উপেক্ষিত মুফতী ওয়াক্কাস, কিন্তু কেন?

উপেক্ষিত মুফতী ওয়াক্কাস, কিন্তু কেন?

উপেক্ষিত মুফতী ওয়াক্কাস, কিন্তু কেন?

আমিনুল ইসলাম কাসেমী : হেফাজতে ইসলাম-এর অপরিহার্য নেতা যিনি ছিলেন, তিনি আজ উপেক্ষিত, অবহেলিত ও বঞ্চিত। তিনি আজ কিছু লোকের ষড়যন্ত্রের শিকার। কিন্তু কেন? কারো মুখে কোন কথা নেই। একদম চুপ। কাউকে হা- হুতাশ করতেও দেখলাম না। কেউ টু- শব্দ করলেন না।ব্যাপারটা কি?

মুফতী ওয়াক্কাস একজন তুখোড় রাজনীতিবিদ। আবার বাংলাদেশের আলেমদের প্রথম কাতারের একজন ব্যক্তিত্ব। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর। অর্থাৎ আল্লামা আহমাদ শফি সাহেবের পরে তাঁর স্থান। কিন্তু এবারের হেফাজতের প্রোগ্রামে তিনি উপেক্ষিত। তাঁর কোন নাম গন্ধ পেলাম না। কোথাও তাঁর ছায়া দেখলাম না।

কিন্তু কেন? মুফতী ওয়াক্কাস কেন নেই? তিনি এমন ব্যক্তি, বিগত হেফাজতের আন্দোলনে ৫ মে শাপলা চত্বরের মামলায় তিনি জেল খেটেছেন। হেফাজতের নেতাদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশী জেল – জুলুমের শিকার। তিনি অসুস্থ অবস্থায় কারার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন প্রায় এক বছরের কাছাকাছি সময়। তিনি আপোসহীন ছিলেন। হার মানেন নি কারো কাছে। কারো সাথে কোন দেন – দরবারে যান নি। তাহলে হয়ত এত লম্বা সময় জেলে থাকা লাগত না।

হেফাজতের অনেক নেতাতো দেন দরবার করে চট- জলদি চলে এসেছেন, কিন্তু তিনি কারো সাথে কোন আপোসে যান নি। একজন আপোসহীন সংগ্রামী নেতা মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব।

কিন্তু সেই ওয়াক্কাস সাহেবকে এবার পেলাম না হেফাজতের মঞ্চে। তাঁকে দেখা গেল না হেফাজতের মিছিলে। এমনকি কোথাও কোন মিটিংএ তাঁকে দেখা যায় নি।কিন্তু কেন তাঁকে দেখা গেল না? এদেশের মানুষের মধ্যে এব্যাপারে কানাঘুষা চলছে। যে ব্যক্তির হেফাজতের জন্য এত কোরবানী, এত ত্যাগ, কিন্তু সেই ব্যক্তিকে কি মাইনাস করা হল? আমরা আসলে জানি না কি কারণে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। সমস্যাটা কোথায়? এখানে মানুষের মাঝে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন জাগে।

প্রখমতঃ মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব স্বেচ্ছায় আসেন নি? নাকি তাঁকে আসতে দেওয়া হয় নি?
দ্বিতীয়তঃ তিনি যদি হেফাজতের মিটিংএ স্বেচ্ছায় না আসেন, তাহলে কেন? কি কারণে তিনি আসলেন না?

তৃতীয়তঃ শোনা যাচ্ছে, মুফতী ওয়াক্কাস সাহেবকে দাওয়াত করা হয়নি।

এরকম অনেক প্রশ্ন সকলের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু কেউ কোন কুল- কিনারা করতে পারছেন না। সঠিক জবাব কেউ দিতে পারছেন না।

মুফতি ওয়াক্কাস সাহেব যদি স্বেচ্ছায় হেফাজতের মিটিংয়ে না এসে থাকেন, তাহলে কেন তিনি এলেন না?
একথার ব্যাখ্যা এভাবে বোঝা যায়, হেফাজতের অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ের উপর তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে আসেন নি। যেটা মুফতী ওয়াক্কাস সাহেবের মত একজন নীতিবান লোকের দ্বারা সহ্য করা দুষ্কর। তাই হয়ত তিনি দূরে থাকতে চেয়েছেন।

যেমন তাঁর একটা বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, যেটা অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেছিলেন, ” হেফাজত লাইনচ্যুত হয়েছে”।

মুফতী ওয়াক্কাসের মত দূরর্দশি রাজনীতিবিদের কাছে হয়ত হেফাজতের ভুল- ভ্রান্তি নজরে পড়েছে। যার কারণে হয়ত তিনি বলতে বাধ্য হয়েছেন। হেফাজত নেতাদের উচিত, কোন ভুল- ভ্রান্তি থাকলে শোধরিয়ে নেওয়া। আর এটা হেফাজতের মঙ্গল। কেননা, তিনি কাউকে তোষামদী না করে বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। এজন্য এখানে মুফতী ওয়াক্কাসের কোন দোষ আছে বলে মনে হয় না।

এরপর মুফতী ওয়াক্কাস সাহেবকে আসতে দেওয়া হয়নি যদি বলা হয়, তাহলে কেন আসতে দেওয়া হয় নি? তাঁর কি অন্যায়?

এখানে অনেকে মন্তব্য করেছেন, জমিয়তের মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী সাহেবের গ্রুপটি এবার হেফাজতের কার্যক্রমে বেশী ভূমিকা রেখেছেন, আর এখানে কাসেমী গ্রুপের সাথে তাঁর কিছু সাংগঠনিক ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে, একারণে হয়ত কাসেমী সাহেবের গ্রুপের লোকেরা তাঁকে হেফাজতের মিটিংয়ে আসতে দেয় নি। অথবা ঐ গ্রুপটি এমন কোন কাজ করেছেন, যাতে মুফতী ওয়াক্কাস আসার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।

অবশ্য আল্লামা কাসেমী সাহে্বকে কেউ দোষারোপ করছেন না। কেননা, তিনি একজন উদার মনের মানুষ। আল্লামা আহমাদ শফি সাহেবের ইন্তেকালের পরে যখন গণমাধ্যমের কর্মীরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল, হেফাজতের পরবর্তী নেতা কে হবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রথমে মুফতী ওয়াক্কাসের নাম উচ্চারণ করেছিলেন। যেটা একটা বড় মনের পরিচয়। এজন্য কাসেমী সাহেবকে কেউ দোষ দিতে চাচ্ছেন না।

তবে কাসেমী সাহেবের আশ- পাশের কোন নেতা- কর্মীর এমন নিষ্ঠুর আচরণ থাকতে পারে, যাতে মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব হেফাজতের মিটিংয়ে আসছেন না।

কারো কাছে এমন মন্তব্য শোনা যাচ্ছে, মুফতী ওয়াক্কাস সাহেবকে মাইনাস করা হচ্ছে। তবে কি কারণে, সেটা কেউ বলতে পারছে না।

এখানে সত্যি যদি মুফতী ওয়াক্কাস সাহেবকে হেফাজত থেকে মাইনাস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়, তাঁকে কোন দাওয়াত দেওয়া না হয়, তাহলে হেফাজত নেতাদের চরম ভুল হবে। কেননা, মুফতী ওয়াক্কাসের মত প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদকে মাইনাস করে দেওয়া হেফাজতের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। আজ যারা ওনাকে মাইনাস করতে চাচ্ছেন, ভবিষ্যতে ওনারা মাইনাস হবেন না, একথা বলা যায় না।

কথায় বলে, “পুরানো চালে ভাত বাড়ে” সংগঠনে প্রবীণ নেতাদের দ্বারা দলটি এগিয়ে যায়, এবং কর্মীগণ উজ্জীবিত হন। কিন্তু প্রবীণদের বাদ দিলে সংগঠন চলবে কিভাবে? এক সময় মুখ থুবড়ে কিন্তু এ সংগঠন।

তবে মনে রাখা দরকার।মুফতী ওয়াক্কাস একজন মুহাক্কিক আলেম এবং বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তাঁর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ইসলামী অঙ্গনে। তাঁর মত এমন অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষটি কিন্তু এদেশে নেই। তিনি এখনো ইসলামী অঙ্গনের সেরা রাজনীতিবিদ। এজন্য তাঁকে মাইনাস করার চিন্তা করা সমিচীন নয়। যদি মাইনাস করার চিন্তা করা হয়, চরম মুল্য দিতে হবে আমাদের।

আর যদি তাঁর কোন মান- অভিমান থেকে থাকে, সেটা লক্ষ্য রাখার দরকার, কেন তিনি আসছেন না। তাঁকে অবশ্যই যথাযথ সন্মান প্রদর্শন করে সাংগঠনিক কাজে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন মনে করি।
আল্লাহ আমাদের সকলের উপর রহম করুন। আমিন।

লেখক : রাজনীতি বিশ্লেষক

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *