হাবিবুর রহমান, কাপাসিয়া, গাজীপুর থেকে
প্রশ্ন: পিতা জীবিত অবস্থায় তার সমুদয় সম্পত্তি কোন এক ছেলে বা মেয়েকে দিতে পারবে কিনা? অথবা মেয়ের উপর ছেলেকে প্রাধান্য দিতে পারবে কিনা?
উত্তর : পিতা-মাতার দায়িত্ব সব সন্তানকে সমান দৃষ্টিতে দেখা। এক সন্তানকে অন্যের ওপর প্রাধান্য না দেওয়া। আমাদের দেশে সাধারণত কন্যা সন্তানকে অবহেলা করে পুত্রকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কোনো কোনো পরিবারে দেখা যায়, মেয়ের সব চাওয়া পূরণ করা হয় না। অথচ ছেলে চাওয়ামাত্র সব কিছু হাজির করা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের বৈষম্য করা কঠোরভাবে নিষেধ।
হজরত ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার ঘরে কোনো কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করল আর সে তাকে কোনো কষ্ট দিল না, তাকে অপমানিত করল না এবং তার পুত্র সন্তানদের তার ওপর প্রাধান্য দিল না, আল্লাহ তাকে এই সন্তানের উসিলায় জান্নাত দেবেন। (মুসনাদে আহমাদ)।
তেমনি এক ছেলেকে আরেক ছেলের ওপর প্রাধান্য দেওয়াও নিষেধ।
হজরত নুমান ইবনে বশীর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, একবার তাঁর পিতা তাকে নিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলেন এবং বললেন, আমি আমার এ ছেলেটিকে একটি গোলাম দান করেছি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি তোমার সবগুলো সন্তানকেই এমন দান করেছ? পিতা উত্তর দিলেন, না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, তা হলে এ গোলাম ফেরত নিয়ে নাও (বুখারি)।
অনুরূপ , পিতা সব সম্পত্তি বা বেশির ভাগ সম্পত্তি এক সন্তানকে লিখে দেয়াও নিষেধ। অপর সন্তানদের ঠকানো হয়। এটাও নিষেধ। বরং সব সন্তানকে এই পরিমাণ স্বাবলম্বী করে যাওয়া উচিত। যাতে তারা মানুষের কাছে হাত না পাতে।
হজরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মক্কায় অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রোগ শয্যায় দেখতে এলেন। তিনি হিজরত করে ছেড়ে যাওয়া ভূমিতে কারও মৃত্যুকে পছন্দ করতেন না। তাই তিনি বললেন, ইবনে আফরার প্রতি আল্লাহ দয়া করুন। (কেননা, সে মক্কায় মারা গেছে, তাই সে করুণার পাত্র।) আমি বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি কি আমার সব মাল-সম্পদের ওসিয়্যত করে যাব? তিনি উত্তর দিলেন, না। আমি এবার বললাম, তাহলে অর্ধেক সম্পদের? তিনি উত্তর দিলেন, না। এবার আরজ করলাম, তাহলে কি এক-তৃতীয়াংশের? তিনি উত্তর দিলেন, এক-তৃতীয়াংশের করতে পার, আর এটাও তো বেশি হয়ে যায়। নিজের উত্তরাধিকারীদের সচ্ছল অবস্থায় রেখে যাওয়া এর চেয়ে অনেক ভালো যে, তাদের নিঃস্ব অবস্থায় ছেড়ে যাবে আর তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত বাড়িয়ে ফিরবে (বুখারি)।
গ্রন্থনা ও মাসআলাপ্রদান : মুফতি রিয়াযুল ইসলাম, সম্পাদনা : মাসউদুল কাদির