজ পরিবার পরিচলনার পর্যাপ্ত পরিমান অর্থ যার আছে তার উপর হজ ফরজ হয়।

তিনি আরও বলেন, যে বছর হজ ফরজ হয় সে বছরই হজ আদায় করা যদিও আবশ্যক নয়, তবে দেরী না করাই উত্তম। কারণ সব সময় হাতে টাকা থাকবে কি থাকবে না, তা কে জানে।

হজের হাকীকত তুলে ধরে শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, হজের হুকুম তো আমরা জানলাম। কিন্তু হজের হাকীকতটা কি?

“নামায একটা হুকুম, তার হাকীকত আছে। রোযা একটা হুকুম, তার একটা হাকীকত আছে। যাকাত একটা হুকুম, তার একটা হাকীকত আছে। সেই হিসেবে হজেরও একটা হাকীকত আছে।

সেটা হলো, একজন মুমিন সারা রমযান মাস রোযা রেখে আল্লাহ তাআলার গুণাবলী অর্জন করতে চেষ্টা করে। আল্লাহ তাআলা খানাপিনা করেন না, সেও আল্লাহর হুকুমে একটা সময় পর্যন্ত খাবার না খেয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা পান করেন না, সেও আল্লাহ তাআলার হুকুমে একটা সময় পর্যন্ত পান করে না।

সারা রমযান আল্লাহর গুণাবলি অর্জনের চেষ্টা করার মধ্য দিয়ে তার ভেতরে আল্লাহ তাআলার মুহাব্বাত তৈরী হয়ে যায়। সে আল্লাহর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে যায়। যারা সঠিকভাবে রমযান অতিবাহিত করে, তাদের মনে এই প্রশ্ন জাগে যে, ‘আল্লাহর গুণাবলি অর্জনের চেষ্টা করলাম, কিন্তু আল্লাহকে পাই কোথায়?’

কিন্তু আল্লাহ তাআলাকে তো দুনিয়াতে দেখা যায় না। আল্লাহ তাআলাকে দেখা যাবে আখিরাতে। তখন সে ভাবে, ‘যেহেতু আল্লাহকে পেলাম না। তাহলে ঐ জায়গাগুলো দেখি, যে জায়গাগুলো আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্কিত।’

কাবা শরীফ আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্কিত। আরাফার ময়দান আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্কিত। তওয়াফ আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্কিত। সাঈ করা আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্কিত। আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত জায়গাগুলো দেখে মুহাব্বাতের অনল সে নিভায়।

শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, তাই বলা যায়, আল্লাহর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে একজন হাজী হজ করতে যায়। তার সামনে দুনিয়ার কারো মুহাব্বাত থাকে না। একমাত্র আল্লাহ তাআলার মুহাব্বাতই তখন তার হৃদয়ে বড় হয়ে যায়। তাই সে ইশকে পাগলের মতো; সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করে না। চুল আঁচড়ায় না। সুগন্ধি ব্যবহার করে না। ইশকের পাগলের বেশে ইহরাম বেঁধে ‘লাব্বাইক লাব্বাইক’ বলে ছুটতে থাকে। তওয়াফ করতে গিয়ে ঘুরাঘুরি করে। সাঈ করতে গিয়ে ছুটোছুটি করে। এসব জায়গা দেখে সে আল্লাহর কথা স্মরণ করে। এ-ই হলো হজের হাকীকত।

হাকীকতের চৈতন্য জাগরুক রেখে হজ করার আহবান জানিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, হজ করতে হবে হজের হাকীকতের সাথে। আজকাল মানুষ হজ করতে গেলে বেশিরভাগ সময় কেনাটাকায় ব্যস্ত থাকে। আমাদের হজের হাকীকত অর্জনের মেহনত করে হজ করা দরকার। তা নাহলে হজের ফরয আদায় হয়ে যাবে বটে, কিন্তু হজের হাকীকত লাভ করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হাকীকত লাভ করে হজ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

শেয়ার করুন


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ১৯৮৬ - ২০২৩ মাসিক পাথেয় (রেজিঃ ডি.এ. ৬৭৫) | patheo24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com