একজন
স্যার ফজলে হাসান আবেদ
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম :: পরম শ্রদ্ধার পাত্র স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তিনি চলে গেছেন পরপারে। দোষেগুণে মানুষের জীবনের প্রতিটি অংশ। স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবন কতটা মধুর, কতটা লড়াইয়ের, কতটা ভালোবাসার- এর হিসাব একদিন ঠিকই বেরিয়ে আসবে তার কাজের ওপর ভিত্তি করে। সত্য কখনোই গোপন থাকে না। তবে বিশ্বে নিজেকে তিনি তুলে ধরেননি। বিপ্লব করেছেন দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে। অসহায় মানুষের পক্ষে লড়তে লড়তে তিনি চলে গেছেন কিংবদন্তির কাতারে।
দেশের শিক্ষার হালকে ধীরে ধীরে ওপরে তোলে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে, নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের কথা কেউ কখনোই ভুলতে পারবে না। এমনকি পাহাড়িরাও না। মিয়ানমার থেকে ছুটে আসা আস্তুচ্যুত মানুষেরাও স্যার ফজলে হাসান আবেদকে ভুলবার কথা নয়।
এমন লাখো মানুষ আছে, তার নাম শোনেনি, কিন্তু তার উপকারে লাভবান হয়েছেন। বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তাঁর মৃত্যুতে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব এক মহান ব্যক্তিত্বকে হারাল। জীবদ্দশায় কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। দেশের গরিব মানুষের শুধু নয়, সারা বিশ্বের কল্যাণে তিনি যে অবদান রেখেছেন তার কোনো তুলনা নেই। বেশ কিছুদিন ধরে এ্যাপোলো হসপিটালসে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। স্যার আবেদের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে, এক ছেলে ও তিন নাতি-নাতনি রেখে গেছেন। বিশ্ববরেণ্য এই সমবায় সংগঠকের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তাঁর অসংখ্য গুণগ্রাহী, শুভাকাক্সক্ষী ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হাসপাতালে ছুটে যান। ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফজলে হাসান আবেদের লাশ এ্যাপোলো হসপিটালসের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক সেন্টারে লাশ নিয়ে যাওয়া হবে। সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাঁর লাশ ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। দুপুর সাড়ে ১২টায় সেখানেই জানাজা সম্পন্ন হবে।
এরপর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে লাশ। স্যার ফজলে হাসান আবেদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জের বানিয়াচংয় উপজেলায়। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি ১৯৬২ থেকে ’৬৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি করে দেশে ফেরেন। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শেল অয়েল কোম্পানির উচ্চপদের চাকরি ত্যাগ করে ইসলামাবাদ ও কাবুল হয়ে লন্ডনে চলে যান। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে মিলে মুক্তিযুদ্ধের সহায়তায় গড়ে তোলেন ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ ও ‘হেলপ বাংলাদেশ’ নামের দুটি সংগঠন। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ব্র্যাক গড়ে তোলেন। ব্র্যাকের কার্যক্রম এখন বাংলাদেশ শুধু নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী স্যার ফজলে হাসান আবেদ দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেছেন। নাইট উপাধী নিয়ে আছে নানা কথাও। ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদের তরবারি খ্যাত এই নাইট উপাধী লাভকে ভালোভাবে নেয়নি দেশের মুসলিম সমাজ। সময়ে সময়ে দেশের আলেমসমাজও করেছেন তার সমালোচনা। নারী নেতৃত্ব ও ফতোয়াসহ নানা বিষয়ে তার সঙ্গে আলেমদের বিরোধ লেগেই ছিল।