পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আল্লাহর ভয়ে রমজানের রোযা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
তিনি বলেন, ‘সবাই রোযা রাখছে’ —শুধু এজন্য রোযা রাখলে রমজানের রোযার পরিপূর্ণ ফজিলত পাওয়া যাবে না। পরিপূর্ণ ফজিলত পেতে হলে আল্লাহর ভয়ে রোযা রাখতে হবে। রোযা রেখে গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। আসুন, এ রমজানের রোযা আমরা কেবল আল্লাহর ভয়ে রাখি। এ রমজানে আল্লাহর ভয়ে গুনাহ থেকে বিরত থাকি।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) হাজীপাড়া ঝিল মসজিদ কমপ্লেক্সে জুমার বয়ানে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এ আহ্বান জানান।
‘শুক্রবার দিয়ে রমজান শুরু হওয়ার নেয়ামত’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, এ বছর শুক্রবার দিয়ে রমজান শুরু হচ্ছে। ফলে এই রমজানে আমরা মোট ৫টি শুক্রবার পাবো। এটা একজন মুমিনের জন্য বড় পাওয়া। জীবনে এমন সুযোগ খুব কমই আসে। রমজান হিসেবে তো সব আমলের মর্যাদা বেড়ে যায়, আবার শুক্রবার হিসেবে আরও বেড়ে যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বড় একটা সৌভাগ্য দান করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। এখন আমাদের কাজ হবে, যেভাবে রোযা রাখলে আল্লাহ তাআলা খুশি হবেন সেভাবে রোযা রাখার জন্য চেষ্টা করা।
‘রমজানে বেহেস্তের দরজা খুলে দেয়া হয়’ জানিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, রমজান মাসে আল্লাহ তাআলা বেহেস্তের দরজা খুলে দেন। আর জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন। এটাও আল্লাহ তাআলার বিরাট এক মেহেরবানী।
‘রমজানে শয়তানকে বন্দি করা হয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, রমজানে বান্দার জন্য আমল করা যেন সহজ হয়, আমল করতে যেন কষ্ট না হয়, বান্দা ধোঁকার মধ্যে যেন না পড়ে তাই রমজানের শুরুতেই আল্লাহ তাআলা শয়তানকে শেকল দিয়ে বন্দি করে রাখেন। ফলে শয়তান এই মাসে আর শয়তানি করতে পারে না।
তিনি বলেন, শয়তান বন্দি থাকার পরও দুই কারণে রমজানে মানুষ গুনাহ করে। এক. শাবান মাসেই শয়তান বান্দাকে এমন এক ধোঁকায় ফেলে দেয় যার কারণে বান্দা রমজান মাসেও গুনাহে লিপ্ত থাকে। দুই. শয়তানকে বন্দি করা হলেও মানুষের ‘নফস’ মানুষকে গুনাহের কাজে লিপ্ত করে রাখে।
‘নফস মানুষের বড় শত্রু’ জানিয়ে ফিদায়ে মিল্লাত রহ.–এর এই খলীফা বলেন, রমজানে শয়তানের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকার দরকার নাই। কিন্তু নফসের ব্যাপারে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। কারণ নফস শয়তানের চেয়ে মানুষের বড় দুশমন। শয়তানকে ‘শয়তান’ বানিয়েছে এই নফস। তাই বাইরের শত্রু (শয়তান) কঠিন বটে, কিন্তু ভেতরের শত্রুর (নফস) মতো এতো কঠিন না। নফস মানুষের ভেতরের শত্রু। আর শয়তান হলো মানুষের বাইরের শত্রু। নফসকে দমন করার জন্য আল্লাহ তাআলা বান্দাকে রোযার মতো শক্তিশালী হাতিয়ার দিয়েছেন।
আল্লামা মাসঊদ বলেন, রমজান শুরু হলে আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তাদের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন, ‘হে মঙ্গলকামী, মঙ্গলের দিকে অগ্রসর হও। হে খারাপ পথে অগ্রসর ব্যক্তি, থেমে যাও। আর খারাপ পথে অগ্রসর হয়ো না।’
রমজানে দুটি আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান করে তিনি বলেন, রমজানে ফরয রোযা রাখার পাশাপাশি দুটি আমল খুব বেশি পরিমাণে করবো। এক. বেশি পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করবো। দুই. বেশি বেশি দান-সাদাকা করবো।
তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনিতেই দানশীল ছিলেন। কিন্তু রমজানে তাঁর দানশীলতা বহুগুণে বেড়ে যেত। প্রবাহিত বাতাসের মতো তাঁর দানশীলতা বৃদ্ধি পেত। বাতাস যেমন শেষ হয় না, তাঁর দানশীলতাও শেষ হতো না।
আল্লামা মাসঊদ আরও বলেন, রমজানের নফল আমলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব রাখে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা। কারণ রমজান হলো কুরআনের মাস। কুরআন শরীফ প্রথম নাযিল হয়েছিলো এই রমজান মাসেই।
আরও পড়ুন : রমজান মাস পাওয়া মুমিনের জন্য পরম সৌভাগ্যের : আল্লামা মাসঊদ