ঋতু পরিবর্তনে শিশুর ডায়রিয়া : প্রয়োজন সচেতনতা
প্রথম পর্ব
মুহাম্মদ ফয়সুল আলম ● ডায়রিয়া ভাইরাসজনিত রোগ। যে-কোনো সময় মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। সব বয়সের মানুষের ডায়রিয়া হতে পারে, তবে শিশুরা খুব অল্পতেই এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়। প্রচণ্ড গরম, মাঝে মধ্যে বৃষ্টি, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় নবজাতকসহ সব শিশুরই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।
গরম থেকে আস্তে আস্তে শীত পড়তে থাকলেও শিশুরা ডাইরিয়ার আক্রান্ত হয়। আবার শীতের প্রকোপ বেশি বাড়লেও শিশুদের ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার বেড়ে যায়। প্রতি বছর ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু ডায়রিয়া ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত অপুষ্টিজনিত রোগে মারা যায়। জানা যায়, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ২ বছরের কম বয়স্ক শতকরা ২১ জন শিশু ডায়রিয়ায় ভুগছে।
ডায়রিয়া হয়েছিল ভেবে এক বছরের শিশু অপর্নাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। দু’দিন চিকিৎসা দেওয়ার পর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখে চিকিৎসকরা তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু বাসায় যাওয়ার পর সে আবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যায়। রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। কেবল অপর্না নয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর এমন বহু শিশু রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।
অহনা খেলার সাথীদের সঙ্গে সারক্ষণ মাঠে-ঘাটে ঘুরে বেড়ায়। দু’দিনেই সর্দি-কাশি। হঠাৎ করে পাতলা পায়খানা ও বমি। সবার ধারণা ঠাণ্ডা লাগার কারণেই এমন হয়েছে। চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু অহনার অবস্থা বেশি খারাপ হতে লাগল। ঘন-ঘন পাতলা পায়খানা ও বমির কারণে শরীর নিস্তেজ হয়ে গেল। চিন্তায় পড়ে গেলেন অহনার মা-বাবা। দ্রুত স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয়াতে অল্পের জন্য রক্ষা পায় অহনার জীবন। ঠাণ্ডা লাগার কারণে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ডায়রিয়া হতে পারে এমন ধারণা ছিল না তাদের। তাই গরমে শিশুকে ডায়রিয়া থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজন বাড়তি যত্নের। গরমে শিশুদের সর্দি-কাশি হবে, এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু সর্দি-কাশির কারণে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ডায়রিয়ায় শিশুর মৃত্যু হতে পারে, তা অনেকেরই অজানা। গরম, শীত বা বছরের যে-কোনো সময় অনেক কারণেই শিশুর ডায়রিয়া হতে পারে। তবে বছরের গরম ও শীতের সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি থাকে।
প্রতি বছর যেসব রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে তার প্রায় ৮০ ভাগই শিশু। এদের বয়স ২ থেকে ৫ বছরের মধ্যে। ৫ বছর বয়সের আগেই প্রতি বছর ৫ লাখ শিশুর মৃত্যু হয় ডায়রিয়ার কারণে। খাবার স্যালাইনের সুবাদে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু তেমন না হলেও, কিন্তু সময়মতো এর চিকিৎসা করা না হলে ডায়রিয়া শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ হতে পারে। অসাবধানতা ও অবহেলার কারণে প্রতিবছর অনেক শিশুর মৃত্যু হয় ডায়রিয়ায়। যদিও গবেষকরা বলছেন, ডায়রিয়ায় শিশুমৃত্যু কমেছে এক-তৃতীয়াংশ। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমান সময়ে ডায়রিয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী শিশু মৃত্যুহার এক-তৃতীয়াংশ কমছে (বিবিসি)।
একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বিশুদ্ধ খাবার পানি প্রাপ্তির কারণে এ হার কমেছে। তবে এখনও দুর্বল ও অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতির উন্নয়নে নতুন প্রতিষেধকের অবদান রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এরপরও বিশ্বব্যাপী শিশুমৃত্যুর জন্য ডায়রিয়া চতুর্থ বড়ো কারণ। শিশু যাতে গরমের দিনে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত না হয়, সেদিকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তবে শিশুর ডায়রিয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা পরিবার থেকেই দিতে হবে। ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিলেই শিশুকে খাবার স্যালাইন ঘন ঘন খাওয়াতে হবে। স্যালাইন ঘরে না থাকলে হাতে তৈরি স্যালাইন প্রাথমিকভাবে শিশুকে দিতে হবে। এক চিমটি লবণ, ২০ গ্রাম বা এক মুঠো চিনি বা গুড়, এক লিটার পানিতে গুলিয়ে ভালোমানের খাবার স্যালাইন তৈরি করা যায়। এভাবে প্রাথমিকভাবে শিশুর জীবন রক্ষা করা সম্ভব।
০৬.১১.২০১৮